কেন রিপাবলিক টিভি ছাড়লেন জম্মু-কাশ্মীরের ব্যুরো চিফ তেজিন্দর সোধি? অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে কী লিখলেন বিস্ফোরক চিঠিতে?

সাম্প্রতিক অতীতে নিউজ চ্যানেল দেশের আগ্রাসী সাংবাদিকতা এবং উচ্চগ্রাম ডিবেট শোয়ের একটি মাপকাঠি তৈরি করে দিয়েছে। আপনি হয় পক্ষে, অথবা বিরুদ্ধে। মাঝামাঝির স্থান নেই। এই বিশেষ ধরনের সাংবাদিকতার সমালোচনা যেমন আছে তেমনই নিউজ অ্যাঙ্করদের জনপ্রিয়তাও গগনচুম্বী। হাই টিআরপি।
এই স্তরের আগ্রাসী সাংবাদিকতার মডেল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন অর্ণব গোস্বামী। প্রথমে টাইমস নাও এর হয়ে তারপর নিজের চ্যানেল রিপাবলিক টিভি। সমালোচকরা বলেন, কান ফাটানো সাংবাদিকতার জনক অর্ণব গোস্বামী। খবরের বাইরেও বিভিন্ন কারণে অর্ণব গোস্বামী ইদানীং শিরোনামে এসেছেন। এবার সেই অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন তাঁরই সদ্য প্রাক্তন সহকর্মী। রিপাবলিক টিভির জম্মু-কাশ্মীরের ব্যুরো চিফ তেজিন্দর সিংহ সোধি।
পয়লা সেপ্টেম্বর তথ্য মাধ্যম Medium এ প্রকাশিত হয়েছে তেজিন্দর সিংহ সোধির ইস্তফা পত্র। যেখানে সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট হানি কউরকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ঠিক কোন কোন কারণে তিনি রিপাবলিক টিভি থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন।
সেই চিঠিতে তেজিন্দর সিংহ সোধি লিখছেন, যখন রিপাবলিক টিভি তৈরি হয়েছিল, তখন যে টিম একসঙ্গে পথ চলা শুরু করেছিল, আজ তার মধ্যে কতজন আছেন? তাঁরা কেন ছেড়ে গেলেন? তাঁর অভিযোগ, চাকরি নিয়ে কথা বলার সময় অর্ণব গোস্বামী জানিয়েছিলেন, এখন স্যালারি বেশি দেওয়ার সামর্থ নেই, কিন্তু একবার চ্যানেলে টাকা আসতে শুরু করলে বেতন বাড়িয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু ২ বছর পেরিয়ে গেলেও কারও বেতন বৃদ্ধি হয়নি। এই বিষয়ে সরব হতেই একদিন তাঁকে ফোন করে প্রোমোশনের খবর দেওয়া হয়। তেজিন্দর সেই প্রোমোশনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।
চ্যানেলের মূল চালিকাশক্তিরা কেউই অর্ণব গোস্বামীর সঙ্গে কাজ করতে পারছিলেন না বলে দাবি করেছেন তেজিন্দর সিংহ। তাঁর দাবি, রিপাবলিক টিভির সহকর্মীদের সঙ্গে অর্ণব মানুষ সুলভ আচরণ করেন না। অর্ণব গোস্বামী গোটা টিমকে দিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করিয়ে লাভের গুড় একা খান বলেও অভিযোগ তাঁর। তেজিন্দর সিংহ সোধির আরও অভিযোগ, অর্ণব গোস্বামী এবং তাঁর স্ত্রীই একমাত্র রিপাবলিক টিভিতে লাভের মুখ দেখেন। বাকিরা সবাই লোকসানের খাতায়। সেখানে অর্ণব গোস্বামী ছাড়া আর কারও দাম নেই।
অর্ণব গোস্বামী স্টুডিওয় যেমন আচরণ করেন, নিউজরুমেও তাঁর আচরণ কখনও কখনও মিলে যায়। একবার অর্ণবের চেঁচামেচিতে এক সহকর্মী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তেজিন্দর সিংহ সোধির চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, শশী থারুর-সুনন্দা পুষ্কর কাণ্ডে সুনন্দা পুষ্করের বৃদ্ধ বাবাকে দিয়ে জোর করে কোনও অভিযোগ করানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন অর্ণব। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে ওই বৃদ্ধের অবস্থা দেখে তা করতে পারেননি তেজিন্দর। এ জন্য অর্ণব তাঁকে চরম অপমান করেন বলেও অভিযোগ।
পরিস্থিতি এমনই, ভারতের কোনও শহরে অর্ণবের চ্যানেলে কাজ করতে আগ্রহী সাংবাদিক পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে ফ্রেশারদের নিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, দিল্লির মতো জায়গায় রিপাবলিক টিভির নিজস্ব পলিটিক্যাল বিট রিপোর্টার না থাকাই এর হাতেগরম প্রমাণ।
একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডা নিয়ে অর্ণব ময়দানে নেমেছেন, এমন অভিযোগও করেছেন ইস্তফা দেওয়া সাংবাদিক। অর্ণব গোস্বামীর ঔদ্ধত্যের জন্যই একদিন রিপাবলিক টিভি শেষ হয়ে যাবে বলে মনে করেন তেজিন্দর সিংহ সোধি। তাঁর কথায়, অর্ণব গোস্বামী সাংবাদিকতার নামে যেটা করছেন, তা ইয়েলো সাংবাদিকতার নামান্তর।
কিন্তু গোটা প্রক্রিয়ায় অর্ণব গোস্বামীকে দোষারোপ করলেও তেজিন্দর সিংহ সোধি নিজেও তো কাজ করে গিয়েছেন রিপাবলিক টিভিতে। কেন করলেন? সেখানে কাজ করার কারণে তিনিও কি অর্ণব গোস্বামীর বিরুদ্ধে করা একই অভিযোগে বিদ্ধ হবেন না? তেজিন্দর সিংহ সোধি জানিয়েছেন, লাভের লোভে সাংবাদিকতাকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় তিনি নিজের দায়ও অস্বীকার করতে পারেন না। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে চর্চিত নিউজ চ্যানেলের অন্দরমহলের ক্ষোভ বিক্ষোভে তোলপাড় সংবাদ মহল।

Comments are closed.