Corona: সন্তানসম্ভবাদের ওপর করোনার প্রভাব কী? সদ্যোজাতের কি ব্রেস্ট ফিডিং নিরাপদ? কী বলছে চিনের পরিসংখ্যান? কী বলছেন চিকিৎসকরা?
বিশ্বজুড়ে হাহাকার ফেলেছে করোনাভাইরাস। মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ছাড়িয়েছে ১০ হাজার। কার্যত অন্ধকারে লড়াই চালানোর মতো পরিস্থিতি চিকিৎসা জগতের। দুনিয়ার তামাম ডাক্তাররা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে একমাত্র কর্তব্য, সচেতনতা এবং সাবধানতা। একমাত্র এটাই আপনাকে বাঁচাতে পারে মারণ ভাইরাসের থাবা থেকে।
জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ থাকলেই সাবধান হন। বিশেষ করে ষাটোর্ধ্ব মানুষরা। আপাতত সাধারণ বিপদ ঘণ্টি এটাই। বয়স ষাট পেরোলে শরীর তুলনামূলকভাবে অশক্ত হয়। দুর্বলতা বাড়ে। কমে ইম্যুনিটি। মারণ ভাইরাসের আদর্শ ধাত্রীভূমি।
কিন্তু একটা বিষয় কি চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে? গোটা আলোচনায় একবার আসছে না প্রসূতিদের কথা। অথচ সমাজে এঁরাই রয়েছেন সবচেয়ে অসুরক্ষিত এবং অসহায় অবস্থায়। কারণ একা নিজের স্বাস্থ্যই তাঁদের দেখভাল করলে চলবে না, চূড়ান্ত খেয়াল রাখতে হবে পেটের সন্তানের দিকেও। প্রসূতিরাই বহন করছেন আগামী প্রজন্ম।
ইউরোপে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে ইংল্যান্ড প্রসূতিদের জন্য বিশেষ কিছু উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছে। সেই উদ্যোগের নেপথ্যে যাঁদের মস্তিষ্ক, তাঁদের অন্যতম ডাক্তার আমির খান। সম্প্রতি আল জাজিরাতে লেখা একটি প্রবন্ধে ডাক্তার আমির খান জানিয়েছেন এই পরিস্থিতিতে কেন প্রসূতিদের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দিতে হবে এবং সে জন্য কী কী করা যেতে পারে।
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ শক্তি
এক্ষেত্রে সমাজের সবচেয়ে অসুরক্ষিত ও অসহায় যে প্রসূতিরা, তা নিয়ে দ্বিমত হওয়ার সুযোগ কম। তা যেমন সামাজিক ক্ষেত্রে, তেমন শারীরিকভাবে তো বটেই। আসন্ন প্রসবাদের শরীরের ভেতরে ভ্রুণের বেড়ে ওঠার প্রয়োজনেই, ইম্যুনিটি পাওয়ার বা রোগ প্রতিরোধ শক্তি নিয়মিতভাবে কম বেশি হতে থাকে ওই সময়জুড়ে।
স্বভাবতই এই সময় COVID-19-এর উপসর্গ যেমন শ্বাসকষ্ট কিংবা নিউমোনিয়ায় প্রসূতিদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
কী করবেন?
আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে নিজেকে ঘরবন্দি করবেন? চিকিৎসকের কাছে নিয়মিত চেকাপ কি বন্ধ করবেন ভাবছেন? এই ভাবনার চরমসীমা, ডেলিভারি পিছিয়ে দেওয়ার দুর্ভাবনা। ডাক্তার আমির খান বলছেন, রুটিন বদলানোর কোনও প্রয়োজন নেই। যেমন চলছে, তেমনই চলুক।
আরও জানতে ক্লিক করুন, জানেন কীভাবে এই মারণ ভাইরাসের নাম হল করোনা?
কিন্তু যদি অনেকদিন ধরে চলা শুকনো কাশি কিংবা জ্বরের উপসর্গ থাকে, প্রথমেই সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং। মানে সমাজের বাকিদের থেকে নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখা। বাড়ি বন্দি বলতে পারেন। এক্ষেত্রে সেল্ফ আইসোলেশন বা ঘরবন্দি থাকা সবচেয়ে নিরাপদ। একই সঙ্গে কথা বলুন ডাক্তারের সঙ্গে। বাচ্চা হওয়ার সময় সাধারণত প্রসূতিরা মা-বাবার কাছেই থাকেন। সেক্ষেত্রে সেল্ফ আইসোলেশন সবচেয়ে ভালো, বলছেন ডাক্তার খান। কিন্তু এখানে আছে একটি বড় প্রশ্ন।
আমার শরীর থেকে করোনাভাইরাস কি শিশুর শরীরেও যেতে পারে?
ডাক্তার খান বলছেন, এমন কিছু ভাইরাল, ব্যাকটেরিয়াল বা ফাংগাল ইনফেকশন আছে, যা সহজেই প্রসূতির শরীর থেকে বেবির শরীরে পৌঁছে যায়। যেমন HIV, হেপাটাইটিস, চিকেনপক্স, রুবেলা (হামের জীবাণু)।
কিন্তু করোনাভাইরাস কি মায়ের শরীর থেকে ভ্রুণস্থ শিশুর শরীরেও পরিবাহিত হতে পারে? সত্যি বলতে কি, এর কোনও শক্তপোক্ত প্রমাণ এখনও কেউ হাজির করতে পারেনি।
এই প্রসঙ্গে ডাক্তার আমির খান উল্লেখ করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্যের বাইবেল বলে পরিচিত ল্যানসেটে প্রকাশিত একটি স্টাডির কথা। যেখানে বলা হয়েছে, চিনে ৯ জন প্রসূতিকে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, COVID-19 পজিটিভ প্রসূতিদের সন্তানের শরীরে করোনাভাইরাস নেই।
সংখ্যাটা সামান্য কিন্তু এতে আশার আলো দেখছেন ব্রিটেনের ডাক্তার আমির খান।
বাজারে ছড়িয়েছে, সন্তানসম্ভবাদের শরীরের অ্যামনিওটিক ফ্লুইডে করোনাভাইরাস থাকে। কিন্তু তারও এখনও পর্যন্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই ফ্লুইড ভ্রুণের উপর নরম আস্তরণ হয়ে থাকে যে কোনও আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য। পেটে থাকা সন্তানের শরীরেও ভাইরাসের উপস্থিতি মেলেনি। তবে এক্ষেত্রেও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে অন্তরায় পরীক্ষার সংখ্যা।
আরও জানতে ক্লিক করুন, করোনাভাইরাস চিনের ল্যাবরেটরিতে তৈরি, বিস্ফোরক দাবি ঘিরে চাঞ্চল্য
যদিও উপরের তথ্যগুলো থেকে প্রসূতি খানিকটা হলেও আশ্বস্ত হতে পারেন।
আক্রান্ত মা স্তন্যপান করালে কি করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে সন্তানের মধ্যে?
তা এখনও পরিষ্কার নয়। HIV স্তন্যপানের মধ্যে দিয়ে সন্তানের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এখনও সেকথা বলার সময় আসেনি।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে ডাক্তার আমির খানের পরামর্শ, যাঁরা শারীরিক অসুস্থতা বোধ করছেন না, তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই বেবিকে ব্রেস্ট ফিড করাতে থাকুন। তবে ব্রেস্ট ফিড করানোর আগে হাত ভালোমতো ধোয়া আছে তা নিশ্চিত করতে বলছেন তিনি। কিন্তু যাঁদের কাশি, জ্বর কিংবা শ্বাসকষ্টের সমস্যা চলছে, তাঁরা ব্রেস্ট পাম্পের মাধ্যমে দুধ বের করে রাখুন এবং অন্য পাত্রে তা সংগ্রহ করে খাওয়ান, পরামর্শ ডাক্তার খানের।
ডাক্তার আমির খান বলছেন, মায়ের বুকের দুধ সন্তানের রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি করে। তাই তা থামিয়ে দিলে শিশুর বিপদ হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রেও সাধারণ কতগুলো বিষয় মাথায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন ব্রিটিশ চিকিৎসক আমির খান।