চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থার মামলা প্রত্যাহার নির্যাতিতার! বললেন, ‘আমার কোনও অভিযোগ নেই

২০১৯ সালে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্বামী চিন্ময়ানন্দ। আইনের পড়ুয়া, উত্তর প্রদেশের ২৩ বছরের এক তরুণী চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন। এই ঘটনার প্রায় এক বছর কেটে গিয়েছে! এর মধ্যে গত ১৩ অক্টোবর আচমকাই লখনউ আদালতে চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ তুলে নিলেন অভিযোগকারিণী। মঙ্গলবার এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত লখনউয়ের বিশেষ আদালতে হাজিরা দেন ওই তরুণী। সেখানে চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কথাই অস্বীকার করেন তিনি। এতে তাঁর বিরুদ্ধেই মিথ্যাচারের অভিযোগ আনেন সরকারি আইনজীবী। বিচারকের কাছে ফৌজদারি আইনের ৩৪০ ধারায় ওই তরুণীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আর্জি জানান। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি করবে আদালত।
উত্তর প্রদেশের শাহজাহানপুরে চিন্ময়ানন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছিলেন ওই তরুণী। গত বছরের অগাস্টে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বার্তায় চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আনেন তিনি। সন্ত গোষ্ঠীর ওই প্রভাবশালী নেতা তাঁকে হুমকিও দিচ্ছেন বলে জানান। তার এক দিন পরই নাটকীয়ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তরুণী। এরপর চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে মেয়ের উপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণীর বাবা। জানান, তাঁদের হেনস্থা করছিলেন চিন্ময়ানন্দ।
যদিও সপ্তাহ খানেক বাদে রাজস্থান থেকে অভিযোগকারিণী ওই তরুণীকে খুঁজে বার করে উত্তর প্রদেশ পুলিশ। তারপর সেই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর চিন্ময়ানন্দের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন তরুণী। ২০ সেপ্টেম্বর চিন্ময়ানন্দকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে উত্তর প্রদেশ সরকার। সেসময় পুলিশ জানায়, জেরার মুখে প্রায় সব অভিযোগই স্বীকার করে নেন স্বামী চিন্ময়ানন্দ। তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রভাব খাটিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ দায়ের হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
যদিও ওই তরুণীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করে চিন্ময়ানন্দ জানান, অপ্রস্তুত অবস্থায় তোলা একটি ভিডিও নিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছিলেন ওই তরুণী। তাঁর কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা হাতানোর উদ্দেশ্য ছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগকারিণীকে হেফাজতে নেওয়া হয়। মামলা দায়ের হয় তাঁর তিন বন্ধুর বিরুদ্ধেও। ৬ নভেম্বর গোটা মামলায় চার্জশিট জমা দেয় সিট। ডিসেম্বর মাসে ওই তরুণীর জামিন মঞ্জুর করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এদিকে চলতি বছরের শুরুতে চিন্ময়ানন্দেরও জামিন মঞ্জুর হয়। হাইকোর্ট জানায়, অভিযোগকারী তরুণী ও চিন্ময়ানন্দ, দু’জনেই প্রয়োজনে পরস্পরকে ব্যবহার করেছেন। তারপর এবছর শাহজাহানপুর থেকে মামলাটি লখনউয়ের বিশেষ আদালতে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেয় এলালাহাবাদ হাইকোর্ট। সেখানেই মঙ্গলবার অভিযোগ থেকে পিছু হটলেন ওই তরুণী। যা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে। চাপে পড়ে ওই তরুণী অভিযোগ থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করেছেন নারী অধিকার সংক্রান্ত কাজে যুক্ত থাকা একাধিক সমাজকর্মী। তাঁদের মতে, প্রতি পদে উত্তরপ্রদেশ সরকার ওই তরুণীর লড়াইয়ের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। তাঁর গোটা পরিবারের উপর লাগাতার চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল।

Comments are closed.