মরার জন্য এলে তো মরতেই হবে, বিধানসভায় মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথের

আবার বিতর্কিত মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথের। নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলাকালীন নিহতদের সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বুধবার বিধানসভায় বললেন, কেউ যদি মরার ইচ্ছে নিয়ে আসে, তা হলে সে বেঁচে থাকবে কীভাবে? উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময় ২২ জনের মৃত্যু হয়। অভিযোগ উঠেছিল, পুলিশের গুলিতে অনেকে মারা যায়। তখনই উত্তরপ্রদেশ সরকার দাবি করেছিল, পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি। দাঙ্গাকারীদের গুলিতেই বিক্ষোভকারীরা মারা যায়। তা নিয়ে ওই সময় তোলপাড় চলে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ ফের দাবি করলেন, ওই সব ঘটনায় পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি। যারা মারা গিয়েছে, তাদের মৃত্যু হয়েছে দাঙ্গাকারীদের গুলিতে। মানুষকে মারার জন্য কেউ যদি রাস্তায় নামে, তবে হয় তার প্রাণ যাবে, নতুবা পুলিশ মরবে।
মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলেন, বারবার আজাদির স্লোগান দেওয়া হয়। কীসের আজাদি? আমরা কি জিন্নার স্বপ্ন পূরণ করব না গান্ধীজির স্বপ্ন পূরণ করব? ডিসেম্বর মাসে পুলিশ বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে প্রশংসনীয় কাজ করেছে। গণতন্ত্রের আড়ালে কেউ যদি হিংসা ছড়ায়, তা হলে সে যে ভাষা বোঝে, তাকে সেই ভাষাতেই বোঝাতে হবে।
সোমবার ইলাহাবাদ হাইকোর্টে উত্তরপ্রদেশ সরকার জানিয়েছে, সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময় রাজ্যে মোট ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই বিক্ষোভ দমনে পুলিশি বাড়াবাড়ি নিয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানি রয়েছে ১৮ মার্চ। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দিল্লির ভোটে বিপর্যয়ের পরেও বিজেপি নেতাদের শিক্ষা হয়নি। প্রতিবাদ করার অধিকার সকলেরই রয়েছে। সেই প্রতিবাদীদের মৃত্যু দুঃখজনক। একজন দায়িত্বশীল মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য আশা করা যায় না। তাঁরা বলছেন, যেখানে খোদ অমিত শাহ স্বীকার করছেন, দিল্লির ভোটের প্রচারে কুকথা এবং নানা বিতর্কিত মন্তব্য করা ঠিক হয়নি, সেখানে আদিত্যনাথের মুখে এই মন্তব্য ঠিক নয়। এই রাজ্যের বিরোধী নেতারাও আদিত্যনাথের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। সমালোচনা শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরেও। রাজ্য বিজেপির এক নেতা বলেন, এ বার আমাদের নেতা-মন্ত্রীদের সংযত হওয়া উচিত। সামনেই পুরসভার ভোট। শিক্ষিত মানুষ নেতা-মন্ত্রীদের মুখে এই ধরনের ভাষা শুনতে অভ্যস্ত নন। দিল্লির প্রচারে গদ্দারদের গুলি করে মারা-সহ নানা ধরনের কুকথা বলা হয়েছে। তার ফলও পেয়েছি আমরা। আবার যদি ‘প্রতিবাদ করলে গুলি খেয়েই মরতে হবে’ জাতীয় কথা শুনতে হয়, সেটা বাঞ্ছনীয় নয়। জানি না, এই রাজ্যের পুরভোটের প্রচারেও আমাদের নেতাদের মুখে এ সব শুনতে হবে কি না।

Comments are closed.