প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে দু’ চাকায় দুনিয়াদারি কলকাতার দেবাশিসের, দেখুন ভিডিও।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কেড়ে নিতে পারেনি অদম্য জীবনী শক্তিকে। তাই ডান পা পোলিও আক্রান্ত হওয়ার পরেও আজ ২০ বছর ধরে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের টানে বাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সল্টলেকের বাসিন্দা দেবাশিস শ। কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন প্রায় গোটা দেশ। তবে মধ্য পঞ্চাশের দেবাশিস আপাতত ব্যস্ত তাঁর নতুন অভিযান নিয়ে। বিদেশ থেকে আনিয়েছেন ডাবলডেকার সাইকেল। অর্থাৎ একটি সাইকেল ‘দু’ জনে চালাতে পারবেন। যার পোশাকি নাম, ‘ট্যানডেম সাইকেল’। দেবাশিসবাবুর ভাই জয়দেব শ দাদার এই অভিযানের সঙ্গী। ডাবল ডেকার সাইকেল নিয়ে প্রথম অভিযান হবে মাইথন। তবে তার আগে চলছে নিয়মিত  কঠোর অনুশীলন।

বাড়ির ছোট্ট ছেলেটা তখন সবে টলোমলো পায়ে হাঁটতে শিখেছে। বয়স মাত্র ১৮ মাস। অন্যান্যদের মতই বাড়ির শিশু পুত্রটিকে নিয়ে বাবা-মায়ের চোখে অনেক স্বপ্ন। কিন্তু হঠাৎ একদিন ধুম জ্বর। চিকিৎসকরা জানালেন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়েছে শিশুটি। একই সঙ্গে পোলিও রোগের আক্রমণ কেড়ে নিল হাঁটা-চলার ক্ষমতা। চিকিৎসকরা জানালেন, ডান পা সম্পূর্ণভাবে প্যারালিসিস। বাঁ পা’য় সেইভাবে জোর নেই। বাড়ির বড় ছেলের এই পরিস্থিতি বাবা-মায়ের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন ছিল, কিন্ত পরাজয় স্বীকার করতে নারাজ ছিলেন বাবা-মা। অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম পরিচিত মুখ দেবাশিস শ। কিন্তু যেখানে পোলিওতে দু’টি পা প্রায় পঙ্গু। সেখান থেকে কীভাবে ‘বাইক মাউন্টেনিয়ারিং’ মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে অংশ নেওয়ার মত অসম্ভব সম্ভব হল? দেবাশিসবাবুর কথায়, সমবয়সী ছেলেরা যখন মাঠে ফুটবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াত, তিনি তখন বাবার সাইকেল কমজোরি বাঁ পা দিয়ে চালানোর চেষ্টা করতেন। আঘাত পেয়েছেন, যন্ত্রণা পেয়েছেন কিন্তু উদ্যম হারাননি। এইভাবেই শিখে নিয়েছিলেন সাইকেলের পাশাপাশি বাইক চালানো। দেবাশিসবাবুর নিজের কথায় ‘কখনও নিজেকে মনে হয়নি প্রতিবন্ধী, বরং মাথায় চেপে বসেছিল অ্যাডভেঞ্চারের নেশা। কিছু করে দেখানোর তাগিদ বরাবর তাড়িয়ে বেড়াত’। ২০০০ সালে কলকাতা থেকে কন্যাকুমারী প্রথম বাইক র‍্যালি দিয়ে শুরু। এরপর পরবর্তী ১৮ বছরে শুধুই এগিয়ে যাওয়ার পালা। বাইক নিয়ে গিয়েছেন লে- লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশ। দেশের সীমা পেরিয়ে পা রেখেছেন নেপাল এবং ভুটানেও। অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তাই অভিযানের পথে বাইক বিকল হলে নিজেই সেই সমস্যা সামলেছেন।
দেশে ক্রিকেট, ফুটবল নিয়ে যতটা উন্মাদনা ততটা নেই অন্য খেলায়। অ্যাডভেঞ্চারের স্পোর্টসের মত খেলা তাই আজও ব্রাত্য থেকে গেছে। স্পনসর পাওয়া যায় না। তবুও অভিযানের নেশা তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। তাই পরিবারের আপত্তি উপেক্ষা করে আজও বেরিয়ে পড়েন। আপাতত ডাবলডেকার সাইকেল ট্যানডেম নিয়ে তাই অভিযান সফল করতে মরিয়া প্রতিবন্ধী নয়, বরং প্রতিস্পর্ধী দেবাশিস শ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.