বিশ্বে প্রথম মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের ট্রায়াল, কাজে লাগতে পেরে গর্বিত, বলছেন সিয়াটলের জেনিফার

প্রতিষেধক ছাড়া বিশ্ববাসীর করোনা-মুক্তির উপায় নেই। আর তাই করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক বের করতে দুনিয়াজুড়ে জোরকদমে চলছে গবেষণা। এমনই এক গবেষণার পর পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হল এক মহিলার দেহে। যা সফল হলে করোনাভাইরাসের বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব থামিয়ে দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ওয়াশিংটনের সিয়াটেলের বাসিন্দা জেনিফার হলার প্রথম ব্যক্তি যাঁর শরীরে করোনার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হল। দুই সন্তানের মা জেনিফারের শরীরে এই প্রতিষেধক প্রয়োগের ফলাফল কী হবে তার দিকে তাকিয়ে দুনিয়ার গবেষকরা।

একটি টেক স্টার্টআপের অপারেশনস ম্যানেজার জেনিফার হলার ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষার জন্য ফেসবুকের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবী চাওয়া হয়েছিল। তখনই এই ঐতিহাসিক কাজে যোগ দিতে মনোস্থির করেন তিনি। সেল্ফ আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, এই সময়ে আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই অতিমারি ঠেকানোর জন্য আমার কিছুই করণীয় ছিল না। তারপর আমার সামনে এই সুযোগটি এলো। আমি ভাবলাম, হয়তো এভাবেই অতিমারি রোধে আমি সামান্য ভূমিকা নিতে পারি।

প্রসঙ্গত, সিয়াটেলের কাইজার পারম্যানেন্ট ওয়াশিংটন হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এই পরীক্ষায় ২৮ দিন অন্তর স্বেচ্ছসেবীদের উপর দু’মাত্রা করে ভ্যাকসিন প্রয়োগ হবে। তারপর একবছর তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রতিষেধক প্রয়োগের সুযোগ তিনি হাতছাড়া করতে চাননি বলে জানান জেনিফার। যদিও তাঁর এই সিদ্ধান্তে স্বামী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবরা রাজি ছিলেন না। তাঁরা চিন্তিত শরীরে ভ্যাকসিনের প্রভাব নিয়ে। এই মেডিক্যাল ট্রায়ালের জন্য জেনিফার ও তাঁর স্বামী তাঁদের পুত্র সন্তানের উপর কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার অনুমতি দেন। কিন্তু সে সবের থেকে জেনিফারের উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ অনেক বেশি আশঙ্কার। কারণ, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের বলেই দেওয়া হয়, এরপরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হলে তার প্রভাব আগে তাদের উপর পড়তে পারে। কারণ এই প্রথম মানব শরীরে করোনার প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তীব্র আশঙ্কায় জেনিফারের পরিবার। যদিও জেনিফার নিজে ওসব নিয়ে চিন্তিত নন। বরং একাজ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত বলে ভাবছেন। তাঁর কথায়, এই ভ্যাকসিনে বহু আশঙ্কা আছে জানি। কিন্তু আমি ইতিবাচকভাবে ভাবছি, যদি সত্যিই সফল হয়, তা হলে তা হবে একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার।

গত ১৬ মার্চ জেনিফার জানতে পারেন, তিনিই বিশ্বের প্রথম, যাঁর উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হল। পরের দিনগুলো কেমন ছিল?

তিনি জানাচ্ছেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রথম দিন শরীরের তাপমাত্রা বেশ বেড়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় দিনে শরীরে বিশেষ করে হাতে খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল। কিন্তু পরের দিন থেকেই সব স্বাভাবিক হয়ে যায়। আর ক’দিন বাদেই দ্বিতীয় বার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে তাঁর উপর। জেনিফার  জানান, ১৬ বছরের পুত্র হেডেন এবং ১৩ বছরের কন্যা এলিসন মায়ের এই দুনিয়াজোড়া পরিচিতিতে দারুণ খুশি। আর জেনিফারের কথায়, এই মহান কাজে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে আমি গর্বিত।

Comments are closed.