শত্রুকে জব্দ করতে চিন ল্যাবরেটরিতে তৈরি করেছে করোনা! কী দাবি মার্কিন অধ্যাপকের, যা নিয়ে তোলপাড় দুনিয়া

ভবিষ্যতে শত্রুর বিরুদ্ধে কাজে লাগানো হবে বলে উহানের ল্যাবরেটরিতে তৈরি হচ্ছিল এক ভয়ানক ভাইরাস। কোনওভাবে সেটাই লিক হয়ে এই অতিমারির সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া নিয়ে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়েসের অধ্যাপক তথা রাসায়নিক ও মারণাস্ত্র বিরোধী সংগঠনের অন্যতম সদস্য ডঃ ফ্রান্সিস বয়েল।
‘জিওপলিটিক্যাল অ্যান্ড এম্পায়ার’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অধ্যাপক বয়েলের বিস্ফোরক দাবি, করোনা আসলে চিনের তৈরি  একটি জৈব অস্ত্র, যা উহানের বায়োসেফটি লেবেল ফোর ল্যাবরেটরিতে বানানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, অধ্যাপক বয়েলের চাঞ্চল্যকর দাবি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এই বিষয়টি সম্পর্কে আগাগোড়া অবহিত। তারা জানত এই ‘বায়োলজিক্যাল ওয়েপন’ চিন তৈরি করছে।
২০১৯ সালের শেষভাগে চিনের উহান প্রদেশ থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনায় সি-ফুড কিংবা বাদুড়ের মাংস থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে বলে অনুমান করেছেন বহু বিশেষজ্ঞ। এই মত পুরোপুরি নস্যাৎ করে দিয়েছেন ডঃ ফ্রান্সিস বয়েল। তাঁর দাবি, চিন ওই মারাত্মক ও আক্রমণাত্মক জৈব অস্ত্র প্রয়োজনে শত্রুর বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য তৈরি করেছে। বিষয়টি আগাগোড়া কৌশলে লুকিয়ে করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই এখন করোনাভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছে। তাঁর বয়ান হল, চিনের কোনও বাজার, পশুপাখির মাংস থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, কোনও বিশেষজ্ঞই হলফ করে এ কথা বলতে পারবেন না। তাঁর মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি।কে এই ডঃ ফ্রান্সিস বয়েল
‘ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়েস কলেজ অফ ল’-র ইন্টারন্যাশনাল ল পড়ান অধ্যাপক বয়েল। তাঁর জন্ম ১৯৫০ সালের ২৫ মার্চ। মার্কিন অধ্যাপক ও মানবাধিকার আইনজীবী ডাঃ বয়েল ১৯৭১ সালে ইউনিভার্সিটি অফ চিকাগো থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হন। এরপর হার্ভার্ড ল স্কুল থেকে ১৯৭৬ সালে জুরিস ডক্টর ডিগ্রি (জেডি) লাভ করেন। জুরিস ডক্টর বা ডক্টর অফ জুরিসপ্রুডেন্স হল আইনে ডক্টরেট করার একটি প্রফেশনাল ডিগ্রি। চিকিৎসকদের এমডি বা ডিডিএস ডিগ্রির সমতুল্য এই আইনের ডিগ্রি। জেডি করার পর ১৯৮৩ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবার এমএ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি করেন তিনি। এরপর কর ও আন্তর্জাতিক কর আইন নিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করেন ডঃ ফ্রান্সিস বয়েল। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার কাউন্সেল হিসেবে কাজ করেছেন। বসনিয়ার দুটি নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং তাঁর দীর্ঘ পেশা জীবনে মানবাধিকার নিয়ে লড়াই করছেন বয়েল। গণহত্যা ও যুদ্ধ বিগ্রহের বিরুদ্ধে ক্রমাগত কাজ করে চলেছেন। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার যুদ্ধ বিগ্রহের বিরুদ্ধে মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও কাজ করেন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংগঠন যেমন কানাডার ব্ল্যাকফুট নেশন, দ্য নেশন অফ হাওয়াই, লেকোটা নেশন ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। মৃত্যুদণ্ড ও মানবতাবিরোধী বিভিন্ন মামলায় তিনি যুক্ত থেকেছেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে, যুদ্ধ এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে, পরমাণু অস্ত্র ও জৈব অস্ত্রের বিরুদ্ধাচারণ করে তাদের পরামর্শদাতা হিসেবেও যুক্ত আছেন ডঃ বয়েল।
বিখ্যাত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বোর্ড অফ ডিরেক্টরসের পদে ছিলেন দীর্ঘদিন। কিন্তু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ- র কাজে একসময় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, এই সংগঠন আমেরিকার বিদেশ নীতির সমর্থনেই কাজ করে এবং পক্ষপাতদুষ্ট। তারা মানবাধিকার নয়, প্রচারের জন্য কাজ করে। তারপর টাকা এবং আরও বেশি সদস্য বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য। এসব মিটলে তাদের নজর থাকে ‘আসল’ মানবাধিকার ইস্যুর উপর।
আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লু বুশের সময় যে জৈব অস্ত্রের বিরোধী আইন পাশ হয় আমেরিকায় তার খসড়া তৈরি করেছিলেন ডঃ বয়েল। যা বায়োলজিক্যাল ওয়েপনস অ্যান্টি-টেররিজম অ্যাক্ট, ১৯৮৯ নামে পরিচিত।
বিশ্বব্যাপী ফ্রান্সিস বয়েল বিখ্যাত তাঁর মানবাধিকার সংক্রান্ত নানা কাজের জন্য। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশনস অফ ওয়ার্ল্ড অর্ডার, ডেস্ট্রয়িং ওয়ার্ল্ড অর্ডার, ‘বায়োওয়ারফেয়ার অ্যান্ড টেররিজম’, ‘দ্য তামিল জেনোসাইড বাই শ্রীলঙ্কা’, ‘প্যালেস্তাইন, প্যালেস্তানিয়ানস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ল’, ‘ডেস্ট্রয়িং লিবিয়া অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড অর্ডার’, ‘দ্য ক্রিমিনালিটি অফ নিউক্লিয়ার ডিটারেন্স’ ইত্যাদি বই আইন ও বিভিন্ন দেশের মধ্যে যুদ্ধ, মানবাধিকারের অমূল্য খতিয়ান।
করোনাভাইরাস নিয়ে ডঃ ফ্রান্সিস বয়েলের দাবির সঙ্গে যাঁরা সহমত
ফ্রান্সিস বয়েলের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন বিখ্যাত লেখক জে আর নিকোয়েস্ট। ‘অরিজিনস অফ দ্য ফোর্থ ওয়ার্ল্ড ওয়ার’, ‘দ্য ফুল অ্যান্ড হিজ এনিমি’-র মতো বিখ্যাত বইয়ের লেখক নিকোয়েস্টের মত, কানাডা থেকে করোনাভাইরাস চুরি করে একে মারণাস্ত্রে পরিণত করেছে চিন। ডঃ বয়েলের দাবি, কানাডায় যে ল্যাবরেটরিতে করোনা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছিল, সেখানে চিনা এজেন্টরা ছিলেন। তাঁরাই ওই ভাইরাস পাচার করেন। এদিকে জে আর নিকোয়েস্টও তাঁর এক লেখায় প্রায় একই দাবিই তুলেছেন।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস যখন অতিমারি হয়ে ছোবল মেরেই যাচ্ছে, করোনাভাইরাস কোথা থেকে ছড়িয়েছে তা ভেদ করতে যখন বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন মত ব্যক্ত করছেন, তখন ডঃ বয়েলের এই দাবি বিস্ফোরক এবং চাঞ্চল্যকর বটে। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।

Comments are closed.