দৃষ্টান্ত: সন্তান প্রসবের একদিন আগে দেশে প্রথম করোনা টেস্টিং কিট তৈরির কাজ শেষ করলেন ভাইরোলজিস্ট মিনাল

কোভিড-১৯ বিধ্বস্ত ভারতে টেস্টিং কিটের অভাবের কথা এই ক’দিনে বারবার উঠে এসেছে। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার ভারতে প্রতি ১০ লক্ষে করোনা টেস্টের সুবিধা পাচ্ছেন গড়ে মাত্র ৬.৮ জন। এই অবস্থায় পুণের এক ডায়গনস্টিক ফার্ম তৈরি করল দেশের প্রথম করোনা টেস্টিং কিট এবং যে আবিষ্কারের পিছনে রয়েছেন ভাইরোলজিস্ট মিনাল দাখাভে ভোঁসলে। মাত্র কিছুদিন আগে কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন এই গবেষক। নিজের শরীরের গুরুতর অবস্থার মধ্যেও দেশকে প্রথম করোনা টেস্টিং কিট উপহার দিলেন মিনাল।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সময়ে পুণের মাই ল্যাব’স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান মিনাল দাখাভে ভোঁসলে মাত্র ছয় সপ্তাহের মধ্যে পাথো ডিটেক্ট নামে করোনা টেস্টিং কিট তৈরি করে ফেলেন।
মা হওয়ার মুখে শারীরিক ধকলের মধ্যে দিয়েও এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে জরুরি জিনিস তৈরি করলেন মিনাল।

 

কীভাবে তা সম্ভব হল?

সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিনাল জানান, এটা জরুরি পরিস্থিতি। তাই আমি একে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলাম। এভাবেই দেশের সেবা করতে চেয়েছি। অবশ্য একা এই টেস্টিং কিট তৈরির কৃতিত্ব নিতে নারাজ তিনি। তাঁর ১০ জনের টিমের অক্লান্ত পরিশ্রম এই প্রকল্পের সাফল্যের আসল কারণ বলে জানান সদ্য মা হওয়া গবেষক মিনাল।
সন্তান প্রসবের মাত্র একদিন আগে, গত ১৮ মার্চ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (NIV)-তে টেস্টিং কিটের মান নির্ধারণের জন্য জমা দেন তিনি।
এনআইভি-র ছাড়পত্র পেয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে বাজারে এসেছে ভারতে প্রথম তৈরি এই করোনা টেস্টিং কিট। এর মধ্যে মিনাল-ও এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।
বিদেশি টেস্টিং কিট যেখানে মোটামুটি সাত ঘণ্টা সময় নেয়, আমাদের তৈরি কিট আড়াই ঘণ্টার মধ্যে শরীরে করোনা নির্ণয় করতে সক্ষম, ‘হিন্দুস্তান টাইমস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মন্তব্য আত্মবিশ্বাসী মিনাল দাখাভে ভোঁসলের।
পুণের মাই ল্যাব’স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডায়গনস্টিক ফার্ম প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার টেস্টিং কিট প্রস্তুত করতে সক্ষম। প্রথম দফায় ১৫০ করোনা টেস্টিং কিট পুণে, মুম্বই, দিল্লি, গোয়া এবং বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন ডায়গনস্টিক ল্যাবে পাঠিয়েছে মাই ল্যাব’স। সোমবার আরও এক দফা টেস্টিং কিট দেশের বিভিন্ন ডায়গনস্টিক ল্যাবে পৌঁছে যাচ্ছে বলে জানান মাই ল্যাব’সের মেডিক্যাল অ্যাফেয়ার্স ডিরেক্টর ডাঃ গৌতম ওয়াংখেড়ে।
মিনালদের তৈরি প্রতিটি টেস্টিং কিট ১০০ টি নমুনা পরীক্ষা করতে পারে। যেখানে বিদেশি কিটসের দাম পড়ে সাড়ে চার হাজার টাকা, সেখানে এ দেশে প্রথম তৈরি করোনা টেস্টিং কিটের দাম পড়ছে ১,২০০ টাকা।
আপাতত করোনা প্রভাবিত দেশ ফেরত ব্যক্তিদের করোনা টেস্টে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া যাঁরা করোনা সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি এবং তাঁরা যাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। দেশে হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সময় দেশের প্রথম করোনা টেস্টিং কিটস তৈরি করে ইতিহাস তৈরি করলেন ভাইরোলজিস্ট মিনাল দাখাভে ভোঁসলে।

Comments are closed.