আজকের কমিশনার, নয়ের দশকে মুম্বইয়ের এনকাউন্টার স্পেশালিষ্ট পরমবীর সিংহ কে, যিনি অর্ণবকে চ্যালেঞ্জ করেছেন সরাসরি?

অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুত মৃত্যু মামলা, ভুয়ো টিআরপি মামলা থেকে বুধবার রিপাবলিক টিভির কর্ণধার অর্ণব গোস্বামীর গ্রেফতারি, কয়েক মাস ধরে ঘুরেফিরে খবরের শিরোনামে এসেছে একটি নাম। তিনি পরমবীর সিংহ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মুম্বই পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বে আসার পর থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে যাঁকে ঘিরে বিতর্ক হয়েছে। কে এই পরমবীর সিংহ? চেনেন এই এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট, বিতর্কিত অফিসারকে বর্তমানে মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনার?

১৯৮৮ ব্যাচের এই আইপিএস অফিসারের জীবনে বিতর্ক নতুন কিছু নয়। ৩২ বছরের পেশা জীবনে সুনামের সঙ্গে চাকরি করেছেন পরমবীর। সতীর্থ থেকে নিচুতলার কর্মীদের অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেয়েছেন। দাউদ ইব্রাহিম, গাউলি, ছোটা রাজনের মতো মুম্বই অপরাধ জগতের একাধিক ডনের বিরুদ্ধে খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন, বহু অপরাধ মামলার ফয়সালা করেছেন এই এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট। তবে হাত ধরাধরি করে এসেছে বিতর্কও। মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় জেলবন্দি প্রজ্ঞা সিংহ  ঠাকুরকে হেনস্থার অভিযোগ থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের এলগার পরিষদ মামলা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক, কিংবা সেচ দুর্নীতি মামলায় মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারকে ক্লিনচিট দেওয়া ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’ এই আইপিএস অফিসার বরাবরই থেকেছেন স্পটলাইটে।

১৯৬২ সালের ২০ জুন চন্ডিগড়ে জন্ম পরমবীর সিংহের। আগাগোড়া মেধাবী ছাত্র পরমবীর এমএ পরীক্ষায় পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম হয়েছিলেন। ৩২ বছরের পেশা জীবনে থানে পুলিশ কমিশনার থেকে মহারাষ্ট্রের দুর্নীতি দমন ব্যুরোর (এসিবি) প্রধান সহ বিভিন্ন গুরুদায়িত্ব সামলেছেন তিনি। এই দীর্ঘ পেশাজীবনে একাধিকবার জড়িয়েছেন বিতর্কে।

বিতর্ক

অধুনা বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর ২০০৮ সালের মালেগাঁও বিস্ফোরণ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে তখন জেলে। তখন দুর্নীতি দমন শাখার অ্যাডিশনাল কমিশনার পরমবীর সিংহের বিরুদ্ধে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ আনেন প্রজ্ঞা। যদিও তা অস্বীকার করেন পরমবীর। সে বছরই ২৬/১১ বিস্ফোরণের পর তৎকালীন মুম্বই পুলিশ প্রধান হাসান গফুরের সঙ্গে বিবাদে জড়ান পরমবীর। এক সাক্ষাৎকারে গফুর অভিযোগ করেন, মুম্বই হামলার সময় পরমবীর সহ চার অফিসার ঠিকঠাক কর্তব্যপালন করেননি। যা নিয়ে মুম্বই পুলিশ প্রধানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা পর্যন্ত করেন পরমবীরের বাবা, প্রাক্তন আমলা হোসিয়ার সিংহ।

পরমবীর তখন মুম্বই পুলিশের এডিজি (আইন- শৃঙ্খলা)। ২০১৮ সালে এলগার পরিষদ মামলা নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকের ডাক দেন তিনি। সেখানেই ঘোষণা করে দেন, সংশ্লিষ্ট মামলায় ধৃত সমাজকর্মী ও আইনজীবীদের প্রত্যেকেই মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক হয়।

গত বছরের ডিসেম্বরে, তাঁর অধীনস্থ  দুর্নীতি দমন ব্যুরো (এসিবি) বহু কোটি টাকার সেচ দুর্নীতি মামলায় উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ারকে ক্লিন চিট দেওয়ার জন্য বম্বে হাইকোর্টের নাগপুর বেঞ্চের কাছে একটি হলফনামা পাঠিয়ে দেয়। সে নিয়েও রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়। তাই ফেব্রুয়ারিতে তিনি যখন মুম্বই পুলিশের প্রধানের দায়িত্ব নেন, শোনা যায় শরদ পাওয়ারের এনসিপি’র দীর্ঘদিন ধরে ভালো সম্পর্কের জেরে এই পুরস্কার। এভাবেই বিতর্ক ও সুনাম হাত ধরাধরি করে আসে আইপিএস পরমবীর সংহের জীবনে। তাঁর চাকরি জীবনের মেয়াদ শেষ হবে ২০২২ সালে।

Comments are closed.