তাপপ্রবাহ শুরু হতে চলেছে রাজ্য সহ দেশে! কমবে করোনার দাপট? ৩-১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে করোনার প্রকোপ সর্বোচ্চ

রাজ্যে ক্রমশ বাড়ছে গরম। চলতি লকডাউনের মধ্যে কিছুদিনের মধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। অন্যান্য রাজ্যেও বাড়ছে গরম। এতে কিছুটা কি কমতে পারে করোনা সংক্রমণের হার? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও হ্রাসের সঙ্গে করোনার সংক্রমণের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। কিছুদিন আগেই ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (MIT) গবেষকরা দাবি করেছিলেন, তাপমাত্রা বাড়লে কোভিড-১৯ সংক্রমণ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে, এমনটা বলা যায় না। তবে সংক্রমণের হার কিছুটা হলেও কমবে।

The Quint নিউজ পোর্টালে গত ৩১ মার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে একই মত দিচ্ছেন বিশিষ্ট অর্থনীবিদ মোহন গুরুস্বামী। তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (MIT) ও গ্লোবাল ভাইরাস নেটওয়ার্ক (GVN) এর মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক গবেষণা উদ্ধৃত করে লিখেছেন, ৩ থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে এবং বাতাসে ৫১ থেকে ৭৯ শতাংশ আর্দ্রতার মধ্যে করোনার দাপট বেশি। গুরুস্বামীর মতে, বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ঠান্ডা আবহাওয়ার অঞ্চলে করোনা দ্রুত ছড়ায়।
এর মধ্যেই সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছোবে। এপ্রিল-মে এবং জুন, এই তিন মাসের পূর্বাভাসে এই ইঙ্গিত দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলি কোর হিট ওয়েভ জোনের মধ্যে পড়ছে। ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ফ্রিকোয়েন্সি বাড়তে পারে। গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা অনেকটা বাড়তে পারে রাজস্থান এবং গুজরাতে। দেশ ও রাজ্যে দিন দিন যেভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে কি খানিক স্বস্তি আনবে আবহাওয়ার এই বদল?
হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখন ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে ১ ডিগ্রি বেশি। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ৮৫ শতাংশ। দিল্লির মৌসম ভবন দেশে সার্বিক গ্রীষ্মের পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছে। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, রাজ্যের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম বর্ধমানের মতো পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলি এমনিতেই তাপপ্রবাহপ্রবণ বা তাপপ্রবাহের ‘কোর’ এলাকা বলে চিহ্নিত। এবার ওই জেলাগুলিতে তাপপ্রবাহ আরও বাড়তে পারে। আগামী কয়েকদিনে অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রা চড়বে বলে পূর্বাভাস।

 

তাপমাত্রার তারতম্যে কি করোনার সংক্রমণ কমতে পারে? 

গবেষক ও বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে একমত নন, তবে কেউই এই তত্ত্ব একেবারে উড়িয়েও দিচ্ছে না। খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানাচ্ছে, তাপমাত্রার কারণে করোনার প্রাদুর্ভাবের হেরফের হবে, এমন বিশ্বাসের কারণ নেই। যদিও তারপরে তারা জানাচ্ছে, বিষয়টি গবেষণা সাপেক্ষ। তাই বুঝতে সময় লাগবে।
ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ডের ভাইরোলজিস্ট মহম্মদ সাজাদি সংবাদমাধ্যমকে জানান, তথ্য কিন্তু বলছে, যে সব অঞ্চলে গরম বেশি সেখানে করোনার প্রকোপ কম। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও কয়েক সপ্তাহ আগে একই কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু আমেরিকায় গরম বেড়েছে, সেই সঙ্গে সংক্রমণও তো প্রচুর বেড়ে গিয়েছে। তাহলে?
এমআইটির গবেষক ডাঃ কাসিম বুখারির মত, একই সময়ে আমেরিকার ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্ক, কলোরাডোর থেকে আরিজোনা, ফ্লোরিডা, টেক্সাসে করোনা সংক্রমণ কম হয়েছে উষ্ণতার পার্থক্যের জন্যই।
ঠিক একই দাবি করেছেন স্পেন ও ফিনল্যান্ডের একদল গবেষক। তাঁদের একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে সক্রিয় থাকে করোনাভাইরাস। চিনের বিহং ও সিঙ্ঘুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদেরও দাবি, চিনে ১০০ টির বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়া করোনা সংক্রমণের হার তাপমাত্রা আর্দ্রতার কারণে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন হয়েছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজির অধ্যাপক মেয়ার লিপ্সিচ বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক ভাইরাসেরই প্রভাব কমতে পারে। তবে তিনি নিশ্চিত নন যে, উষ্ণতা বাড়লেই করোনার প্রকোপ কমবে। আবার ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট আঙ্গলিয়ার অধ্যাপক পল হান্টার জানাচ্ছেন, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় যেখানে করোনার ভয়ংকর প্রভাব পড়েছে, সেখানে আফ্রিকায় কোভিড-১৯ এর তেমন প্রভাবই পড়েনি। তার বড় কারণ হল তাপমাত্রা।
বিশেষজ্ঞদের এই তর্ক-বিতর্কের মধ্যে সাধারণ মানুষ অবশ্য করোনার কোপের চেয়ে তাপপ্রবাহ সহ্য করতে রাজি। অনেকেই আশা করছেন, দেশে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনার প্রকোপ কমবে।

Comments are closed.