সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সঙ্কটে ভোডাফোন-এয়ারটেল: ছাঁটাই হতে পারেন প্রচুর কর্মী, বন্ধ বেতন বৃদ্ধি, বোনাস

মাশুল যুদ্ধে জেরবার ভোডাফোন আইডিয়া এবং এয়ারটেলের উপর বাড়তি ৯২ হাজার কোটি টাকার বোঝা চেপেছে। হাতে ৩ মাসেরও কম সময়। দুই সংস্থাই পালা করে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারস্থ হলেও, সুপ্রিম কোর্টের ফরমান বদলানোর নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বিপুল কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে যেতে পারে ভোডাফোন আইডিয়া এবং ভারতী এয়ারটেল। ইংরেজি দৈনিক দ্য ইকনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে এমনই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, লাইসেন্স ফি, স্পেকট্রাম বাবদ ভোডাফোন আইডিয়াকে ৩৯ হাজার কোটি এবং ভারতী এয়ারটেলকে ৪২ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকারকে জমা দিতে হবে। জিওর দাপটে যখন দেশের অন্যান্য টেলিকম সংস্থা রীতিমতো কোণঠাসা, ঠিক তখনই এমন নির্দেশে কার্যত অকুল পাথারে ভোডাফোন আইডিয়া এবং ভারতী এয়ারটেল। বাজারে চরম আশঙ্কা, টাকা জোগাড়ের জন্য বিপুল কর্মী ছাঁটাইয়ের রাস্তায় যেতে পারে এই দুই সংস্থা।
অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভেনিউ (এজিআর) এর জন্য কোনও সংস্থারই আলাদা করে কোনও আর্থিক সংস্থান থাকে না, ফলে এই বিপুল অর্থ জোগাড় করতে খুঁজতে হবে অন্য পথ। কী সেই পথ? পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কর্মী সংখ্যা কমানো ছাড়া এই মুহূর্তে আর কোনও রাস্তা নেই টেলিকম সংস্থাগুলোর হাতে।
দ্য ইকনমিক টাইমস সূত্রে খবর, শেষ অর্থবর্ষে লোকসান সত্ত্বেও ভোডাফোন আইডিয়া তার কর্মীদের বেতন গড়ে ৯ শতাংশ হারে বাড়িয়েছে এবং বোনাস দিয়েছে। একইভাবে গত জুনে ভারতী এয়ারটেলও কর্মীদের গড়ে ৭.৫ শতাংশ হারে বেতন বাড়িয়েছে এবং বোনাস দিয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের জেরে আগামী দিনে বেতন বৃদ্ধি কিংবা বোনাস দেওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নির্মূল হয়ে গেল বলে মনে করছেন টেলিকম সেক্টরের বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে ভারতীয় এয়ারটেলের কর্মী সংখ্যা ১৬ হাজার, ভোডাফোন আইডিয়ার ১০ হাজার। মিশে যাওয়ার আগে ভোডাফোন এবং আইডিয়ায় পৃথকভাবে ১৭ হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ করতেন। দুই সংস্থাই বর্তমানে বিপুল লোকসানে চলছে। অন্যদিকে দেশের একমাত্র লাভজনক মোবাইল পরিষেবা প্রদানকারী রিলায়েন্স জিও। তাদের কর্মী সংখ্যা ১৫ হাজারের সামান্য বেশি।
সুপ্রিম কোর্টের ফরমানের জেরে ভোডাফোন-আইডিয়া এবং ভারতী এয়ারটেল আরও কয়েক দফায় কর্মী ছাঁটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৫ জি, আইওটি (ইন্টারনেট অফ থিংস), ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং এআই-এর (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) কথা মাথায় রেখে সংস্থাগুলো লোক নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের এজিআর সিদ্ধান্ত আসার পরই তা বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানা যাচ্ছে। পাশাপাশি আরও বিপুল কর্মীকে কাজ হারাতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএসএনএলের পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনায় বলা হয়েছে পঞ্চাশোর্ধদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হবে। এবার কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটতে হতে পারে ভোডাফোন আইডিয়া এবং ভারতী এয়ারটেলকে। টেলিকম বাজারের ওয়াকিবহালদের আশঙ্কা, কর্মহীনের সংখ্যার নিরিখে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে চলেছে ভারত।

 

Comments are closed.