Corona: কলকাতা নিয়ে ফেক নিউজ রিট্যুইট তথাগত রায়ের! দিল্লি থেকে মেক্সিকো-স্পেন, মহামারির মতো ছড়াচ্ছে ভুয়ো খবর
দুনিয়া থমকে দাঁড়িয়ে এক অভূতপূর্ব সংকটের সামনে। করোনাভাইরাস সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে মানব সভ্যতাকেই। আর সেই চ্যালেঞ্জ সামলাতে নাজেহাল অবস্থা দুনিয়ার প্রত্যেকটি সরকার, প্রশাসন এবং অতি অবশ্যই সাধারণ মানুষের। পৃথিবীজুড়ে চলছে মৃত্যুমিছিল। কোথায় গিয়ে থামবে এই করোনার প্রভাব, উত্তরটা অজানা মানব সভ্যতার।
আর এই করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি, দুনিয়াজুড়ে প্রশাসনের সামনে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেক নিউজ বা ভুয়ো প্রচার। করোনার মতো ভয়ংকর মহামারী নিয়েও থেমে নেই ফেক নিউজের রমরমা! কলকাতা থেকে দিল্লি, স্পেন থেকে মেক্সিকো, দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গার পুরনো ছবিকে করোনার সঙ্গে লিঙ্ক করে ফেক নিউজের প্রচার চলছে দুনিয়াজুড়ে।
ভুয়ো বা পুরনো ছবি, ভিডিও বা খবরে মানুষ উত্তেজিত হচ্ছেন। তার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে বিভিন্নভাবে। সরকার কড়া হাতে ফেক নিউজ মোকাবিলার চেষ্টা করছে। সংবাদমাধ্যমকে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেছে শীর্ষ আদালতও। কিন্তু ফেক নিউজ আটকানো যাচ্ছে না।
কীভাবে ছড়াচ্ছে ফেক নিউজ?
ভারতে ফেক নিউজের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলেছে AltNews। AltNews এর ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যায়, কী বিপুল হারে ফেক নিউজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিশ্বে। সম্প্রতি ভারতে করোনাভাইরাসে লেগেছে সাম্প্রদায়িক রংও।
কলকাতায় লকডাউন মানা হচ্ছে না বলে ২৭ মার্চ থেকে ৩ টি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসছে। অনেকেই দেখেছেন সেই ছবি। ৩ টি জায়গার ছবি দিয়ে দাবি করা হয়েছিল, কলকাতায় কেউ লকডাউন মানছেন না। লক্ষ্য একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়। AltNews এর প্রতিবেদন বলছে, জনৈক সৌমিত্র নন্দী ২৭ তারিখ প্রথম এই ছবিগুলো ফেসবুকে পোস্ট করেন। সেই পোস্ট দেড়হাজার শেয়ার হয়। সেই ছবি দিয়ে একটি পোস্টকে রিট্যুইট করেন মেঘালয়ের রাজ্যপাল তথাগত রায়ও। অথচ AltNews এর প্রতিবেদন বলছে, ছবিগুলোর সঙ্গে বর্তমান কলকাতার দূরদূরান্তে কোনও সম্পর্ক নেই। পাকিস্তানের দুটি ছবি এবং গত বছরের জুলাই মাসে শিয়ালদহ ফ্লাইওভার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ থাকা সংক্রান্ত খবরে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া যে ছবি ব্যবহার করেছিল, সেই ছবিকে কলকাতায় লকডাউন মানা হচ্ছে না বলে দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছিল। এর অর্থ হল, ফেক নিউজের ফাঁদে ধরা পড়ছেন রাজ্যপালের মতো পদে থাকা ব্যক্তিও।
AltNews এর প্রতিবেদন বলছে, অনিতা সাক্সেনা নামে এক মহিলা ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করেন, দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন মসজিদে মানুষ গণহারে হাঁচি দিয়ে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছেন। পোস্টটি ১৭০০ শেয়ার হয়েছে। ভিডিওটি দেখেছেন ২৪ হাজার মানুষ। AltNews ফ্যাক্ট চেক করে দেখিয়েছে, ভিডিওটি আসলে বহু পুরনো এবং ভারতের সঙ্গে তার কোনও যোগই নেই। অনিতা সাক্সেনা যাকে হাঁচি বলে দাবি করেছেন, তা আসলে সুফি ধারায় ঈশ্বরকে ডাকার একটি রেওয়াজ।
আমেরিকাতে একটি হাই রাইজ বিল্ডিং থেকে এক ব্যক্তির ঝাঁপ দেওয়ার ছবি ইদানীং ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, পরিবারের সবার করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে, তাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যা। ভারতের নামী সংবাদমাধ্যমের এক জনপ্রিয় সাংবাদিক নিজে এই ট্যুইট করেন। AltNews সেই মিথ্যেরও পর্দাফাঁস করেছে। প্রতিবেদন বলছে, ভিডিওটি ২০১৫ সালের। তার সঙ্গে করোনাভাইরাসের কোনও সম্পর্ক নেই।
একটা জিনিস পরিষ্কার, করোনাভাইরাসের তাণ্ডবের মধ্যে ঘরবন্দি মানুষকে এভাবেই ভুয়ো কিংবা পুরনো ছবি বা ভিডিও দেখিয়ে উত্তেজিত করে তোলার প্রয়াস চলছে। তার পিছনে কখনও রয়েছে রাজনীতি, কখনও সাম্প্রদায়িকতা। তা আটকাতে কড়া মনোভাব নিয়েছে সরকার। কিন্তু তাতে কী? করোনার মতো প্যানডেমিক রোধে যখন দিন-রাত এক করছে সরকার, জীবন বিপন্ন করে কাজ করছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মীরা, রাস্তায় দিন কাটাচ্ছেন পুলিশ কর্মীরা, তখন দুনিয়াজুড়ে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে ফেক নিউজের জাল!