দেশের তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কালো মেঘ, আগামী এক বছরে ৪০ হাজার কর্মী ছাঁটাই হতে চলেছেন!

নির্দয়ভাবে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে দেশের তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলি। যা নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তায় সংশ্লিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির কর্মীরা। এর প্রতিবাদে কর্মীরা পথেও নেমেছেন। সোমবারই কলকাতার তথ্য প্রযুক্তি তালুকে মিছিল এবং সভা হয়েছে। কর্মীদের সংগঠন এআইআইটিইইউ এবং সিপিএমের যুব সংগঠন তার উদ্যোক্তা ছিল। সূত্রের খবর, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের প্রথম সারির বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ৪০ হাজার কর্মীর চাকরিতে কোপ পড়তে পারে। ইংরেজি দৈনিক দ্য ইকোনমিক টাইমসের একটি প্রতিবেদন বলছে, খরচের বহর কমাতে এবং কর্মী সংখ্যা আঁটোসাটো করতে উদ্যোগী হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। ওই ৪০ হাজার কর্মীর মধ্যে সকলেই ‘মিডল লেভেল’-এর আইটি কর্মী বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এঁদের প্রত্যেকের ১০-২০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইটি সেক্টরে মিডল লেভেলের ১০ থেকে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মী রয়েছেন প্রায় এক পঞ্চমাংশ। প্রায় ৬ লক্ষ কর্মীর মধ্যে ৭ শতাংশের চাকরি যেতে পারে আগামী ১২ মাসের মধ্যে।
এমনিতেই দেশের অর্থনীতির হাল এখন বেশ খারাপ। লগ্নিতে ভাটা চলছে, কারখানায় উৎপাদন কমে গিয়েছে, আবাসন, গাড়ি শিল্পে চূড়ান্ত মন্দা, সেই সব শিল্পে কর্মী ছাঁটাই চলছে, দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। বেকারি বাড়ছে। এই আবহে এবার নতুন সঙ্কট তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে। অনেক অভিভাবকই এখন সন্তানদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ান প্রচুর টাকা খরচা করে। তাঁদের একটাই কথা মাথায় থাকে, যাতে ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যতে ভালো কোনও সংস্থায় চাকরি পায়। এখন যদি সেই তথ্য প্রযুক্তি শিল্পেও ছাঁটাই হয়, তা হলে মানুষ যাবে কোথায়?
কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এই মন্দার কথা মানতে নারাজ। অথচ তারা আর্থিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য নানা পদক্ষেপ করছে। অর্থনীতিবিদরা কিন্তু মনে করেন, এতে লাভ হবে না। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিংহের মতে, একটি রাষ্ট্রের অর্থনীতি আসলে তার সামাজিক অবস্থার প্রতিফলনও বটে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নাগরিকদের লেনদেনের প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। এই দুই পক্ষের আস্থা এবং আত্মবিশ্বাসই অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু বিজেপি সরকারের আমলে সেই যোগসূত্রটাই ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
ভারতের আইটি ফার্মগুলি প্রধানত পিরামিড স্ট্রাকচার অনুসরণ করে। প্রচুর সংখ্যক কর্মী এবং মাথাপিছু ব্যয় কম করা হয়। এখানে মিডল লেভেল টিমে থাকেন অভিজ্ঞ কর্মীরা এবং তাঁদের উপরে থাকেন সিনিয়র কর্মীরা, যাঁরা মূলত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। আইটি সংস্থাগুলির দাবি, বর্তমান বাজারের কথা ভেবেই এই মধ্যবর্তী লেভেলের কর্মীদের ছেঁটে ফেলার পরিকল্পনা করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। মধ্যবর্তী লেভেলের অভিজ্ঞ কর্মীদের ছেঁটে ফেলে নতুন কর্মী নিলে খরচও কম হবে। তাই এই পন্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন ইনফোসিসের প্রাক্তন বোর্ড মেম্বার টি ভি মোহনদাস পাই। তাঁর কথায়, ভারত সহ পূর্বের যত সেক্টর ধীরে ধীরে পরিণত হয়, সেখানে মধ্যবর্তী লেভেলের প্রচুর কর্মী থাকেন যাঁরা পারিশ্রমিকের তুলনায় সংস্থার কাজে আসেন না।
ভারতে আইটি ক্ষেত্রে কর্মীসংখ্যা প্রায় ৩০ লক্ষ। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে যেভাবে ছাঁটাইয়ের খবর আসছে তাতে আতঙ্কে রয়েছেন সব কর্মীই।

 

Comments are closed.