ভারতের বহুত্ববাদকে যে কোনও মূল্যে রক্ষা করতে হবে, মন্তব্য বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের

আমাদের বুঝতে হবে, ভারত বহুত্ববাদ ও বহু সংস্কৃতির দেশ, ভারতের এই বহু সংস্কৃতিই তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, একে আমাদের বাঁচিয়েও রাখতে হবে। মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের।
গত শনিবার দিল্লিতে সাংবাদিক-লেখক ডঃ চিন্তন চন্দ্রচূড়ের লেখা ‘দ্য কেসেস দ্যাট ইন্ডিয়া ফরগট’ বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে ভারতের সামাজিক অবস্থা, বিচারপ্রক্রিয়া-সহ নানা ইস্যুতে নিজের মতামত জানালেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। ভারতের বহুত্ববাদ ও বহু সংস্কৃতিকে সর্বজনগ্রাহ্য করার বিষয়ে জোর দিয়ে বিচারপতি বলেন, যে মূল্যবোধের উপর ভর করে ভারত এতটা রাস্তা এগিয়েছে, তাতে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বহুত্ববাদকে গ্রহণ করতে পারার ক্ষমতা। এই দেশ বহু সংস্কৃতি ও বহু মতের দেশ, এটাই ভারতের স্বতন্ত্রতা। পাশাপাশি ভারতের বিচারবিভাগীয় বহু জায়গায় উন্নতির প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি চন্দ্রচূড়। তিনি জানান, জেলা আদালত থেকে হাইকোর্ট, সেখান থেকে সুপ্রিম কোর্টে মামলা যাওয়ার দীর্ঘ পথে অনেক জায়গায় উন্নতি করার প্রয়োজন। বিচারবিভাগীয় ক্ষেত্রেও বৈচিত্রের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, কোনও মামলা হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আগে হাইকোর্টের রায়ের পর্যালোচনার জন্য বিচারপতিদের নিয়ে একটি রিভিউ কমিটি করা যেতে পারে। বিচারপতিদের নিয়োগ সংক্রান্ত কলেজিয়াম ব্যবস্থারও কিছুটা পরিবর্তন দরকার।
দেশের মহিলা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও কেন বিচারবিভাগীয় ক্ষেত্রে মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা কম, সঞ্চালকের এই প্রশ্নের উত্তরে বিচারপতি চন্দ্রচূড় উত্তরপ্রদেশের উদাহরণ টানেন। এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি থাকাকালীন একটি উপলব্ধির কথা প্রকাশ্যে এনে তিনি বলেন, এই রাজ্যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পড়াশোনা শুরু হয় দেরিতে। ফলে ছেলেদের তুলনায় শিক্ষায় তাঁরা অনেকটা পিছিয়ে থাকেন। উত্তরপ্রদেশের মতো বিভিন্ন রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে নারীশিক্ষার পর্যায় এমন হওয়ায় আইনের পেশার মতো জায়গায় মহিলা প্রতিনিধির সংখ্যা কম, এমনকী বিচারপতিদের আসনেও তাঁদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই প্রসঙ্গে আলোচনায় উঠে আসে একজন মহিলা আইনজীবীর কথা, যিনি আক্ষেপ করেছিলেন, মাতৃত্বকালীন কর্তব্যের কারণে বিচারপতি হওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন তিনি। বিতর্কে প্রশ্ন ওঠে, পেশাগত ক্ষেত্রে মহিলা ও পুরুষের বয়সসীমা কি এক হওয়া উচিত? বিশেষত যে মহিলারা গৃহকর্ত্রীর কাজের পাশাপাশি নিজের পেশাগত দিকটিও ধরে রাখতে চান। এই প্রসঙ্গে বিচারপতি বলেন, এটা কোনও দ্বিদলীয় বিষয় নয়, এটা এমনও সমস্যা নয়, যেখানে বিরোধীরা প্রতিবাদে ওয়াকআউট করবেন অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠতরা বিষয়টিকে লোকসভায় ঠেলবেন। এর জন্য সামাজিক উন্নয়ন প্রয়োজন।

Comments are closed.