‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ বাড়িতে কেন? ভিমা কোরেগাঁও মামলায় বম্বে হাইকোর্টের প্রশ্ন ভার্নন গঞ্জালভেসকে

১৮৬৯ সালে লিও টলস্টয় লিখেছিলেন ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ নভেল। ঠিক দেড়শো বছর পর রাশিয়া থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে, ১৫৭ বছরের পুরনো বম্বে হাইকোর্টের এজলাসে, ফের ঘুরেফিরে এল সেই ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ প্রসঙ্গই। যে বই সংগ্রহে রাখার জন্য বিচারপতি জবাবদিহি চাইলেন শিক্ষাবিদ ভার্নন গঞ্জালভেসের কাছে।

বুধবার, এলগার পরিষদ ভিমা কোরেগাঁও মামলার শুনানি চলছিল বম্বে হাইকোর্টে বিচারপতি সারঙ্গ কোতওয়ালের সিঙ্গল বেঞ্চে। সেখানেই বিচারপতি কোতওয়াল অভিযুক্ত ভার্নন গঞ্জালভেসের আইনজীবীকে জিজ্ঞেস করেন, তাঁর মক্কেল কেন টলস্টয়ের ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ এবং কিছু সিডির মত আপত্তিকর নথি নিজের বাড়িতে রেখেছিলেন?

ভার্নন গঞ্জালভেস এবং অন্যান্যদের জামিনের আবেদন শুনতে বসে বিচারপতি আরও বলেন, এই ধরণের বইপত্র এবং সিডি দেখে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ওতে রাষ্ট্রবিরোধী কিছু আছে।

পুণে পুলিশও জানায়, বছরখানেক আগে ভার্ননের মুম্বইয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হওয়া বইটি অত্যন্ত গুরুতর প্রমাণের অংশ। এরপর পুণে পুলিশের তরফে গঞ্জালভেসের বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা জিনিসের নাম বলা হয়। যাতে রয়েছে, কবীর কলা মঞ্চের সম্পাদনায় রাজ্য দমন বিরোধী নামে একটি গণসঙ্গীতের সিডি, মার্ক্সসিস্ট আর্কাইভ এবং জয় ভিমা কমরেড। আর বইপত্রের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে, ওয়ার অ্যান্ড পিস, আন্ডারস্ট্যান্ডিং মাওইস্টস, আরসিপি রিভিউ এবং ন্যাশনাল স্টাডি সার্কেলের সার্কুলারের ফটোকপি।

সিডির উপরে লেখা রয়েছে রাজ্য দমন বিরোধী, যা নিজেই বলে দিচ্ছে, এর মধ্যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু আছে। অন্যদিকে ওয়ার অ্যান্ড পিস অন্য একটি দেশের যুদ্ধ নিয়ে। আপনি কেন ‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’, সিডির মত আপত্তিকর জিনিসপত্র রেখেছিলেন? আপনাকে তা সবিস্তারে আদালতকে জানাতে হবে। বলেন বিচারপতি কোতওয়াল।

পুলিশকেও বিচারপতি কোতওয়ালের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়। বিচারপতি বলেন, আদালতে এসে শুধু দাবি করলে হবে না, যে বাজেয়াপ্ত হওয়া নথিপত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রমাণ। আদালতকে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। তা না হলে আদালত গুরুত্ব দেবে না।

ওয়ার অ্যান্ড পিস নভেলে টলস্টয় এক জায়গায় লিখেছিলেন, “We can know only that we know nothing. And that is the highest degree of human wisdom.” যা বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘আমরা কেবল জানতে পারি যে আমরা কিছুই জানি না। এবং এটাই মানবিক জ্ঞানের চরম স্তর’। লেখার দেড়শো বছর পর সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষিতে হঠাৎ যে লাইনগুলো ফের ঘুরছে লোকমুখে।

Comments are closed.