ভারতের ১ শতাংশ সুপার রিচের সম্পদ ৯৫ কোটি মানুষের মিলিত সম্পদের ৪ গুণ! বৈষম্যের ভয়াবহ চেহারা অক্সফামের রিপোর্টে
দেশে বৈষম্য ক্রমশ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে (Inequality In India)। ধনীরা আরও ধনী হচ্ছেন, গরিবদের অবস্থা পাল্লা দিয়ে আরও শোচনীয়। অক্সফামের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে দেশের ধনীতম ১ শতাংশের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ ভারতের ৯৫.৩ কোটি মানুষের মিলিত সম্পদের ৪ গুণেরও বেশি! এই ৯৫.৩ কোটি মানুষ ভারতের জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ।
এর আগে অক্সফাম ইন্ডিয়ার রিপোর্টে ধারাবাহিকভাবে উঠে এসেছে ভারতে ক্রমাগত বেড়়ে চলা বৈষম্যের চিত্র। সোমবার থেকে শুরু হওয়া ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের (ডব্লুইএফ) ৫০ তম বার্ষিক সভার ঠিক আগে প্রকাশিত অক্সফামের ‘Time to Care’ রিপোর্টে স্পষ্ট, ভারতে বৈষম্য (Inequality In India) বাড়তে বাড়তে আকাশ ছুঁয়েছে। এই রিপোর্ট বলছে, ভারতের বিলিয়নিয়ারদের মিলিত সম্পদের পরিমাণ দেশের বাৎসরিক বাজেটেরও ঢের বেশি।
শুধু কি ভারতেই এমন চোখ কপালে তোলা হারে বৈষম্য বাড়ছে? অক্সফাম বলছে মোটেই না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈষম্য সর্বব্যাপী, সর্বগ্রাসী। কেমন তার বহর তারও তথ্য রয়েছে রিপোর্টে। বিশ্বের ২,১৫৩ জন বিলিওনিয়ারের যা সম্পত্তি তা বিশ্বের ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা অর্থাৎ ৪৬০ কোটি মানুষের মিলিত সম্পদের চেয়েও বেশি।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান দুনিয়ার প্রতিটি মহাদেশই কোনও না কোনও কারণে অশান্ত। কোথাও অশান্তি অর্থনৈতিক নীতির প্রতিবাদে, আবার কোথাও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির জেরে। ফলে সুষ্ঠু অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে বারবার। কিন্তু এটাও ঠিক মূল কারণ নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমাগত বেড়ে চলা বৈষম্যের পিছনে রয়েছে চিরাচরিত পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। বিশ্ব অর্থনীতিকে তারা চিহ্নিত করছেন ‘সেক্সিস্ট ইকনমি’ হিসেবে।
কেন সেক্সিস্ট ইকনমি?
মহিলারাই অর্থনীতির বুনিয়াদ মজবুত রাখেন। রিপোর্ট বলছে, একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার সিইও এক বছরে যা আয় করেন, আমার-আপনার বাড়িতে যে মহিলা গৃহ পরিচারিকার কাজ করেন, তাঁকে সেই আয় করতে ব্যয় করতে হবে ২২,২৭৭ বছর! কেমন সেই বৈষম্য তারও বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে অক্সফামের রিপোর্টে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন সিইও প্রতি সেকেন্ডে ১০৬ টাকা উপার্জন করেন। সেই হিসেবে একজন সিইও প্রতি ১০ মিনিটে যা উপার্জন করেন তা আয় করতে বাড়ির পরিচারিকার সময় লাগবে ১ বছর।
রিপোর্টে আরও চোখ কপালে তোলা তথ্য হল, ভারতে মহিলা ও মেয়েরা প্রতিদিন মিলিতভাবে ৩.২৬ বিলিয়ন ঘণ্টা আনপেড কেয়ার ওয়ার্ক বা মজুরীবিহীন কাজে ব্যয় করেন। টাকার অঙ্কে হিসেব করলে যা ভারতীয় অর্থনীতিতে বছরে ১৯ লক্ষ কোটি টাকা অতিরিক্ত যোগ করছে। অথচ যে মহিলা বা মেয়েরা এই শ্রমদান করছেন, দিনের শেষে তাদের হাত একেবারে শূন্য।
অক্সফাম ইন্ডিয়ার সিইও অমিতাভ বেহারের কথায়, ভারতের মহিলা ও মেয়েরা রান্না-বান্না, ঘর দোর পরিষ্কার করা, শিশু ও বয়স্কদের দেখাশোনার পিছনে লক্ষ লক্ষ ঘণ্টা খরচ করেন। যা ভারতের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তিকে বুনিয়াদি মজবুতি প্রদান করে। কিন্তু যুগের পর যুগ ধরে তার কোনও আর্থিক কিংবা সামাজিক প্রতিদান পান না (Inequality In India) দেশের নারীরা। উল্টে শিক্ষা থেকে শুরু করে সামাজিক সম্মান, মহিলাদের স্থান আজও লাস্ট বেঞ্চ।
শুধু ভারতেই নয়, গোটা বিশ্বেই একই হাল। অক্সফামের গ্লোবাল সার্ভে বলছে, বিশ্বের মাত্র ২২ জন অতিধনীর যা সম্পদ তা গোটা আফ্রিকা মহাদেশের মহিলাদের মিলিত সম্পদের চেয়েও বেশি।