একটা সময় ছিল যখন দেশে প্রতিদিন আগের রেকর্ড ভেঙে নয়া রেকর্ড গড়ছিল করোনা সংক্রমণ। বিগত কয়েক সপ্তাহে সেই চিত্রে এসেছে তাৎপর্যপূর্ণ বদল। করোনা সংক্রমণের হার ক্রমেই কমছে। তাহলে কি সংক্রমণের পিক পেরিয়ে এলাম? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পিক পেরিয়েছি কিনা তার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই মুহূর্তে হার্ড ইমিউনিটির রেখচিত্র।
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা IJMR এ প্রকাশিত হয়েছে একটি রিপোর্ট। তাতে লেখা হয়েছে, উপসর্গ থাক কিংবা উপসর্গহীন, ভারতের ৩৮ কোটি মানুষ ইতিমধ্যেই সংক্রমিত হয়েছেন। পাশাপাশি বিগত কয়েক মাসে একাধিক সেরো সার্ভের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাচ্ছে, শহরাঞ্চলে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতির হার ব্যাপক। যা দেখে বিজ্ঞানী বলছেন, ভারত সম্ভবত হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে।
লকডাউনের কামাল?
IJMR এ প্রকাশিত রিপোর্টে ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে সময় মতো লকডাউন ঘোষণা এবং পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিকতা ফেরানোর পরিকল্পনাকে। বলা হয়েছে, লকডাউন না করা হলে এতদিনে ভারতে সংক্রমিতের সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লক্ষ পেরিয়ে যেত। মৃ্ত্যু হোত কমপক্ষে ২৬ লক্ষ মানুষের। সেক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণের পিক আসত জুন মাসে।
সাধারণত জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ সংক্রমিত হলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জিত হয়েছে বলে মনে করা হয়। সেই সময় সংক্রমণ আর নতুন করে ছড়াতে পারে না। আবার একাংশের বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনসংখ্যার শতকরা ৪৩ জন সংক্রমিত হলেই হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব।
হার্ড ইমিউনিটির কতটা কাছে আমরা?
হার্ড ইমিউনিটির তত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে ব্যাপক মতভেদ আছে। আমেরিকার CDC প্রধান অ্যান্টোনিও ফউচি হার্ড ইমিউনিটির তত্ত্বে বিশ্বাস রাখেন না। তাঁর মতে, হার্ড ইমিউনিটির অপেক্ষায় বসে থাকলে সংক্রমণ যেমন আটকানো যায় না তেমনই ক্রমেই বাড়তে থাকে মৃত্যুর হার। এতে আখেরে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ে বলে মনে করেন ডক্টর ফউচি।
যদিও ভারত ক্রমেই হার্ড ইমিউনিটির পথেই হাঁটা দিচ্ছে বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আমরা সম্ভবত সেই পর্যায়ের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছি।
তাহলে উপায়?
করোনা ঠেকাতে মাস্কের সর্বাত্মক ব্যবহার, ৬ ফুটের শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা এবং ঘন ঘন হাত ধোয়ার কোনও বিকল্প নেই। তাই হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের কথা না ভেবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা গেলেই অতিমারি মোকাবিলা সম্ভব হবে।
IJMR এ প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, আসন্ন শীতকাল এবং ঘাড়ের উপর এসে পড়া উৎসবের মরসুমে যদি সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়, তাহলে আগামী বছরের গোড়ায় হয়ত টিকা সম্পর্কিত সুখবর আসতে পারে। তবে হার্ড ইমিউনিটি বা টিকা আসার ঘোষণা, কোনওভাবেই ব্যক্তিগত সুরক্ষার সঙ্গে আপোশ, নৈব নৈব চ।