জেএনইউ-এর উপাচার্য এম জগদেশ কুমার মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করছেন, এমনই অভিযোগ তুলে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমেরিটাসের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন অর্থনীতিবিদ অমিত ভাদুড়ি। যেভাবে জেএনইউ-এর উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন, তার প্রতিবাদ করেই তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে পদত্যাগ পত্রে জানান বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ।
সোমবার জগদেশ কুমারকে লেখা এই ইস্তফাপত্রে অমিত ভাদুড়ি লিখেছেন, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক সেই ১৯৭৩ সাল থেকে। তরুণ শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। জেএনইউ-এর সঙ্গে আমার সুদীর্ঘ সম্পর্ককালে ছাত্রদের বহু আন্দোলন দেখেছি। কোনওটা সমর্থনযোগ্য, আবার কোনওটা নয়। সেই সব আন্দোলনের সময় কিছুদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন বন্ধও থেকেছে। অমিত ভাদুড়ির মতে, আগের ঘটনা পরম্পরার চেয়ে এবারের পার্থক্য এটাই যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে এমনটা নয়, তারা জেএনইউ-এর সুপরিচিত বিতর্ক ও আলোচনার পরিবেশটাকেই নষ্ট করে দিচ্ছে। এবং এটা ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপ বলেই মনে করেছেন অর্থনীতিবিদ।
তিনি আরও লিখেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং পড়ুয়ারা স্বাধীনভাবে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মত বিনিময় করত। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গর্বের দিক বলে মনে করেন অমিত ভাদুড়ি। কিন্তু এখন সেই মত প্রকাশের অধিকারকেই খর্ব করা হচ্ছে। অমিত ভাদুড়ির লেখেন, যে ভাবে প্রতিষ্ঠানের অবনতি হচ্ছে তাতে তাঁর আশঙ্কা, জেএনইউ-এর মেধাও খণ্ডিত হয়ে যাবে। এ ভাবে প্রতিষ্ঠানের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা অনেক বড় ও বিপজ্জনক পরিকল্পনার অংশ বলে চিঠিতে উদ্ধৃত করেছেন তিনি। সরাসরি এ নিয়ে উপাচার্য জগদেশ কুমারের দিকেই আঙুল তুলেছেন অমিত ভাদুড়ি। পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, জেএনইউ-এর প্রধান হিসেবে উপাচার্য নিজেই পড়ুয়াদের মত প্রকাশের জানলাগুলো বন্ধ করে দিচ্ছেন। এটা তাঁকে প্রচণ্ডভাবে ব্যথিত করেছে। অমিত ভাদুড়ি লেখেন, এখন যদি আমি প্রতিবাদ না জানাই, তা হলে আমিও একজন নির্বাক দর্শক হয়ে থেকে যাব। তাই খুব বেদনার সঙ্গে এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলাম।
প্রসঙ্গত, জেএনইউ হামলার প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহেই অর্থনৈতিক তথ্য পর্যালোচনা সংক্রান্ত সরকারি প্যানেল থেকে ইস্তফা দেন অধ্যাপক সি পি চন্দ্রশেখর। জেএনইউ-এর সেন্টার ফর ইকনমিক স্টাডিজ অ্যান্ড প্ল্যানিং-এর অধ্যাপক চন্দ্রশেখর ইস্তফাপত্রে লিখেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সরকারি কমিটিতে থাকা তাঁর পক্ষে থাকা সম্ভব হচ্ছে না।