ফর্ম সাময়িক ক্লাস চিরস্থায়ী! কৃষ্ণনগর উত্তরের ঘূর্ণি পিচে মুকুলের নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াই

কৃষ্ণনগর উত্তর আসন আপাতদৃষ্টিতে বিজেপির কাছে নিরাপদ

দীর্ঘদিন এত কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি। একুশের ভোট তাঁর কাছে অ্যাসিড টেস্ট। ২০ বছর তৃণমূলে কাটানোর পর ২০১৭ সালে বিজেপিতে গিয়ে একুশের ভোটের প্রার্থী হয়েছেন মুকুল রায়। ভোটে লড়াও সেই ২০ বছর পর। শেষবার ২০০১ সালে নিজের জেলা উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে হেরে গিয়েছিলেন মুকুল। তখন তিনি বিরোধী নেত্রী মমতার সঙ্গে। এবার লড়াই সেই মমতারই বিরুদ্ধে।  

কৃষ্ণনগর উত্তর আসন আপাতদৃষ্টিতে বিজেপির কাছে নিরাপদ। লোকসভা ভোটে বেশ কিছুটা লিড আছে গেরুয়া শিবিরের। কিন্তু তা বলে এত নিশ্চিন্ত! কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রে সেভাবে মুকুল রায়কে প্রচারে দেখা যায়নি। বিজেপি সূত্রের খবর, মুকুল ব্যস্ত রণনীতি সাজাতে। 

কৃষ্ণনগর উত্তরে বহু যুদ্ধের পোড়খাওয়া মুকুল রায়ের লড়াই তৃণমূলের তারকা প্রার্থী কৌশানী মুখার্জির সঙ্গে। বছর ২৮ এর কৌশানীর আবার রাজনীতিতে হাতেখড়ি একুশের ভোটেই। তাই কি একটু হলেও অ্যাডভান্টেজ বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য নামে পরিচিত মুকুল রায়? 

বিজেপির অবশ্য সাফ কথা, লোকসভার ফলে এগিয়ে থাকা কেন্দ্রে মুকুল রায়ের লক্ষ্য ব্যবধান বাড়ানো। সেই কৌশলই তৈরিতে ব্যস্ত ৬৬ বছরের মুকুল। 

কিন্তু এতটাই কি সহজ? বিজেপি প্রার্থী হিসেবে মুকুলের নাম ঘোষণা হতেই তৃণমূল প্রার্থী কৌশানী মুখার্জির কটাক্ষ মিশ্রিত প্রশ্ন ছিল, মুকুল বাবু কোনওদিন ভোটে জেতেননি তাও হেভিওয়েট? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কৌশানীর ওই মন্তব্যেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, মুকুলকে খোলা মাঠ ছাড়ছে না তৃণমূল। তারপর কৌশানী প্রচারে কার্যত ঝড় তোলেন। সেখানে বিজেপির প্রচারে মুকুল রায়ের দেখা নেই!

সদ্য চোখ অপারেশন করিয়েছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একুশের ভোট মুকুলের কাছে অনেকটা নিজেকে নতুন করে ফিরে পাওয়ার লড়াই। সংসদীয় রাজনীতিতে অনেকের সিঁড়ি ছিলেন মুকুল রায়। জেলায় জেলায় তৃণমূলের সংগঠনকে দাঁড় করাতে মুকুলের অবদান অস্বীকার করে না তৃণমূলও। কিন্তু ২০০১ এর পর ভোটে দাঁড়িয়ে জেতা-হারার মধ্যে যেতে হয়নি মুকুল রায়কে। মহান সম্ভাবনার শিল্প রাজনীতিতে ৬৬ বছর বয়সে সেই মুকুলকে ভোটে লড়তে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হল দীর্ঘদিন পর আবার ভোটের ময়দানে নেমে ব্যাটে-বলে হবে কি? টেস্ট ক্রিকেটের ভক্ত মুকুল রায় জানেন, ফর্ম সাময়িক কিন্তু ক্লাস চিরস্থায়ী। 

প্রথমত লোকসভায় অনেকটা লিড, দ্বিতীয়ত প্রার্থীর নাম মুকুল রায়। বিজেপি কি খেলার আগেই এগিয়ে গেল না? তৃণমূল অবশ্য এই জোড়া ফ্যাক্টরকে কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাদের দাবি, বিধানসভায় ভোট হচ্ছে মমতার নামে। এখানে লোকসভার হিসেব মিলবে না। চনমনে কৌশানী নিশ্চিত বাজিমাত করছেন। 

২০০১ সালের ১৩ মে জগদ্দলে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী হরিপদ বিশ্বাসের কাছে হেরে গিয়েছিলেন মুকুল রায়। ২ দশক বাদে, ২০২১ সালের ২ মে কি মুকুলের জীবনে ২০০১ এর ১৩ মে হয়ে ফিরবে নাকি শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ভোট রাজনীতির দ্বিতীয় ইনিংসে মুকুল রায় ঢুকে পড়বেন ইডেন গার্ডেনসের প্রতিবেশী বিধানসভা ভবনে, সেটাই এখন দেখার।

Comments are closed.