জানেন, কেন চিনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে হংকং? চিন কি পারবে পরিস্থিতি সামাল দিতে, প্রশ্ন দুনিয়াজুড়ে

প্রায় ৩ মাস ধরে হংকংয়ে চলছে গণতন্ত্রের দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলন। রাস্তার আন্দোলন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে ভূখণ্ডের কোণে কোণে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হংকং বিমানবন্দরের। শেষ দু’দিনে গড়ে প্রতিদিন ৩৫০ ফ্লাইট বাতিল কিংবা সময় পরিবর্তন করতে হয়েছে। একাধিকবার সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে হয়েছে বিমানবন্দর। ভূখণ্ডের সর্বত্র কার্যত একই চিত্র। আন্দোলন সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হংকং প্রশাসন। এদিকে চিন সরকারের তরফে এই আন্দোলনকে ভালো চোখে দেখা হচ্ছে না, তা বলাই বাহুল্য। ব্ল্যাক টি-শার্ট আন্দোলনে চিন সন্ত্রাসবাদের গন্ধ পাচ্ছে বলেও দাবি বিভিন্ন চিনা সংবাদমাধ্যমের। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে হংকং প্রশাসনের ব্যর্থ হওয়ার অর্থ, চিনের সরাসরি হস্তক্ষেপের পথ আরও প্রশস্ত হওয়া।

সমস্যা কী?

বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে হংকং প্রশাসনের প্রস্তাবিত একটি আইনের প্রতিবাদে জুন মাসে বিক্ষোভ শুরু হয় সে দেশে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, চিনের মূল ভূখণ্ডে কোনও অপরাধ করে হংকংয়ে পালিয়ে আসা সন্দেহভাজন কোনও অপরাধীকে বিচারের জন্য চিনে পাঠানো যাবে। হংকংয়ের আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, এই আইন কার্যকর হলে চিন তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে। বিক্ষোভের মুখে হংকং প্রশাসন বিলটি স্থগিত করেছে।
কিন্তু তাতে খুশি নন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, প্রস্তাবিত আইনটি পুরোপুরি বাতিল করতে হবে। হংকং চিনের একটি ভূখণ্ড হলেও, এখানকার অধিবাসীরা চিনের মূল ভূখণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি স্বাধীনতা ভোগ করেন। এখানকার গণমাধ্যম এবং বিচার ব্যবস্থা এখনও স্বাধীন। তবে হংকংয়ের নাগরিকদের আশঙ্কা, তাঁদের এই স্বাধীনতা ক্রমশ হরণ করার পথে এগোচ্ছে চিন।

এক দেশ, দুই নীতি

এশিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া হংকং ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ছিল সরাসরি ব্রিটিশ উপনিবেশ। ১৫০ বছর উপনিবেশ করে রাখার পর ১৯৯৭ সালে ব্রিটেন হংকং ছেড়ে চলে যায়, দায়িত্ব পড়ে চিনের কাঁধে। সমস্যার সূত্রপাত এই সময় থেকেই। হংকংয়ে এক দেশ, দুই নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনেরও সেই শুরু। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা এবং বিদেশ মন্ত্রক বাদে সমস্ত ক্ষমতাই রয়েছে হংকংয়ের হাতে। রয়েছে নিজস্ব সংবিধান, দ্য হংকং বেসিক ল। ব্রিটিশ ধাঁচে তৈরি এই সংবিধান চিনের তুলনায় অনেক বেশি খোলামেলা এবং মানুষ, সংবাদমাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানকে আরও বেশি স্বাধীনতা দেওয়ার পক্ষপাতী বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা। নিয়ম অনুযায়ী, ২০৪৭ সাল পর্যন্ত হংকংকে মূল চিন ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। কিন্তু নিজেদের চিনের নাগরিক হিসেবে মানেন না হংকংয়ের বাসিন্দারা। তাঁদের সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যেও বিস্তর ফারাক বলে দাবি। এই পরিস্থিতিতে এক দেশ, দুই নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করেছেন হংকংয়ের বাসিন্দারা।

আশঙ্কার ভবিষ্যৎ

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এশিয়ার বাণিজ্যিক রাজধানীর তকমা হারানোর পথে হংকং। লাগাতার অশান্তি চলতে থাকলে বেশ কয়েকটি সংস্থা তাদের সদর দফতর হংকং থেকে সিঙ্গাপুর বা অন্য কোনও জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা আন্দোলনকারীদেরই। তাহলে কী হবে এশিয়ার সর্ববৃহৎ বাণিজ্য ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ? উত্তরটা সময়ের গর্ভে।

Comments are closed.