এনআরসি, সিএএ এবং এনপিআর নিয়ে বিজেপি এখন বেশ বেকায়দায় পড়েছে। অমিত শাহরা যতই বুক বাজিয়ে বলুন না কেন, এনআরসি, সিএএ আর এনপিআর হবেই। কিন্তু কবে থেকে তা হবে, কেউ বলতে পারছেন না। নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি এবং জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জির বিরুদ্ধে প্রায় সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষ যে ভাবে পথে নেমে পড়েছে, তাতে খানিকটা অবাকই হয়েছেন বিজেপির তাবড় নেতারা। সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা রয়টার্স একটি খবরে বলেছিল, বিজেপির অনেক নেতা, মন্ত্রী কবুল করেছেন, নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন এই আকার নেবে, তা তাঁরা আগাম আঁচ করতে পারেননি। এই আন্দোলন মোকাবিলা করতে এখন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা এনআরসি, সিএএ আর এনপিআর বোঝাতে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্থির হয়েছে, তিন কোটি পরিবারের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবেন দলের নেতারা। প্রতি জেলায় হবে জনসভা। বিশিষ্টদের বোঝানো হবে। তাঁদেরও প্রয়োজনে পথে নামানো হবে। তারকা নেতা-নেত্রী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে কাজে লাগানো হবে। দেশজুড়ে আয়োজন করা হবে আড়াইশো সাংবাদিক বৈঠক, এক লক্ষ পথনাটিকার, ব্যাপক প্রচার চালানো হবে।
বিজেপি সূত্রের খবর, রবিবার থেকেই বাড়ি বাড়ি যাওয়া শুরু করছেন বিজেপি নেতারা। রবিবার দিল্লি শহরের দশটি বাড়িতে যাবেন খোদ অমিত শাহ। তিনি বাড়িতে বাড়িতে নয়া নাগরিকত্ব আইনটি কী, তা বোঝাবেন। বাকি নেতাদেরও অন্য শহরে যেতে হবে বাড়ি বাড়ি নয়া আইন সম্পর্কে বোঝাতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং অন্যরা প্রকাশ্যে বলছেন, নয়া আইনের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হচ্ছে, তার পিছনে কংগ্রেস ও শহুরে নকশালদের মদত রয়েছে। মোদী, শাহরা তেড়ে গালাগাল দিচ্ছেন বিরোধী নেতা-নেত্রীদের। কিন্তু একান্ত আলোচনায় অনেক নেতাই স্বীকার করে নিচ্ছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আন্দোলনের রাশ রাজনৈতিক দলগুলির হাতে নেই। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রী, সাধারণ মানুষ, শিক্ষক, অধ্যাপক, বিশিষ্টজন, যাঁরা কোনও রকম রাজনীতির ধারেকাছে কখনও যাননি, তাঁরাও যেভাবে পথে নেমে পড়েছেন, তা নজিরবিহীন। এই প্রসঙ্গেই আসছে দিল্লির শাহিনবাগে গত কুড়িদিন ধরে চলা ধর্ণা, অবস্থানের কথা। বহু শিক্ষিত পরিবারের মহিলা, পুরুষ এমনকি তাঁদের ছোট ছেলেমেয়েরা পর্যন্ত রাত জাগছে। সমাজবিদরা বলছেন, জরুরি অবস্থার ঠিক আগে দেশে এমনই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই আজাদির কথা বলতে শুরু করেছেন মিছিলে, মিটিং-এ, সভা-সমিতিতে। এত দিন পর ‘আমি এ দেশের নাগরিক তো?’ এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে সকলকে, এটাই ভাবিয়ে তুলেছে আমজনতাকে। সেই ভয় থেকেই ভয় ভেঙ্গে দলে দলে মানুষ বেরিয়ে পড়েছে নয়া আইনের প্রতিবাদে। অনেকেই বলছেন, ২০১৪ সালের পর থেকে দুই দফার রাজত্বে এই প্রথম মোদী একটা বড় চ্যালেঞ্জের সামনে পড়ে গিয়েছেন। সারা দেশে কত মানুষের বাড়িতে গিয়ে উঠতে পারবেন বিজেপির নেতা, কর্মীরা, উঠছে সেই প্রশ্নও।
Comments