ঋণ পরিশোধে পুরুষের দশ গোল মহিলা শিল্পোদ্যোগীদের, অথচ ঋণ পেতে ছুটছে কালঘাম, প্রতিবেদন প্রকাশ ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে

কথায় বলে, নারীরা অর্ধেক আকাশ। কিন্তু বাস্তব কী বলছে? একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, আজও নারী-পুরুষে ভেদাভেদ অব্যাহত। সোমবার সর্বভারতীয় বিজনেস ডেইলি, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসে প্রকাশিত হয়েছে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থা শুভ লোনসের প্রতিষ্ঠাতা তথা সিইও মণীশ আনন্দের একটি প্রতিবেদন। তাতে তিনি উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, ব্যবসা ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে চিরাচরিত ঋণ প্রদানকারী সংস্থা (ব্যাঙ্ক, এনবিএফসি) মহিলাদের তুলনায় অগ্রাধিকার দেয় পুরুষদের। অথচ তথ্য বলছে, ঋণ নিয়ে সেই টাকার সদ্ব্যবহার এবং ঋণ পরিশোধের সমস্ত মাপকাঠিতেই পুরুষদের বলে বলে দশ গোল দিচ্ছেন মহিলারা।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৬ সালে ন্যাসকমের একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, মহিলারা দেশে মাত্র ৯ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থা চালাচ্ছেন। কিন্তু ২০১৮ সালে কেন্দ্রের তৎকালীন এমএসএমই মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১ হাজার অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীর মধ্যে ২০০ জনই মহিলা। এবং তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল দিল্লি, মুম্বই বা বেঙ্গালুরু নয়, দেশের ৩০ শতাংশ মহিলা শিল্পোদ্যোগীদের বসবাস মূলত মণিপুর, মিজোরাম ও তেলেঙ্গানা রাজ্যে। যে রাজ্যগুলো শিল্পোদ্যোগের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে পড়া বলেই মনে করা হয়।
ব্যবসা করতে প্রয়োজন ঋণ। কিন্তু ব্যাঙ্ক কিংবা নন ব্যাঙ্ক ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি) মহিলা শিল্পোদ্যোগীদের উপর ভরসা করতে পারে না। ফলে পুরুষ শিল্পোদ্যোগীদের মতো সমান সুযোগ-সুবিধাও পান না। অথচ তথ্য বলছে, ঋণ মেটানোর ক্ষেত্রে মহিলা শিল্পোদ্যোগীরা তুলনায় অনেক বেশি নির্ভরযোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। ক্রেডিট রিস্ক হোক বা ঋণ পরিশোধ, সব ক্ষেত্রেই পুরুষদের থেকে ঢের এগিয়ে তাঁরা। ক্রেডিট ইনফর্মেশন কোম্পানি, সিবিলের তথ্য বলছে, প্রত্যেক বছর ৮৬ লক্ষ মহিলা শিল্পোদ্যোগী ব্যবসায়ে লগ্নি করতে প্রথম ঋণ নেন, তাঁদের গড় ক্রেডিট স্কোর ৭৮১। যা আর্থিক পরিভাষায় দুর্দান্ত। পাশাপাশি, সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ব্যাঙ্ক লোন নেওয়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগী যদি মহিলা হন, পুরুষদের চেয়ে তাঁদের ব্যবসায়িক লাভ অন্তত ১৫ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, নন পারফর্মিং লোনের (এনপিএল) ক্ষেত্রেও পুরুষ পরিচালিত ব্যবসায়ের তুলনায় মহিলা পরিচালিত ব্যবসায়ে এনপিএল ৩০-৫০ শতাংশ কম।
এই অবস্থায় আশার আলো নতুন তৈরি হওয়া ফিনটেক সংস্থাগুলো। প্রতিবেদনে শুভ লোনসের কর্ণধার বলছেন, মহিলাদের ঋণ-যোগ্যতা নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে এই ফিনটেক সংস্থাগুলো। মহিলাদের ক্ষেত্রে সুদের হারও তুলনামূলকভাবে পুরুষদের চেয়ে কম রাখা হয়, যাতে তাঁরা প্রয়োজনীয় ঋণ নেওয়ার পর তা পরিশোধের ক্ষেত্রে সমস্যায় না পড়েন। বর্তমানে দেশে ৩০ লক্ষের বেশি মহিলা পরিচালিত শিল্প উদ্যোগ রয়েছে, যাদের অধিকাংশকেই ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় অসুবিধার মুখে পড়তে হয়।

Comments are closed.