মনমোহন সিংহ: দেশ বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলছে, অবস্থা ভয়াবহ এবং বিমর্ষ

সামাজিক অসঙ্গতি, অর্থনৈতিক মন্দা ও বিশ্বস্বাস্থ্য মহামারি, এই ত্রিফলায় বিধ্বস্ত ভারত। মোদী সরকারের সমালোচনা করে ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্রে কলম ধরলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আরবিআই-র প্রাক্তন গভর্নর মনমোহন সিংহ। প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ বাতলে দিলেন এই ‘ভয়ঙ্কর’ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার উপায়ও।
শুক্রবার ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্রে মনমোহন সিংহ তাঁর প্রতিবেদন শুরু করেছেন এই ভাবে, ভারাক্রান্ত মনে লিখছি, বর্তমানে ভারত সামাজিক বিরোধ, অর্থনৈতিক মন্দা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বড় বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। সামাজিক অসঙ্গতি এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির মূলে দায়ী ভারত নিজেই। আর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বিশেষতঃ করোনাভাইরাসের আশঙ্কা হল এক বহিরাগত আঘাত। এই ত্রয়ীর আক্রমণ কেবল ভারতের আত্মাকে নয়, বিশ্বের দরবারে ভারতের অর্থনৈতিক ও প্রজাতান্ত্রিক শক্তিকে খর্ব করছে।
দেশের দু’বারের প্রধানমন্ত্রীর কলমে উঠে এসেছে ক’দিন আগে ঘটে যাওয়া দিল্লি হিংসার কথা। তিনি লিখেছেন, কিছু ধর্মান্ধ মানুষ ও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কারণে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে সাধারণ মানুষের বাড়িঘর পর্যন্ত এই হিংসার শিকার হচ্ছে, যা ভারতের ইতিহাসে অন্ধকারময় এক অধ্যায় হয়ে থাকবে। তিনি আরও লিখেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রতিষ্ঠান আজ নাগরিককে রক্ষা করতে পারছে না। দেশের বিচার ব্যবস্থা থেকে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ তাদের কাজে ব্যর্থ। কোনও উন্নতির বালাই নেই, দেশজুড়ে সামাজিক হিংসা কেবল বেড়ে চলেছে, যা দেশের আত্মাকে কলঙ্কিত করছে। নাম না করে সরকারকে নিশানা করে মনমোহন লিখেছেন, এই হিংসার আগুন যারা জ্বালাচ্ছে, তারাই পারে সেই আগুন নেভাতে।
মনমোহনের মতে, উদার গণতান্ত্রিক দিক থেকে যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশ হিসেবে ভারত নিজেকে তুলে ধরেছিল, গত কয়েক বছর ধরে সেখান থেকে দেশ ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও টালমাটাল পরিস্থিতি চলছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের তিনটি বিষয়ের উপর বিশেষ জোর দেওয়া আশু কর্তব্য বলে মনে করেন বিখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ। প্রথমত, করোনাভাইরাসের আশঙ্কা দূর করতে যাবতীয় শক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে সরকারকে জনসাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন আনা হয়েছে তা প্রত্যাহার করে সমাজে যে ঘৃণার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা সরিয়ে সামাজিক একতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তৃতীয়ত, দেশের আর্থিক ঘাটতির দিকে নজর দিয়ে চাহিদার অভাব দূর করে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে হবে।
মনমোহন সিংহ আরও লিখেছেন, সত্য হল দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ ও বিমর্ষ’। যে ভারতকে আমরা জানি, তা ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। ইচ্ছাকৃত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অর্থনৈতিক অব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বাইর থেকে আসা আতঙ্ক ভারতের প্রগতি ও স্থায়িত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

Comments are closed.