পরিবেশবান্ধব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আবিষ্কার করে রাষ্ট্রসংঘের স্বীকৃতি আদায় ভারতীয় স্থাপত্যবিদের

মাটির তৈরি বেশ কিছু নলাকৃ্তি পাত্র একত্রে জুড়ে অভিনব কায়দায় তৈরি মৌচাক আকৃ্তির এক শীতাতপ যন্ত্র। শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই করে দেখিয়েছেন দিল্লি নিবাসী স্থাপত্যবিদ মণীশ সিরিপুরাপু। শুধু তাই নয়, মণীশের তৈরি এই পরিবেশবান্ধব শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আদায় করে নিয়েছে রাষ্ট্রসংঘের স্বীকৃ্তি ও পুরস্কার। রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ শাখার তরফে সম্প্রতি ‘এশিয়া প্যাসিফিক লো-কার্বন লাইফ স্টাইল চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। এই প্রতিযোগিতাতে অংশ নিয়েই, নিজের অভিনব এই আবিস্কারের হাত ধরে বিশ্বমঞ্চে সারা ফেলেছেন মণীশ। এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার সুবাদে ১০ হাজার মার্কিন ডলার পুরস্কার মূল্য ছাড়াও, বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ব্যবসা ও বিপণন সংক্রান্ত পরামর্শও পাবেন ভারতের এই স্থাপত্যবিদ।
তথ্য বলছে, ভারতের মোট চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ আবাসনগুলিতে ব্যবহার হয়। যা ২০৪০ সালে বেড়ে পৌঁছতে পারে প্রায় ৭৬ শতাংশে। এই বিদ্যুতের চাহিদার অনেকটাই ব্যয় হয় ফ্রিজ এবং শীতাতপ যন্ত্র ব্যবহারের জন্য। বিদ্যুতের এই বিপুল চাহিদার পাশাপাশি রয়েছে সিএফসি সহ অন্যান্য গ্রীণ হাউস গ্যাসের নির্গমণের মতো বিষয়গুলি। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রসংঘের পরিবেশ শাখার ডিরেক্টর দেচেং শেরিং জানিয়েছেন, বর্তমানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, তাই পরিবেশবান্ধব পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির ব্যবহারের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে মণীশ সিরিপুরাপুর এই অভিনব সৃষ্টি অবশ্যই আলাদা করে নজর কাড়ে। আধুনিক গাণিতিক বিশ্লেষণ ও বিজ্ঞান কৌশল ব্যবহার করে তাঁর তৈরি এই শীতাতপ যন্ত্র সামান্য বিদ্যুৎ ব্যবহার করে পরিবেশকে শীতল রাখতে বিশেষভাবে কার্যকরী। গোটা প্রক্রিয়াটিই চলে মাটির তৈরি ওই নলাকার পাত্রগুলির মধ্যে দিয়ে জল প্রবেশ করিয়ে এবং সেই জল বাস্পীভবণের মাধ্যমে।
পরীক্ষামূলকভাবে উত্তর প্রদেশে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সাফল্যও পেয়েছেন মণীশ। সেখানে যন্ত্রটি ব্যবহার করে দেখা গেছে, বাইরের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকলেও যন্ত্রের আশপাশের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকছে।
মণীশ জানিয়েছেন, এই পদ্ধতি একদিকে পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। তাঁর আশা, জনগণের উপকারে লাগবে এই আবিস্কার। দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাইয়ের পাশাপাশি আবুধাবিতেও নিজের ওয়ার্কশপ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। মণীশ ছাড়াও এই প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিভাগে মোট ১২ জন জয়ী হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.