Corona Hotspot কী? কীভাবে চিহ্নিত হয় হটস্পট? কেন দরকার সম্পূর্ণ লকডাউন?

গত তিন মাসে করোনাভাইরাসের দাপটে ‘কোয়ারেন্টিন’, ‘লকডাউন’, ‘হটস্পট’ এর মতো বেশ কিছু ইংরেজি শব্দের সঙ্গে সবার ইতিমধ্যেই পরিচয় হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ২৪ লক্ষের বেশি মানুষ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৬৬ হাজারের। এই পরিস্থিতিতে Hotspots চিহ্নিত করে সেখানে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে সংক্রমণ রোধের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিভিন্ন দেশ।

 

করোনা হটস্পট কী? (What is Corona Hotspot)

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এলাকাভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে মানুষকে বাড়ির ভিতরে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। আর যে সব এলাকায় করোনার প্রকোপ ও আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় রয়েছে, সেই এলাকাকে বলা হচ্ছে corona hotspot. তাকে ‘রেড জোন’ চিহ্নিত করে অন্য এলাকা থেকে পৃথক রেখে সংক্রমণ রোধ করার চেষ্টা করছে প্রশাসন।

 

ভারতে Corona Hotspot!

সোমবার পর্যন্ত দেশে ১৭ হাজার করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়াতেই সংক্রমিতের সংখ্যার নিরিখে দেশের জেলাগুলিকে তিনটি জোনে ভাগ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেগুলি হল রেড, অরেঞ্জ এবং গ্রিন জোন।

রেড জোনে সংক্রমণের মাত্রা সর্বাধিক এবং মারাত্মকভাবে বেশি। অরেঞ্জ জোন হল যেখানে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়ছে অথবা, সংক্রমণের মাত্রা আগের চেয়ে হ্রাস পাচ্ছে। প্রতি সোমবার হটস্পট চিহ্নিতকরণের আপডেট দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

দেশের ৭৩৬ টি জেলার মধ্যে ১৭০ টি জেলাকে ‘রেড জোন’ বা corona hotspot হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই ১৭০ টি জেলায় সংক্রমণের মাত্রা সর্বাধিক। সেখানে কড়া নিষেধাজ্ঞা, সোশ্যাল ডিস্টান্সিং, র‍্যাপিড টেস্ট ইত্যাদির মাধ্যমে স্থিতি ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। এই ১০৭ টি জেলা যেমন করোনা হটস্পট তেমনি, ২০৭ টি জেলাকে করোনা নন-হটস্পট (non-hotspot) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই এলাকাগুলিতে সংক্রমণের মাত্রা সর্বনিম্ন।

 

দেশের করোনা হটস্পট

what is corona hotspot

 

গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়, দেশের প্রতি পাঁচটি জেলার মধ্যে একটি হল করোনা হটস্পট। কোভিড-১৯ এর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত ১৭০ টি জেলায় কম করে ১৫ টি করোনা পজিটিভ কেস ধরা পড়েছে এবং সেখানে আরও বেশি মানুষ সংক্রমণের শিকার বলে আশাঙ্কা করা হচ্ছে।

তাছাড়া ২০৭ টি ‘potential hotspots’ রয়েছে দেশে।

 

বিশ্বে করোনা হটস্পট

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে করোনার নতুন হটস্পট হিসেবে ধরছেন বিশেষজ্ঞরা। আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে, শুধু ১৯ মার্চ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজার মানুষ। যার মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর, এই চারটি দেশ মিলিয়ে আক্রান্ত ৮৭.৯ শতাংশ।

আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলির মতো সংক্রমণ না ছড়ালেও চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় যেভাবে সংক্রমণের ট্রেন্ড পাওয়া যাচ্ছে তা ভয়ের ব্যাপার হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যেমন সিঙ্গাপুরে গত দুই সপ্তাহে তাৎপর্যপূর্ণভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। বিশেষত পরিযায়ী শ্রমিক, বিদেশিদের মধ্যে করোনার লক্ষণ পাওয়া গিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। আবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়ায় গত মার্চ মাসে প্রথম করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেলেও, বর্তমানে সংক্রমণ মাত্রা বাড়ার আভাস দেওয়া হচ্ছে। চিনের পর সিঙ্গাপুরে করোনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গেলেও প্রশাসন তা প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি। কিন্তু সেখানেও নতুন করে সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে করোনার নতুন হটস্পট হিসেবে দেখা হচ্ছে।

 

Corona Hotspot বা রেড জোনকে কীভাবে গ্রিন জোনে আনা যাবে?

হটস্পট চিহ্নিত করার সঙ্গে সঙ্গেই কড়া নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সংক্রমণ রোধের চেষ্টা করতে হবে। যেমন অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাসিন্দাদের বাড়ি থেকে বেরনো বন্ধ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কড়া নজর দেওয়া ইত্যাদি করে যেতে হবে। এই কড়াকড়ির মধ্যে ১৪ দিন যদি আর কোনও নতুন কোনও সংক্রমিত সামনে না এলে সেই এলাকাকে অরেঞ্জ জোন বলা হবে।

পরবর্তী ২৮ দিন যদি সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে আর কোনও সংক্রমণের কেস না বেরোয়, তবেই তা গ্রিন জোন হিসেবে গণ্য হবে। সুতরাং, গত সপ্তাহ থেকে আগামী ২৮ দিন যদি দেশের ১৭০ টি জেলায় একজনও নতুন করোনা রোগী না পাওয়া যায়, তবেই তা গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত হবে।

 

ভারতের Corona Hotspot কোন কোন জেলাদেখুন একনজরে

অন্ধ্রপ্রদেশের কার্নুল, গান্তুর, প্রকাশম, কৃষ্ণা, ওয়াইএসআর, পূর্ব ও পশ্চিম গোদাবরী, চিতোর, বিশাখাপত্তনম, অনন্তপুর।

বিহার: সিওয়ান

ছত্তিসগড়: কোরবা

দিল্লি: দিল্লি সাউথ, সাউথ ইস্ট, শাহদারা, ওয়েস্ট, নর্থ, সেন্ট্রাল, নিউ দিল্লি এবং সাউথ ওয়েস্ট দিল্লি

চণ্ডীগড়: চণ্ডীগড়

গুজরাত: ভাদোদরা, আহমেদাবাদ, সুরাত, ভাবনগর এবং রাজকোট

হরিয়ানা: নু, গুরুগ্রাম, পালওয়াল এবং ফরিদাবাদ

জম্মুকাশ্মীর: শ্রীনগর, বান্দিপোরা, বারামুল্লা, জম্মু, উধমপুর এবং কুপওয়ারা।

কর্ণাটক: মাইসোর, বেলাগাভি, বেঙ্গালুরু

কেরল: কাসারগড়, পাথানামিত্থিতা, তিরুবনন্তপুরম, এর্নাকুলাম

মহারাষ্ট্র: থানে, নাগপুর, মুম্বই, পুণে, অউরঙ্গাবাদ, সাংলি, আহমেদনগর, নাসিক, বুলদানা

মধ্যপ্রদেশ: ইন্দোর, ভোপাল, উজ্জয়নী

পঞ্জাব: পাঠানকোট ও জলন্ধর

পশ্চিমবঙ্গ: উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া

রাজস্থান: যোধপুর, জয়পুর, টংক, কোটা, জয়সলমের

তামিলনাড়ু: তিরুচিরাপল্লি, চেন্নাই, তিরুনেলবেলি, এরোড, কোয়েম্বাটুর, তিরুভারুর, সালেম

উত্তরপ্রদেশ: মিরট, লখনউ, আগ্রা, গাজিয়াবাদ, গৌতমবুদ্ধনগর, মোরাদাবাদ, ফিরোজাবাদ

 

সংক্রমণ রোধে জনসাধারণ কী করবেন?

একসঙ্গে বেশি করে বাজার করে নেওয়া, যাতে প্রতিদিন বাজারে যেতে না হয়। প্রশাসনের নির্দেশ মেনে social distancing বজায় রাখা ইত্যাদি। হটস্পটগুলিতে প্রশাসনের তরফে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে, বাড়ি-বাড়ি স্যানিটাইজ করা হচ্ছে।

Comments are closed.