নোট বাতিলের ফলে নির্বাচনে কালো টাকা আটকানো যায়নি, বললেন দেশের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাচনী অফিসার

শনিবারই দেশের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার হিসেবে নিজের কার্যকালের মেয়াদ শেষ করেছেন ও পি রাওয়াত। মেয়াদ শেষে নিজের কর্মকালের অভিজ্ঞতা নিয়ে সংবাদপত্র ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুখ খুলেছেন রাওয়াত। সেখানেই ভোটে কালো টাকার প্রভাব নিয়ে তাঁর করা একটি মন্তব্য ফের প্রশ্ন তুলে দিল নোট বাতিলের সাফল্য ও যৌক্তিকতা নিয়ে।
এক প্রশ্নের জবাবে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত দেশের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার জানিয়েছেন, নোট বাতিলের পর থেকে দেশে যেকটি বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে সব ক্ষেত্রেই নির্বাচনে বিপুল কালো টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। পাঁচ রাজ্যের চলতি বিধানসভা নির্বাচনেও উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি কালো টাকা। রাওয়াত আরও বলেছেন, এর থেকেই প্রমাণিত হয়, নোট বাতিলের ফলে কালো টাকা আটকানো সম্ভব হয়নি। প্রভাবশালী বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আসা কালো টাকা নির্বাচনে কাজে লাগানোর চেষ্টা চলছে। অথচ নোট বাতিলের সময় কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছিল, এর ফলে দেশের অর্থনীতি কালো টাকা মুক্ত হবে।
তবে রাওয়াত একা নন, এর আগে একাধিক উচ্চপদস্থ আধিকারিক, আমলা ও অর্থনীতিবিদ নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। মোদী আমলের দেশের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রমনিয়ম সম্প্রতি তাঁর বইতে লিখেছেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ছিল ভয়ঙ্কর, এর ফলে কমেছে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, গরিব সাধারণ মানুষকে বিপুল সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে এর ফলে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনও মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। নোট বাতিল ও জিএসটির বিরূপ প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে বলে দাবি করেছেন একাধিক অর্থনীতিবিদ। এর আগে নোবেল জয়ী বিশিষ্ট অর্থনীবিদ অমর্ত্য সেন এই সিদ্ধান্তকে অবিবেচকের মতো আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত যে ভুল তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই, প্রশ্ন সেটি কত বড় ভুল সিদ্ধান্ত তা নিয়ে।
দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা তথা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহ সরাসরি কেন্দ্রকে আক্রমণ করে বলেছিলেন, নোট বাতিলের নামে সংগঠিত লুঠ চালিয়েছে মোদী সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমেই সরব হয়েছিলেন নোট বাতিলের বিরোধিতায়। এতদিন রাজনৈতিক নেতা থেকে অর্থনীতিবিদ বারবারই অভিযোগ করেছেন, নোটবন্দি দেশের অর্থনীতিতে এমন এক ক্ষত সৃষ্টি করেছে যে, দু’বছর পেরিয়ে গেলেও তার ক্ষত শুকোয়নি। এবার এই তালিকায় যুক্ত হল আমলা ও পি মাথুরের নাম।

Comments are closed.