বিচারপতি মুরলীধর: বদলি নিয়ে কোনও অনুযোগ নেই, ২৬ ফেব্রুয়ারি আমার জীবনের দীর্ঘতম দিন

২৬ ফেব্রুয়ারি, তাঁর বদলির দিনটিকে ‘দীর্ঘতম কাজের দিন’ বলে বর্ণনা করলেন দিল্লি হাইকোর্টের সদ্য প্রাক্তন বিচারপতি এস মুরলীধর। ওই দিনই তিনি উস্কানিমূলক ভাষণ দেওয়ার জন্য বিজেপির কয়েকজন নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কেন এফআইআর করা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। দিল্লি পুলিশকে বিচারপতি কড়া ভাষায় বিঁধেছিলেন, ওই নেতাদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিনই মাঝরাতে তাঁর বদলির নির্দেশ আসে। তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে তোলপাড় চলে। চলে তুমুল বিতর্ক। তবে বিচারপতি মুরলীধর সেই সব বিতর্ক এড়িয়ে বললেন, বদলি নিয়ে আমার কোনও আপত্তি বা আক্ষেপ নেই। বরং ওই দিনটি আমার পেশা-জীবনের দীর্ঘতম দিন।
শুক্রবার বিচারপতি মুরলীধরের পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের দ্বিতীয় সিনিয়র বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলেন। তার আগে বৃহস্পতিবার দিল্লি হাইকোর্টে তাঁর বিদায় সংবর্ধনায় ভিড় ছিল দেখার মতো। এক আইনজীবী গাইলেন, একলা চলো রে। আইনজীবীরা বললেন, দিল্লি হাইকোর্টের কোহিনুরই চলে যাচ্ছেন। ওই অনুষ্ঠানেই বিচারপতি মুরলীধর ২৬ ফেব্রুয়ারিকে দীর্ঘতম কাজের দিন বলে উল্লেখ করেন। তার আগে প্রধান বিচারপতির এজলাসে বিচারপতিরা তাঁকে সম্মান জানান। হাজির ছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এ পি শাহ-ও।

২৫ ফেব্রুয়ারি মাঝরাতে আইনজীবী রাহুল রায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে নিজের বাসভবনে বিচারপতি মুরলীধর দিল্লি-হিংসা নিয়ে বিশেষ শুনানি করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি অনুপ ভাম্বানি। ২৪ ফেব্রুয়ারি ছুটিতে ছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি এন প্যাটেল। হাইকোর্টের দ্বিতীয় প্রবীণ বিচারপতি জি এস সিস্তানিকে ফোন করে দিল্লি হিংসা নিয়ে দ্রুত শুনানি শুরু করেন বিচারপতি মুরলীধর। তারপরে ২৬ তারিখ ফের দিল্লি হাইকোর্টে দীর্ঘ শুনানি হয় দিল্লির হিংসা নিয়ে। যেখানে কেন্দ্র থেকে দিল্লি সরকার এবং বিশেষ করে দিল্লি পুলিশের উদ্দেশে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন বিচারপতি মুরলীধর। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিচারপতি মুরলীধর বলেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি মাঝরাতে আমার বদলির নির্দেশ হাতে পাই এবং দিল্লি-হিংসার মামলা চলে যায় প্রধান বিচারপতির এজলাসে। অবশ্য ১৭ ফেব্রুয়ারি কলেজিয়াম থেকে চিঠি দিয়ে আমাকে বদলির সুপারিশের কথা জানানো হয়। আমি আপত্তি করিনি। বিচারপতি মুরলীধর জানান, ২০০৯ সালে সমকামিতা অপরাধ নয়, এই রায় তাঁর পেশা-জীবনের অন্যতম রায়। তিনি বলেন, দুর্বলের পাশে দাঁড়ানোর গান্ধীজির মন্ত্র এবং বি আর আম্বেদকরের সাংবিধানিক নৈতিকতার শিক্ষাই আমাকে বিচারপতি হিসেবে সঠিক পথে চালিত করে।
রাতারাতি বিচারপতি মুরলীধরের বদলির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এ পি শাহ। দিল্লি বার কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন কে সি মিত্তল ও দিল্লি সরকারের স্ট্যান্ডিং কাউন্সেল রাহুল মেহেরা বিচারপতি মুরলীধরের বদলি প্রসঙ্গে কলেজিয়াম পলিসির সমালোচনা করেন। বৃহস্পতিবার ওই অনুষ্ঠানে দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি এন প্যাটেল বিচারপতি মুরলীধরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক রায়ের উদাহরণ টেনে বলেন, একজন মহান বিচারপতি তিনিই, যিনি আইনের যে কোনও অংশ নিয়ে আলোচনা করতে পারেন এবং যে কোনও ব্যাপারে সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত নিতে জানেন।

 

Comments are closed.