কৈলাস-মানস সরোবর যাত্রার জন্য ভিসা দিল না চিন, ভারতের লাদাখ-সিদ্ধান্তে অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ?

লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরই তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল চিন। এবার কৈলাস মানস সরোবরের পথে রওনা হতে চাওয়া পূর্ণ্যার্থীদের তারা ভিসা দিল না বলে সূত্রের খবর। ফলে চরম অনিশ্চয়তায় এ বছরের মানস সরোবর যাত্রা।
সোমবারের পর থেকে এক ধাক্কায় বদলে গিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি। ভারতের কাশ্মীর সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পরই কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল পাকিস্তান। এবার লাদাখ নিয়ে ইন্দো-চিন সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ চড়ছে।
সংসদে অমিত শাহ বলেছিলেন, গিলগিট-বাল্টিস্তান সহ পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং আকসাই চিন ভারতীয় কাশ্মীর ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাম্প্রতিককালে এই প্রথম ভারতের তরফে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই দাবি করা হল। যা নিয়ে আপাত শীতল ইন্দো-চিন সম্পর্কে নতুন করে অশান্তির আগুন মাথাচাড়া দিচ্ছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে কার্যত হুঁশিয়ারির সুর শোনা গিয়েছে চিনের গলায়।
লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়েও নিজের আপত্তির কথা জানিয়েছে চিন। তাদের দাবি, এভাবে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলছে ভারত। চিনের বিদেশ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চিন বরাবরই তার প্রশাসনিক এক্তিয়ারে থাকা চিন-ভারত সীমান্তের পশ্চিম অংশে চিনা ভূখণ্ডকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করে। ভারত অবশ্য চিনের হুঁশিয়ারিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ভারতের দাবি, তারা যা করেছে, তা একান্তভাবেই তাদের সীমান্তের ভিতরে। ফলে বহির্বিশ্বের তা নিয়ে মতামতের গুরুত্ব নেই, বলছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার।
বিরোধিতার অংশ হিসেবে বুধবার কৈলাস মানস সরোবর যাত্রার জন্য ভারতীয় তীর্থযাত্রী দলকেও চিন ভিসা দেয়নি বলে সূত্রের খবর। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের লাদাখ-সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভিসা না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানাজানি হয়।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রক প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কৈলাস মানস সরোবর যাত্রার আয়োজন করে। মূলত দুটি রুট দিয়ে চলে যাত্রা। প্রথমটি উত্তরাখণ্ডের লিপুলেখ পাস ধরে, অন্যটি সিকিমের নাথুলা হয়ে। প্রতি বছরই হাজার হাজার পূর্ণ্যার্থী মানস সরোবর তীর্থে যান। কিন্তু এ বছর চিন ভিসা না দেওয়ায়, অন্ধকারে মানস সরোবর যাত্রা। মানস সরোবর যাত্রার জন্য চিন সীমান্তের ভিতরে প্রায় ১৯,৫০০ ফুট উচ্চতায় অত্যন্ত রুক্ষ প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। গোটা পথে চিকিৎসা এবং রসদের ব্যবস্থা করে চৈনিক কর্তৃপক্ষ। এভাবে ভিসা না দিয়ে কি চিন লাদাখ নিয়ে ভারতের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করছে? দুই তরফে কেউই এমন কিছু জানাননি, তবে পরিস্থিতি দেখে এমনটাই অনুমান করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

Comments are closed.