সারা সপ্তাহের ব্যস্ততার মাঝে অনেকেই চান শহরের কোলাহল থেকে দূরে সবুজের মাঝে গ্রাম্য পরিবেশে তাঁদের অবসর কাটাতে। কিন্তু এই অবসর যাপনের সঙ্গে যদি যোগ হয় ইতিহাসের ছোঁয়া, বনেদিয়ানা। তাহলে তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ হয় বৈকি। আজকের প্রতিবেদনে TheBengalStory আপনাদের পূর্ব মেদিনীপুরের তেমনই এক রাজবাড়ির সন্ধান দেবে।
![](https://thebengalstory.com/wp-content/uploads/2021/12/FotoJet-2021-12-16T162514-compressed-300x220.jpg)
উড়িষ্যার বাসিন্দা মুরারিমোহন দাস মহাপাত্র ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের একজন উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী। তাঁর কাজে খুশি হয়ে মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব পঁচেটগড় এবং সংলগ্ন বিস্তৃত এলাকার জায়গীর দেন মুরারীমোহনকে। এই পঁচেটগড় বর্তমানে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর ব্লকে অবস্থিত। কার্যত মন্দিরময় গ্রাম পঁচেটগড়। গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ৩৫০ বছরের ইতিহাসের নানান নিদর্শন। পঁচেটগড় রাজবাড়ির ইতিহাস এবং বর্তমান উদ্যোগ নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বললেন এই রাজবংশের সদস্য মুরারিমোহন দাস মহাপাত্রের পঞ্চম বংশধর ফাল্গুনী দাস মহাপাত্র।
![](https://thebengalstory.com/wp-content/uploads/2021/12/IMG_1406-300x157.jpg)
ফাল্গুনীবাবু জানালেন, মুরারিমোহন দাস মহাপাত্র পঁচেটগড় রাজবাড়ির পত্তন করেন। এই বাড়ির সঙ্গে ভারতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতেরও অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বিষ্ণুপুরের রাজার কাছ থেকে এই পঁচেটগড় রাজ্ দরবারে আসেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ যদু ভট্ট। জানা যায়, এই যদু ভট্টর ছিলেন বালক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গীত শিক্ষক। পাশাপাশি সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চ্যাটার্জির বন্দেমাতরমের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে যদু ভট্টের নাম। এছাড়াও এই বাড়িরই এক সদস্য যাদবেন্দ্র ছিলেন তৎকালীন ভারতে বিশিষ্ট সেতার বাদক। বর্তমানে তাঁর ব্যবহৃত একটি বাদ্যযন্ত্র ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।
![](https://thebengalstory.com/wp-content/uploads/2021/12/23-300x200.jpg)
মহাপাত্ররা জন্মগত ভাবে ক্ষত্রিয় তবে পরবর্তীকালে তাঁরা বৈষ্ণব হন। ফাল্গুনী বাবু জানালেন, বংশের পরবর্তী পুরুষরা যুদ্ধ ছেড়ে শিক্ষা, সংগীত, নাটক ধর্ম চর্চায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এই বংশেরই এক পুরুষ বজেন্দ্রমোহন দাস মহাপাত্র বাড়ির অন্দরমহলে একটি নাট্য মঞ্চ তৈরী করেছিলেন। যা বাংলার প্রথম নাট্য মঞ্চ বলে দাবি করলেন ফাল্গুনী বাবু।
কথায় কথায় তিনি জানালেন, বর্তমানে বাড়ির রক্ষনাবেক্ষন করতে এবং এরকম এক ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে রাজবাড়ীর সদস্যদের উদ্যোগে পর্যটকদের জন্য হোমস্টে চালু করা হয়েছে। শতাধিক বছর পুরোনো রাজবাড়িতেই রাত কাটাতে পারবেন। রাজবাড়িতে রাত্রি যাপনের পাশাপাশি গ্রামে অজস্র প্রাচীন মন্দির দেখতে পারবেন। এছাড়াও কাছাকাছির মধ্যে রয়েছে, মোঘলমারি, দাঁতনের টেরাকোটা মন্দির, পটাশপুরের বিখ্যাত মাদুরকাটি শিল্প, অমরসির তাঁত শিল্প।
কলকাতা থেকে ১৮০ কিমি, দিঘার খুব কাছেই পঁচেটগড়। ফাল্গুনীবাবু জানলেন, পঁচেটগড় রাজবাড়িতে খাওয়াদাওয়া সমেত একদিন থাকতে একজনের খরচ পড়বে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা। http://www.panchetgarh.com/ ওয়েবসাইটে গিয়ে বুকিং করতে পারবেন, এছাড়াও বুকিং সংক্রন্ত যাবতীয় তথ্যের জন্য 7044943794 নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।
![](https://thebengalstory.com/wp-content/uploads/2021/12/2-300x225.jpg)
(পঁচেটগড় রাজবাড়ীর ওয়েবসাইট থেকে ছবিগুলি সংগৃহীত)
Comments are closed.