E-learning -এ কতটা তৈরি দেশ? কীভাবে এগোবে পড়াশোনা?

টেকনোলজির যুগে ক্লাসে গিয়ে পাঠ নেওয়া আস্তে আস্তে কমছিল বটে। কিন্তু করোনাভাইরাস যেন একধাক্কায় শ্রেণিকক্ষে গিয়ে পাঠ নেওয়া চুকিয়ে দিচ্ছে। স্কুলের কচিকাঁচা থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, সবাইকেই এখন যেতে হচ্ছে ই-লার্নিং এর দিকে। কিন্তু এর জন্য কতটা প্রস্তুত দেশের শিক্ষাব্যবস্থা? পরিকাঠামোই বা কী রয়েছে?

 

লার্নিং কী? (What is E-learning)

online education in India

 

করোনা পরিস্থিতি প্রায় সবাইকে আজ বুঝিয়ে দিয়েছে, কী এই ই-লার্নিং, তাও একবার বলে রাখা দরকার। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি ক্লাস করা কিংবা কোনো বিষয়ের উপর জ্ঞানার্জন করার পদ্ধতিই e-learning.

বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে ই-লার্নিংয়ের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে ঘরে বসে সুবিধাজনক সময়ে পছন্দমতো বিষয়ে পড়াশোনার মধ্যে দিয়ে নিজেকে দক্ষ করে তোলা সম্ভব। এখানে ধরাবাঁধা ক্লাসের ব্যাপার নেই, তাই সুবিধামতো সময়ে শেখার কাজটি চালিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে।

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার থেকে অনেক দিক দিয়েই আলাদা online education ব্যবস্থা। সাধারণ মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী কোনও বিষয়ের উপর যখন পড়াশোনা করেন, তখন অন্য বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ কম থাকে। তবে e-learning এ পুরোই ব্যতিক্রম। অন্যান্য পড়াশোনা কিংবা কাজের ফাঁকেও এখানে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হল কোথাও গিয়ে ক্লাস করতে হয় না। নিজের ঘরে বসেই ক্লাস করা সম্ভব।

 

করোনার থাবা এবং E-learning

গোটা বিশ্ব করোনার থাবায় ম্রিয়মাণ হলেও মানুষকে সামনের দিকে এগোতেই হবে। তাই  শিক্ষাও এখন ঘরে বসেই নেওয়ার চেষ্টা চলছে। সেটাই করছে ই-লার্নিং। অর্থাৎ, ই-লার্নিং হল এক ধরনের দূর-শিক্ষণ (distance learning) পদ্ধতি যা বর্তমানে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং রক্ষার্থে বিশেষ ভূমিকা নিচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতেও নিতে চলেছে। ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষক ও পড়ুয়া নিজেদের ঘরে বসে ক্লাস করছেন। কম্পিউটার, মোবাইল, ভিডিও, টেলিভিশন, অ্যাপ, ভিডিও কনফারেন্সিং, ওয়েবসাইট, ই-মেইল, সফটওয়্যার ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষক ও পড়ুয়া একে অপরের থেকে বহুদূরে থেকে যে শিক্ষাব্যবস্থায় অংশ নিচ্ছেন তাই হল ই-লার্নিং। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকে e-learning -এর মাধ্যমে পড়াশোনা সম্পন্ন করা যায় তেমনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজের খেয়ালখুশি মতো যে কোনও ওয়েবসাইট বা ভিডিও দেখে যে কোনও কোর্স করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। তবে এতদিন দ্বিতীয় প্রকারের ই-লার্নিং ব্যবস্থার চল ভারতে বেশি ছিল। মুষ্টিমেয় কিছু স্কুল-কলেজ ছাড়া অনলাইনে পাঠ নেওয়া অধরাই ছিল বেশিরভাগ পড়ুয়ার। কিন্তু সবাই যাতে ই-লার্নিং এর ছাতার তলায় আসে তা একপ্রকার বাধ্য করল এই করোনাভাইরাস।

 

দেশে লার্নিং ব্যবস্থা জটিলতা (E-learning in India)

online class

 

লকডাউনের পর সরকারি ও বেসরকারি স্কুল থেকে টিউশন, কোচিং ক্লাস সবই এখন ভিডিও কনফারেন্সে হচ্ছে। আচমকা শিক্ষাদানের প্রক্রিয়ায় এই পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষক ও পড়ুয়া উভয়কেই কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে। বিশেষত যে শিক্ষকেরা অতটা প্রযুক্তিগতভাবে সড়গড় নন, তাঁরা বেশ সমস্যাতেই পড়েছেন। অপরদিকে, সব পড়ুয়াদের একটা বড় অংশের কাছে ভিডিও কনফারিন্সং এ অংশ নেওয়ার মতো কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের অভাব আছে।

অনেক অভিভাবকই তো এই বিষয়ে একেবারে অন্ধকারে। কিন্তু করোনা পরবর্তী যে ‘নিউ নর্মাল’-এর দিকে যাচ্ছে তাতে online education ছাড়া উপায়ও নেই। অসুবিধে বহু, যেমন, একবার অনলাইনে ক্লাস করার পর হোয়াটসঅ্যাপে ছাত্রছাত্রীদের যে নোট পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে তা বুঝতে অসুবিধে হলে শিক্ষকদের কাছে হাতে কলমে সেই ডাউট ক্লিয়ার করার সুবিধা থাকছে না। ভারতে এই মুহূর্তে ৩২০ মিলিয়ন ই-লার্নার রয়েছেন। কিন্তু এঁদের সকলের কাছে কী এই শিক্ষা মাধ্যমের সুবিধা নেওয়ার মতো উপকরণ মজুত? গ্রামাঞ্চলে যেখানে এখনও মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছয়নি সেখানকার পড়ুয়ারা কী করবেন?

২০১৭-১৮ সালের ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অনুযায়ী, গ্রামীণ ভারতের ১৫ শতাংশের কম পরিবারে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান ৪২ শতাংশ। আর এদের কতজনই বা ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করতে জানেন? সমীক্ষা বলছে, পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে ১৩ শতাংশ গ্রামীণ মানুষ ইন্টারনেট, কম্পিউটারের বিষয়ে সড়্গড়। শুধু মহিলাদের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান সাড়ে আট শতাংশ।

দরিদ্রদের স্মার্টফোন বা কম্পিউটার কেনার সামর্থ্যই নেই। তাহলে এই পরিবারের পড়ুয়াদের কী হবে? সরকার, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অবশ্য এদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু এই নয়া মাধ্যমে পড়াশোনায় তাদের সড়গড় হতে আরও কিছুদিন সময় লেগে যাবে এ কথা বলাই যায়।

 

নয়া শিক্ষা ব্যবস্থার ইঙ্গিত কেন্দ্রের

আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ৫০ শতাংশ হোম ক্লাসের পরিকল্পনা নিচ্ছে মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। অতিমারি করোনাভাইরাসের দাপটে অন্তত জুন মাস পর্যন্ত স্কুল বন্ধ। কোভিড পরিস্থিতিতে আগের মতো ২২০ দিনের ওয়ার্কিং ডে এবং ১,৩২০ ঘণ্টার স্কুলে বসে ক্লাসের ব্যবস্থা থাকবে না। সম্প্রতি ইকনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে স্কুলের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে বড় বদল আনতে চলেছে কেন্দ্র। সেই সংক্রান্ত খসড়া কিছুদিনের মধ্যেই প্রকাশ্যে আসবে। সরকারি সূত্রে খবর, স্কুল এবং বাড়ি থেকে online class মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে নয়া ক্লাস মডেল।

কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক প্রস্তাবিত এই মডেলে স্কুলে গিয়ে পড়াশোনার সময়কে কমিয়ে আনা হচ্ছে। আগের মতো ২২০ দিনের ওয়ার্কিং ডে এবং ১,৩২০ ঘণ্টার স্কুলে বসে ক্লাস করার দিন শেষ হতে চলেছে। স্কুলে গিয়ে শিক্ষা নেওয়ার সময় ধার্য হচ্ছে ১০০ দিন এবং ৬০০ ঘন্টা। আর ১০০ দিন এবং ৬০০ ঘণ্টার ক্লাস হবে অনলাইনে। অর্থাৎ, স্কুলে গিয়ে ক্লাস করা এবং বাড়ি থেকে ক্লাসের সময় ভাগ করা হচ্ছে সমান অনুপাতে। বাকি ১২০ ঘণ্টা বা ২০ দিনের (মাসে দু’ দিন করে গড়ে) ক্লাস ছেড়ে রাখা হচ্ছে পড়ুয়াদের মানসিক সুস্থতা পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য। এই কাউন্সেলিং এর কাজটি ঘরেও হতে পারে আবার স্কুলেও করতে পারেন চিকিৎসকরা।

যে পড়ুয়ারা online class করতে অসমর্থ তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে তা নিয়েও আলোচনা চলছে বলে সূত্রের খবর।

 

ক্লাসে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখার জন্য পড়ুয়াদের পর্যায়ক্রমে ক্লাসে উপস্থিত রাখার চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্র। কিন্তু সেক্ষেত্রে স্কুলের উপস্থিতি কেমন হবে?

 e-learning

 

স্কুলে উপস্থিতির নয়া মডেল

কেন্দ্রের নয়া প্রস্তাব, একটি ক্লাসে একই সময়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার হবে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের ভিতরে। ডবল শিফটেও ক্লাস হতে পারে।

প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের সপ্তাহে মাত্র দু’দিন স্কুলে যেতে হবে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়াদের সপ্তাহে দুই থেকে চার দিন এবং নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ৪ থেকে ৫ দিন ক্লাস করতে হবে। তাছাড়া কমে যাচ্ছে এক একটি ক্লাসের সময়ের মেয়াদ। ৪৫ মিনিটের পিরিয়ড কমে ৩০ মিনিটের করা হচ্ছে। কিছু বড় পাঠ্যক্রমের ক্লাস নেওয়ার জন্য তৈরি হবে আলাদা টাইম টেবিল। অসুস্থতার কারণে ক্লাসে অনুপস্থিতির জন্য অভিভাবকের অনুমতিক্রমে থাকবে online classe -এর ব্যবস্থা থাকবে।

তবে এই e-learning -এর ব্যবস্থা সঠিকভাবে রূপায়ণ করতে গেলে বড় রকমের সংস্কার আনতে হবে শিক্ষা ব্যবস্থায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই পথে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনও রাস্তাও নেই। তাই অদূর ভবিষ্যতে খাতা-পেন-পেন্সিলের প্রয়োজন ফুরোবে পড়ুয়াদের। ক্লাস করা থেকে পরীক্ষা সবেতেই তাদের হাতছানি দিচ্ছে ই-দুনিয়া।

Comments are closed.