Remote Employment হাল হকিকত | সঠিকভাবে বাড়ি থেকে কাজ করবেন কিভাবে?

প্যান্ডেমিক করোনাভাইরাস আক্রমণে বিশ্বের বিভিন্ন বড় সংস্থা work from home বা বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছেন কর্মীদের। মারণ রোগের সংক্রমণ এড়াতে এই সুবিধাজনক রাস্তা হিসেবে বেছে নিয়েছে তারা।

কিন্তু যাঁরা এই পন্থায় তেমন সড়গড় নন, তাঁরা পড়েছেন অসুবিধায়। তা ছাড়া  বহুজাতিক সংস্থা, আইটি সেক্টরে এমন বহু কাজ থাকে যা বাড়ি থেকে করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু করোনা হানার ভয়ে এক রকম বাধ্য হয়েই এই ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। এই ব্যবস্থায় যাঁরা সড়গড় নন, তাঁদের জন্য কয়েকটা জিনিস মনে রাখা প্রয়োজন।

চারটি ভুল, যা বাড়ি থেকে কাজ করতে অভ্যস্ত কর্মীরা (remote employee) ভুলেও করেন না।

১) পাজামা পরে বাড়িতে কাজ

ফর্মাল পোশাক পরার ঝক্কি বাড়ি থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে নেই, তাই বাড়িতে যে পোশাকে অভ্যস্ত তা পরেই কাজে বসে পড়েন অনেকে। কিন্তু এটা খারাপ অভ্যাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অফিস যাওয়ার সময় যেমন পোশাকে যান, বাড়িতে কাজের ক্ষেত্রেও তা পরে কাজ করা উচিত। না হলে কাজে একপ্রকার ‘ক্যাজুয়ালিটি’ আসে, যা ভীষণ খারাপ। তা ছাড়া প্রয়োজনে ভিডিয়ো কল করতে পারেন অফিসের বস কিংবা ক্লায়েন্টরা। তখন যদি আপনি পাজামা বা যে কোনও বাড়ির পোশাকে থাকেন, সেটা পেশাদারিত্বের লক্ষণ নয়। তাছাড়া ‘ওয়ার্ক মুড’ ও নষ্ট হতে পারে এর জন্য।

২) বিছানায় বা সোফায় এলিয়ে অফিসের কাজ

বাড়ি থেকে কাজ মানে এই নয় যে, আপনি ছুটিতে আছেন। তাই আরাম করে বিছানায় এলিয়ে কাজ করবেন না। কাজের প্রতি মনঃসংযোগ নষ্ট হতে পারে। তাই বাড়ির স্টাডি রুমে বসে অফিসের কাজ করুন।

৩) অফিসের সঙ্গে ক্রমাগত সম্পর্কে থাকা

বাড়ি থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে টিম ওয়ার্ক ভীষণ জরুরি। সময়ে ইমেলের জবাব দেওয়া, সুবিধা অসুবিধায় কলিগদের সঙ্গে যোগাযোগ করা ওয়ার্ক ফর্ম হোমের প্রয়োজনীয় বিষয়। নির্দিষ্ট অফিস আওয়ারে যেন আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে অফিস, সেটা মাথায় রাখতে হবে।

৪) স্বাস্থ্যে অবহেলা 

Work from home করতে গেলে ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি অনেকাংশে কমে যেতে পারে। কনফারেন্স রুমে যেতে হয় না মিটিং-এর জন্য, বসের ডাকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে হয় না। কিন্তু বাড়িতে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করতে গেলেও ঝিমুনি আসে। তা ছাড়া বাড়িতে থাকা মানে যা খুশি খেয়ে নেওয়াও ঠিক নয়। তাই মেল চেক, লেখা বা কাজের মধ্যে পায়চারি করুন। নিজেকে ওয়ার্ক মুডে রাখুন সব সময়।

work from home

সঠিকভাবে বাড়ি থেকে কাজ (Remote Workforce Management)

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপেল, অ্যামাজনের মতো বড়ো সংস্থা থেকে শুরু করে ছোট সংস্থা সবাই বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দিয়েছে কর্মীদের। আমেরিকা থেকে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ভারতেও চালু হয়েছে work from home. গত বুধবার হু এর তরফে করোনাভাইরাসকে প্যান্ডেমিক ঘোষণার পর অফিস, রাস্তায় ভিড় এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাগুলি। বাড়ি থেকে কাজের সময় যে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন-

১) সঠিক যোগাযোগ

বাড়ি থেকে কাজের ক্ষেত্রে সবসময় ওয়ার্ক মুডে রাখুন নিজেকে। ১০ মিনিট ব্রেক নিলেও সেটা ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়ে দিন বস বা সহকর্মীকে। একা একা দীর্ঘক্ষণ কাজ করলে তা ভালো ফল দেবে না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই যোগাযোগ রক্ষা ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ক্ষেত্রে বিশেষ জরুরি।

২) বাড়ি থেকে কাজ করলেও সময়টা মাথায় রাখতে হবে

বাড়ি থেকে কাজের ক্ষেত্রে যে মারাত্মক ভুলটা অনেকে করে বসেন, তা হল একটু বেশি রিলাক্স মুডে চলে যাওয়া। বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করতেই পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, টাইম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারটা। অফিসে যেমন করেন, ঠিক তেমনি সময়ে কাজ শেষ করুন।

৩) বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন ভাববেন না

দশটা-পাঁচটার অফিস যেতে হচ্ছে না,  তার উপর করোনাভাইরাসের কারণে বাড়ি থেকে বেরনোও একপ্রকার বন্ধ, তাই বলে নিজেকে বিচ্ছিন্ন ভাববেন না। প্রয়োজনে কলিগদের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলুন, মাঝেমধ্যে বাড়ির লোকের সঙ্গে টুকটাক বাক্যালাপ করুন। এতে একঘেয়েমি আসবে না কাজে।

করোনাভাইরাসের কারণে ‘Work from Home’ ব্যবস্থার প্রভাব ভারতে

বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ভারতের আইটি ফার্মগুলি সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে করোনাভাইরাসের প্রভাবে। প্রথমত তাদের কর্মীদের বিদেশ যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। তার উপর বেঙ্গালুরুর একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় বেশ কয়েকজনের দেহে করোনা মেলায় একসঙ্গে বহু কর্মী এখন কোয়ারেন্টাইনে। এ ছাড়া ভারতে সব জায়গায় এখনও remote employment এর সঠিক পরিকাঠামোই নেই বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

টিসিএস, উইপ্রো, এইচসিএলের মতো সংস্থা তাদের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার কথা বললেও নিজেরাই মেনে নিয়েছে, এমন অনেক কাজ আছে যা বাড়ি থেকে সম্ভব নয়। বিভিন্ন প্রজেক্টের জন্য কর্মীদের অফিস না গেলেও বিদেশ যাত্রা ভীষণ জরুরি। কিন্তু সার্বিক নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যের খাতিরে তা সম্ভবপর নয়। দ্য ইকনমিক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেঙ্গালুরুর এক নামী আইটি সংস্থা বলছে, তাদের এক চতুর্থাংশের কিছু বেশি কর্মী কেবল বাড়ি থেকে কাজ করতে পারেন। অন্যান্যদের অফিসে থাকা জরুরি। সে ক্ষেত্রে সাবান, স্যানিটাইজার, মাস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অফিসকে জীবাণুমুক্ত করা চলছে। এদিকে ওলা, উবরের মতো অ্যাপনির্ভর ক্যাব, যাদের অফিস টাইমে সাঙ্ঘাতিক চাহিদা, তারাও ধন্দে পড়েছে। স্যানিটাইজার বা অন্যান্য সাবধানতা অবলম্বন করলেও এঁরা অনেকেই রাস্তায় বেরতে চাইছেন না।

তাই ভারতের সার্বিক পরিকাঠামোও Remote Employment ক্ষেত্রে বেশ সমস্যার।

এদিকে বিভিন্ন রাজ্যে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পড়ুয়াদের পড়াশোনাতে যেমন ছেদ পড়েছে, তেমনি আরও এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন শিক্ষকরা। বিশেষ করে প্রাইভেট স্কুলে যাঁরা শিক্ষকতা করেন, কোথাও একমাস, কোথাও আবার দু’মাস স্কুল বন্ধ থাকার ফলে বেতন পাবেন কি না, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন। তা ছাড়া দেশের পরিবহণ থেকে ব্যবসার বাজার, যাঁদের বাড়ি থেকে কাজ করার কোনও উপায় নেই, তাঁরাও পড়েছেন প্রবল সংকটে। একদিকে করোনার ভয় অন্যদিকে, রুজিরোজগার, দুইই প্রশ্নের মুখে বিশাল অংশের মানুষের।

Comments are closed.