ভাঙা নৌকা নিয়ে দীর্ঘ ২৮ দিনের সমুদ্র যাত্রা, খাবার-পানীয় জলের অভাব সত্ত্বেও বেঁচে ফিরলেন ‘মৃত্যঞ্জয়’ অমৃত কুজুর

কূল-কিনারার দেখা নেই। কোথায় ভেসে চলেছেন তাই জানেন না। এক-আধদিন নয়, টানা ২৮ দিন এভাবেই মাঝ সমুদ্র ভেসে থেকে মৃত্যুকে জয় করে ফিরলেন আন্দামানের শহিদ দ্বীপের বাসিন্দা অমৃত কুজুর। দীর্ঘ ২৮ দিন ভয়ঙ্কর ক্লান্তিকর যাত্রা শেষ করে গত শুক্রবার ওড়িশার খৈরিশাহি উপকূলে গিয়ে ঠেকেন অমৃত কুজুর। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে সংবাদমাধ্যমকে শোনালেন তাঁর রূদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতার কথা।
গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর বন্ধু দিব্যরঞ্জনকে নিয়ে সমুদ্র যাত্রা করেন ৪৯ বছরের অমৃত কুজুর। উদ্দেশ্য সমুদ্রে ভাসমান জাহাজে খাবার-সামগ্রী ও জল বেচবেন। কিন্তু হঠাৎই প্রচণ্ড ঝড়ে উথাল-পাথাল হয়ে ওঠে সমুদ্র। ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁদের নৌকা। প্রায় ৫ লাখ টাকার জিনিস ছিল নৌকায়, সে সবও কেড়ে নেয় অশান্ত সমুদ্র। কোনওভাবে নৌকাকে পাড়ে লাগানোর চেষ্টা করেও বিফল হন। একে নৌকার পাল ভেঙে গিয়েছে, তারপর জ্বালানিও শেষ। রেডিও যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। অমৃত কুজুর জানান, এরপর নৌকার ভার কমানোর জন্য প্রচুর জিনিস ফেলে দেন তাঁরা। অনেক জাহাজের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন, কিন্তু তারা কেউই কুজুরের নৌকাকে চিহ্নিত করতে পারেনি। অবশেষে মায়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজের চোখে পড়েন তাঁরা। ২৬০ লিটার জ্বালানি তেল দেওয়া হয় তাঁদের।
ঘরে ফেরার আশা দেখতে পান অমৃত ও দিব্যরঞ্জন। কিন্তু বিধি বাম। ফের ঝড়ের কবলে পড়ে তাঁদের নৌকা। কয়েক মুহূর্তের জন্য বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন অমৃত। কিন্তু জীবন বাঁচাতে সমুদ্রের নোনা জলকে গামছা দিয়ে তুলে তাই নিংড়ে খেতে থাকেন তাঁরা। কিন্তু এভাবে আর বন্ধু দিব্যরঞ্জনকে বাঁচাতে পারেননি। প্রতিদিন একটু একটু করে বন্ধুকে চোখের সামনে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়তে দেখেন অমৃত কুজুর। কিন্তু করণীয় কিছুই ছিল না। অমৃতের কথায়, বন্ধুর মৃত্যুর পর তাঁকে ছেড়ে আসতে বাধ্য হন তিনি। দীর্ঘ ২৮ দিন ভাঙা নৌকা নিয়ে ভাসতে ভাসতে গত শুক্রবার পুরির খৈরিশাহি উপকূলে এসে ঠেকেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ যখন অমৃতকে উদ্ধার করে শুধু প্রাণটুকুই অবশিষ্ট ছিল। এরপর স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে জানিয়েছে, শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল অমৃত কুজুর এখন কিছুটা সুস্থ আছেন। তাঁকে বাড়ি ফেরানোর তোড়জোড় চলছে। অমৃত কুজুরের আফশোস, বন্ধুকে বাঁচিয়ে ঘরে ফেরাতে পারলেন না তিনি।

 

Comments are closed.