সংবাদমাধ্যমের ছাঁটাই ও বেতনে কাটছাঁটের বিরোধিতায় দেশের একাধিক সাংবাদিক ও সংবাদ কর্মী সংগঠন

করোনায় লকডাউনে বন্দি দেশে একাধিক সংবাদমাধ্যমে চলছে ছাঁটাই, কর্মীদের বেতনে কাটছাঁট, বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো। মঙ্গলবার এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া দিল প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (PA), ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস ইউনিয়ন (IJU), ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ জার্নালিস্টস (NUJ-I) এবং ওয়ার্কিং নিউজ ক্যামেরাম্যানস অ্যাসোসিয়েশন (WNCA)। করোনার জেরে উদ্ভুত পরিস্থিতে কর্মীদের চাকরির উপর তামাম সংবাদমাধ্যমগুলির পদক্ষেপের সমালোচনা করে তারা জানিয়েছে, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করুক সংস্থাগুলি, আলোচনা করা হোক, কিন্তু এভাবে কর্মীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চলবে না।
সাংবাদিক সংগঠনগুলি যৌথ প্রেস বিবৃতিতে জানায়, দেশব্যাপী লকডাউনের তৃতীয় সপ্তাহে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এবং বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড তাদের কর্মীদের বেতন কাটা শুরু করেছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া তাদের ‘সানডে ম্যাগাজিন’- এর পুরো টিমকে বাইরের দরজা দেখিয়েছে, নিউজ নেশন তাদের ইংরেজি ডিজিটালের ১৬ জন কর্মীকে পদচ্যুত করেছে, দ্য কুইন্ট নিউজ পোর্টাল প্রায় অর্ধেক কর্মীকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠিয়েছে। শুধু তাই নয়, একটি জাতীয় সংবাদসংস্থা কর্মীদের কেবল ৬০ শতাংশ বেতন দিচ্ছে, ইকনমিক টাইমস পানাচে ও বম্বে টাইমস সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে পানাচের ৫০ শতাংশ কর্মীকে বসিয়ে দিচ্ছে। এদিকে হিন্দুস্তান টাইমস মারাঠি ৩০ এপ্রিল থেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছে, খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাদের এডিটর- সহ সব কর্মীর চাকরি চলে যাওয়ার খবর মিলেছে। উর্দু দৈনিক নয়ি দুনিয়া এবং মাইসোরের এভিনিঙ্গার স্টার প্রকাশনা বন্ধ রেখেছে, আউটলুক-ও তাদের মুদ্রণ প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছে।
যখন প্রতিটি শিল্পক্ষেত্রকে উদ্ভুত সময়ে মানবিক হতে বলা হচ্ছে, লকডাউনের জন্য কর্মীদের পারিশ্রমিক কাটছাঁট করতে বারণ করা হচ্ছে, সেই সময়ে তামাম মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির এই ধরনের পদক্ষেপ অবিবেচকের মতো, জানাল সাংবাদিক সংগঠনগুলি।

মিডিয়া হাউসের প্রতি সাংবাদিক সংগঠনগুলির বার্তা

মিডিয়া হাউসগুলি এত বছর ধরে ব্যবসা বাড়িয়ে, আধুনীকিকরণ করে আচমকা আর্থিক ক্ষতির দোহাই দিয়ে কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ কোনওভাবে মেনে নেওয়া যায় না বলে বিবৃতিতে জানায় সাংবাদিক সংগঠনগুলি। তারা সংশ্লিষ্ট বিবৃতিতে দাবি করে, এটা বাস্তব যে গত কয়েক দশক ধরে মিডিয়া হাউসগুলি প্রচুর আর্থিক লাভ করলেও তাদের কর্মীদের উপর খরচ সেভাবে বাড়তে দেখা যায়নি। তাই যে সংবাদমাধ্যমগুলি এতদিন প্রচুর রোজগার করে এল, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে লোকসানের দায়ভার শুধুমাত্র কর্মীদের উপর চাপিয়ে দেওয়াটা অন্যায্য।
তারা আরও জানায়, অতিমারি করোনার জেরে মিডিয়া হাউসের মার্কেটিং ও রাজস্বের সমস্যা হচ্ছে, একথা যেমন সত্যি তেমনই, তার জন্য কেবল কর্মীদের ঘাড়ে খাঁড়া নামানোও সমর্থনযোগ্য নয়। সাংবাদিক সংগঠনগুলি জানায়, যদি প্রাচীন বড় সংবাদমাধ্যমগুলি এইভাবে কর্মী স্বার্থের কথা না ভাবে তাহলে অপেক্ষাকৃত ছোট ও মাঝারি মিডিয়া হাউসের কর্মীদের অবস্থা হতে পারে তা কল্পনা করাও কঠিন।

Comments are closed.