উত্তর প্রদেশ পুলিশকে ধাওয়া করে ধর্ষিতাকে পুড়িয়ে দেওয়ার ছবি যিনি দেশের সামনে এনেছেন, চেনেন এই অসমসাহসী সাংবাদিককে?

সারা দেশ শিউরে উঠেছে উত্তর প্রদেশের হাথরসে নৃশংস গণধর্ষণ ও হত্যা কাণ্ডে। ১৯ বছর বয়সী মনীষা বাল্মীকির ধর্ষকদের শাস্তির দাবি জানিয়ে ও রাতের অন্ধকারে তরুণীর নিথর দেহ পুড়িয়ে দেওয়ায় যোগী রাজ্যের পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে নাগরিক সমাজ। এই গোটা ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে যে সাংবাদিকরা দেশের সামনে তুলে ধরেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ইন্ডিয়া টুডে-র সাংবাদিক তনুশ্রী পাণ্ডে। মঙ্গলবার রাত থেকে যেভাবে তিনি উত্তর প্রদেশের পুলিশের পিছু ধাওয়া করেছেন, ধর্ষিতার পরিবার ও স্থানীয়দের আর্ত চিৎকার, প্রতিরোধ এবং প্রতিবাদ দেশবাসীর চোখের সামনে হাজির করেছেন তা এক কথায় অনন্য। তিনি না থাকলে রাতের অন্ধকারে দলিত কন্যাটির মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়ার কথা হয়ত ঘুনাক্ষরে জানতে পারতেন না কেউ। উত্তর পাবেন না জেনেও যে সাংবাদিক বারবার পুলিশ অফিসারদের প্রশ্ন করে গিয়েছেন, ‘ইয়ে জ্বল কেয়া রাহা হ্যায়?’ না, পুলিশের উত্তর তিনি পাননি। কিন্তু তনুশ্রী ও তাঁর সঙ্গী চিত্র সাংবাদিক ওয়াকার আহমেদের সৌজন্যে সারা দেশ চাক্ষুষ করেছে আসল ঘটনা। এক চরম নির্মমতার সাক্ষী থেকেছে নাগরিক সমাজ।

কে এই তনুশ্রী পাণ্ডে?

বর্তমানে ইন্ডিয়া টুডে ও আজ তক-এর সাংবাদিক ও নিউজ অ্যাঙ্কর তনুশ্রী পাণ্ডের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের বায়ো’য় চোখ রাখলে কিছুটা তাঁকে আন্দাজ করা যায়। সেখানে লেখা, ‘ননকনফরমিস্ট অ্যান্ড হিউম্যানিস্ট’। অর্থাৎ, প্রচলনবিরোধী এবং মানবতাবাদী তিনি। নিজেকে নিরপেক্ষ সাংবাদিক নয় সত্যসন্ধানী হিসেবে দেখতে ভালোবাসেন এই সাংবাদিক।

ঠিকই, সত্যের খোঁজে তিনি যোগী রাজ্যের পুলিশের গাড়িকে ধাওয়া না করলে, তাদের বারবার প্রশ্ন ছুড়ে না দিলে, দলিত তরুণীর নির্মম পরিণতির ছবি এত স্পষ্টভাবে সারা দেশের চোখের সামনে ভেসে উঠত না। তাঁর নির্ভীক সাংবাদিকতার জন্য দেখা গিয়েছে, কীভাবে রাতের অন্ধকারে ধর্ষিতার পরিবার পরিজনকে ঘরবন্দি করে ধর্ষিতার তাঁর দেহ পুড়িয়ে দেয়।

তনুশ্রীর জন্ম ১৯৯৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর। দিল্লিতে জন্ম, দিল্লিতেই বড়ো হয়ে ওঠা তাঁর। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হংসরাজ কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ২০১৪ সালে স্নাতক হয়েই সাংবাদিকতার পেশায় যোগ দেন তনুশ্রী পাণ্ডে। প্রথম চাকরি নিউজ ১৮ সংবাদমাধ্যমে। সেখানে দীর্ঘ চার বছর কাজ করেছেন। সিএনএন-আইবিএন সংবাদমাধ্যমে কাজ করার সময় থেকে সাংবাদিক রাজদীপ সারদেশাইকে অনুসরণ করতেন তিনি। ২০১৮ সালে তাঁর ডাকেই ইন্ডিয়া টুডে’তে যোগ দেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সুশান্ত সিংহ মৃত্যু মামলায় ইন্ডিয়া টুডে-র হয়ে এক্সক্লুসিভ স্টোরি থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জেলবন্দি কবি ভারাভারা রাওয়ের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য দিতে অস্বীকার করার কথার খবর তুলে ধরেছেন তনুশ্রী।

একজন সাংবাদিকের নিরপেক্ষ নয়, সত্যের পক্ষে থাকা উচিতকাজ বলে মনে করা তনুশ্রীর খবর নিয়ে বিতর্কও হয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জেএনইউ ক্যাম্পাসে ঢুকে বাম ছাত্রদের মারধর করে ও তাণ্ডব চালায় কিছু দুষ্কৃতী। আঙুল ওঠে এবিভিপির বিরুদ্ধে। সেই খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন আজ তকের এই রিপোর্টার। একটি ফাঁস হওয়া ভিডিওয় তনুশ্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, কীভাবে এবিভিপির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে হবে তা তিনি শিখিয়ে পড়িয়ে নিচ্ছিলেন বাম জেএনইউএসইউ-র নেতা সাকেত মুনকে। যদিও এই ভিডিও-র সত্যাসত্য জানা যায়নি।

 

Comments are closed.