মোদীর ডাকা বৈঠকে গরহাজির মমতা, কী বলছে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর ইতিহাস?

শুক্রবার কলাইকুন্ডায় যশ পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর গরহাজিরা নিয়ে তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি। মমতা ব্যানার্জির সমালোচনায় নেমে পড়েছে বিজেপি। তাঁদের সম্মিলিত অভিযোগ, মমতার এই আচরণে অসম্মানিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা। 

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, সকলেই চিন্তিত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় মমতার এহেন আঘাতে। এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের গরহাজিরা কি এই প্রথম? তাই কি একে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রাণঘাতী হিসেবে অভিহিত করছেন বিজেপি নেতা বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা? 

এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের একটু পিছন ফিরে তাকাতে হবে। 

INDIA TODAY’র রিপোর্ট বলছে, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন কাউন্সিল বা NIC এর বৈঠক ডাকেন। উপলক্ষ্য, উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরে দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা নিয়ে আলোচনা। সোশ্যাল সাইটে জাতীয় সংহতি প্রচার এবং ঘৃণা ছড়ানোর হ্যান্ডল চিহ্নিত করে পরদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সেই বৈঠকে হাজির হননি গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

পড়ুন: INDIA TODAY এর ২০১৩ সালের সেই রিপোর্ট 

এখানেই শেষ নয়, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০১১ সালেও একবার প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে গরহাজির ছিলেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। NDTV-র রিপোর্ট বলছে, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১, ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন কাউন্সিলের বৈঠকে আসেননি মোদী। কারণ হিসেবে ওই প্রতিবেদনে সূত্রকে উদ্ধৃত করে উল্লেখ করা হয়েছে, কেন্দ্রের ডাকা সেই বৈঠকেই যান মুখ্যমন্ত্রী, যেখানে কেবলমাত্র মুখ্যমন্ত্রীদের ডাকা হয়। 

পড়ুন: NDTV এর ২০১১ সালের সেই রিপোর্ট

এর আগেও একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনওবার কি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল? তাহলে এবার কেন এই প্রশ্ন তুলছে বিজেপি? এমন কী পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এই ঘটনাকে প্রধানমন্ত্রীকে বয়কট বলে দাবি করে ট্যুইট পর্যন্ত করেছেন। প্রশ্ন উঠছে, ২০১১ বা ২০১৩ সালে তৎকালীন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর গরহাজিরার পরও সংশ্লিষ্ট রাজ্যপালেরা একই প্রশ্ন তুলেছিলেন? 

পর্যবেক্ষকদের মতে, এর পিছনে রয়েছে রাজনীতি। আবার অন্য একটি অংশের মতে বাংলায় হার এখনও হজম হয়নি মোদী-অমিত শাহের। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। পাশাপাশি উঠছে আরও একটি প্রশ্ন, তা হল বিরোধী দলনেতাকে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ডাকা নিয়ে। পর্যবেক্ষকরা যাকে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন। এই প্রেক্ষিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ট্যুইট করেছেন গুজরাত প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি ভারত সোলাঙ্কি। তাঁর ট্যুইট, দেখে ভাল লাগছে যশের ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয়ে বাংলার বিরোধী দলনেতাকেও ডেকেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু আমি অবাক হয়ে যাই যখন দেখি সাইক্লোন তুকতায়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার সময় নরেন্দ্র মোদী বিরোধী নেতাদের ডাকতে ভুলে যান! 

সবমিলিয়ে কলাইকুন্ডায় বৈঠক নিয়ে নতুন করে গরম হচ্ছে আবহাওয়া। তুঙ্গে রাজনীতি।

Comments are closed.