জয়পুরে জিকা ভাইরাসের থাবা, আক্রান্ত ২৯। সতর্ক করা হল বিহারকে

ভারতে থাবা বসালো জিকা ভাইরাস। এখনও পর্যন্ত জয়পুরের মোট ২৯ জনের রক্তে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। জয়পুরের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৩ তারিখ প্রথম জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মেলে। জানা গেছে, যে ২৯ জনের দেহে এই জিকা ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে, তারা প্রত্যেকেই জয়পুরের, শাস্ত্রী নগর এলাকার বাসিন্দা। আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন গর্ভবতী মহিলা আছেন। আক্রান্ত আর এক মহিলা সোমবার রাতেই সন্তান প্রসব করেছেন। আরও ৪৫০ জনের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, যাদের মধ্যে ১৫০ জন গর্ভবতী মহিলা রয়েছেন।
জয়পুরের পাশাপাশি জিকা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে বিহারেও। জানা গেছে, জয়পুরের আক্রান্তদের মধ্যে বিহারের এক পড়ুয়াও রয়েছে, সে গত ২৮ আগস্ট থেকে ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে বিহারের সিওয়ানে নিজের বাড়িতে গিয়েছিল। তাই সেখানেও এই ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, আতঙ্কের কিছু নেই। জয়পুরের ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে বিশেষ চিকিৎসক টিম পাঠানো হয়েছে। রাজস্থান প্রশাসনের তরফেও আক্রান্ত এলাকায় একাধিক মেডিকেল দল কাজ করছে। গোটা বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। জানা গেছে, এর আগে ২০১৭ সালে আহমেদাবাদ ও তামিলনাড়ুর কৃষ্ণগিরি এলাকায় জিকাতে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছিল, কিন্তু সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা এত ছিল না।

কী এই জিকা ভাইরাস? কীভাবে তা ছড়ায়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা হু এর তথ্য অনুযায়ী, মূলত এডিস মশার দেহেই জিকা ভাইরাস বাসা বাধে। মশার কামড়ে তা মানব দেহে সঞ্চারিত হয়। সাধারণত দিনের বেলায় এই মশা কামড়ায়। মোটামুটি, জ্বর, গায়ে-হাতে-পায়ে ব্যথা, গায়ে র‍্যাশ বেরনো, মাথা ব্যথা, চোখে অস্বস্তি এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। মোটামুটি দুই থেকে সাতদিন এই লক্ষণগুলি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণ আবার এতটা প্রকট ভাবে বোঝাও যায় না। কোনও গর্ভবতী মহিলা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গর্ভস্থ শিশুর উপর এর প্রভাব পড়তে পারে, প্রসবের পর সদ্যোজাতের কিছু শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে, যাকে বলে কনজেনিটাল জিকা সিন্ড্রোম। এমনকী গর্ভপাতও হতে পারে মহিলাদের। বাচ্চা ও বড়দের ক্ষেত্রে স্নায়ু ঘটিত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে জিকার থাবা দেখা গিয়েছে। ২০১৫ তে ব্রাজিলে বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করেছিল জিকা। বিশ্বের মোট ৮৬ টি দেশে কম বেশি এর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।

কী উপায়ে জিকার চিকিৎসা সম্ভব?

বিশেষজ্ঞদের মতে, জিকার লক্ষণ অনেকটা ডেঙ্গির মতোই। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে বিশদ তথ্য সংগ্রহের কাজ এখনও চলছে, তাই সেই অর্থে নির্দিষ্ট কোনও ইঞ্জেকশন বা ওষুধ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আবিষ্কার হয়নি। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখা, বেশি পরিমাণে জল খাওয়া, বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। সাধারণ জ্বর বা গা ব্যথার প্যারাসিটামল খেলে ও পর্যবেক্ষণে থাকলে এই সংক্রমণ ততটা প্রাণঘাতী নয়। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যেহেতু এডিস মশা এই ভাইরাসের ধারক ও বাহক, তাই মশার উপদ্রব কমানোর উপর জোর দেওয়া উচিত।

Comments are closed.