মহামন্দার পর এমন পরিস্থিতি দেখেনি মানব সভ্যতা, আশঙ্কা IMF এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথের, বাঁচতে পারে ভারত, চিন

দ্য গ্রেট লকডাউন।

বর্তমান পরিস্থিতিকে এই নামেই ডাকতে পারেন, যা বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধিকে নাটকীয়ভাবে সংকুচিত করেছে। মঙ্গলবার ঘোষণা করল ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড বা IMF।
মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুক। সেই পূর্বাভাস রিপোর্টের মুখবন্ধে আইএমএফের মুখ্য অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ লিখেছেন, এটা কার্যত অনিবার্য যে বিশ্ববাসী এমন অবস্থার মুখে পড়তে চলেছেন, যা মহামন্দার পর আর মানব সভ্যতা দেখেনি। বর্তমান পরিস্থিতি এক দশক আগের অর্থনৈতিক দুরাবস্থাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে।
সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে করোনা প্রবল ঝাপটার আভাস দিল আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার। পূর্বাভাস রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের জেরে বিশ্ব অর্থনীতি এক অভূতপূর্ব সঙ্কটের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হতে পারে ৩% পর্যন্ত।
ইকনমিক আউটলুক বলছে, সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতি সংকুচিত হতে চলেছে প্রায় ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা জার্মানি ও জাপানের মিলিত জিডিপির চেয়েও বেশি, বলছেন গীতা গোপীনাথ।
IMF এর পূর্বাভাস, বেশিরভাগ দেশে নভেল করোনাভাইরাস সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছবে অর্থ বর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক নাগাদ এবং তা চলবে এ বছরের দ্বিতীয় অর্ধ পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়সীমার মধ্যে ভাইরাসকে বোতলবন্দি করা না গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে এগোবে, বলাই বাহুল্য।
তবে আশার কথাও আছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের পূর্বাভাসে। ২০২০ সালে বিপুল সঙ্কোচনের মধ্যেও একমাত্র ব্যতিক্রম ভারত ও চিনের অর্থনীতি। IMF বলছে, ২০২১ সালে তা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে।
বিশ্বের অর্থনীতির অবস্থা কেমন হতে চলেছে, তার কিছু উদাহরণ দিয়েছেন গীতা গোপীনাথ। ২০২০ সালে ইতালির জিডিপি নামতে পারে ৯.১% তে। আমেরিকার জিডিপি সংকুচিত হতে পারে ৫.৯% পর্যন্ত। জার্মানির জিডিপি সঙ্কোচন হতে পারে ৭% পর্যন্ত। ফ্রান্সের জিডিপি সংকুচিত হতে পারে ৭.২% তে। অর্থাৎ, এই বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোয় নেগেটিভ বৃদ্ধির পূর্বাভাস। বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে এই তালিকায় ব্যতিক্রম ভারত ও চিন।
২০২০ সালে চিনের জিডিপি বৃদ্ধি হতে পারে ১.২%। ভারতের জিডিপি হতে পারে ১.৯%। IMF এর পূর্বাভাস, ২০২০ অর্থবর্ষে (এপ্রিল, ২০২০-মার্চ, ২০২১) ভারতের অর্থনীতির সামান্য হলেও বৃদ্ধি হবে।
২০২১ সালে ভারতের জিডিপি এক লাফে পৌঁছতে পারে ৭.৪% তে। সেই সময় চিনের জিডিপি হতে পারে ৯.২%।
সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি যখন ৩% সঙ্কোচনের আশঙ্কায় কাঁপছে, তখন আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের ফোরকাস্ট অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক জায়গায় রেখেছে ভারত ও চিনকে।
IMF জানুয়ারি মাসের পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, ভারতের জিডিপির বৃদ্ধি হবে ৫.৮%। ২ মাস যেতে না যেতেই বদলে গেল পরিস্থিতি।
গীতা গোপীনাথ জানিয়েছেন, যে সমস্ত উন্নয়নশীল অর্থনীতি মূলত ট্যুরিজমের উপর নির্ভরশীল, তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নজর দিতে হবে দৈনিক মজুরিতে পেট চালানো বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার দিকে।
গীতা গোপীনাথের মতে, এখন প্রথম কাজ হল এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকদের হাতে সরাসরি নগদ টাকা তুলে দেওয়া। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের মুখ্য অর্থনীতিবিদ বলছেন, এজন্য যা করতে হয় করুক সংশ্লিষ্ট সরকাররা। আসল কথা হল, ওই মানুষগুলোর হাতে টাকা তুলে দিতেই হবে।
এই পরিস্থিতি বিশ্ব বাজারে তেলের দাম, অর্থনীতিবিদদের অন্যতম মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিন্তিত গীতা গোপীনাথও। তিনি বলছেন, পরিস্থিতি যেমন বুঝছি, তেলের সঙ্কট দ্রুত কাটার নয়। হয়ত আগামী বছরও এই সঙ্কটের মোকাবিলা করে যেতে হবে আমাদের। তবে ২০২১ সাল নাগাদ তেল-পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছে IMF।

Comments are closed.