তেজস্বীর চাপে কানহাইয়াকে বিহারে প্রার্থী করল না সিপিআই! কেন লালু-পুত্রর কাছে নতিস্বীকার বাম দলের, প্রশ্ন রাজ্যজুড়ে

জেএনইউ-এর প্রাক্তন ছাত্রনেতা, মোদী ও অমিত শাহ বিরোধী শহুরে মুখ, আবার গ্রামের মাটির সঙ্গেও তাঁর দারুণ সংযোগ। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিভিন্ন সভার দৌলতে গত তিন বছর ধরে আসমুদ্র হিমাচল চেনে বিহারের কানহাইয়া কুমারকে। এক বিখ্যাত ম্যাগাজিন তাঁকে আগামী দশকের উদয়ীমান মুখ বলে দাবি করেছিল। সম্প্রতি এনআরসি ও সিএএ বিরোধী আন্দোলনে বিহারে প্রধান মুখ ছিলেন কানহাইয়া। এর পরেও কেন ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা ভোটে লড়ছেন না কানহাইয়া? এই প্রশ্নেই উঠছে হিন্দি বলয়ে।
আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনে নীতীশ-বিজেপি বিরোধী মহাজোট গড়েছে আরজেডি, কংগ্রেস এবং বাম দলগুলি। সিপিআই যে ৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে সেগুলো হল, বাখরি, তেঘরা, বাচওয়াড়া, হরলাখি, ঝানিঝাপুর, রুপাউলি। প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করে দিয়েছেন সিপিআই নেতৃত্ব। কিন্তু তাতে নাম নেই কানহাইয়ার। কেন গত লোকসভা নির্বাচনে বিহারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কানহাইয়াকে টিকিট দিল না সিপিআই? প্রশ্ন উঠছে, তেজস্বীর যাদবের চাপেই কি কানহাইয়ার নাম প্রার্থী তালিকায় রাখা হয়নি?
বিধানসভা নির্বাচনে কানহাইয়া কুমার বাছাবারা কেন্দ্র থেকে লড়তে পারেন বলে জল্পনা চলছিল। জন সমর্থন থাকা ও অতি পরিচিত মুখ সিপিআই নেতা কানহাইয়ার ভোটে না লড়া নিয়ে অনেকগুলো কারণ উঠে আসছে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ লালু-পুত্র তেজস্বী।
দুর্নীতি মামলায় লালু জেলে থাকায় এ বার নির্বাচনের দায়িত্ব এসে পড়েছে ছেলে তেজস্বীর কাঁধে। জোট নিয়ে আলোচনার শেষে ঠিক হয়েছে, ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় ১৪৪ আসনে লড়বে লালু-তেজস্বীর দল আরজেডি। তিনিই বিরোধী জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী। সূত্রের খবর, তেজস্বীই চান না ভোটে লড়ুন কানহাইয়া। সিপিআই নেতৃত্বকে তিনি তা বুঝিয়েও দিয়েছেন। কারণ কী? তেজস্বী যাদবের মতোই নীতীশ কুমার-বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হয়ে উঠেছেন কানহাইয়া। তেজস্বী চান না তাঁর পাশাপাশি অন্য কোনও নবীন মুখ উঠে আসুন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কানহাইয়া কুমার যে বেগুসরাই কেন্দ্র থেকে লড়েছিলেন, সেখানে হেরে যাবে জেনেও প্রার্থী দিয়েছিল আরজেডি। যেখানে একটা বিজেপি বিরোধী সার্বিক ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তা ভেঙে দিয়েছিলেন আরজেডি নেতা তেজস্বী। কানহাইয়ার উত্থান যে লালু-পুত্র ভালো চোখে দেখছেন না, তা সেদিনই স্পষ্ট হয়ে যায়।
সূত্রের খবর, এবারেও তেজস্বী চাননি বিজেপি ও নীতীশ বিরোধী আর কোনও মুখ সমান্তরাল ভাবে উঠে আসুক বিহারের রাজনীতিতে। সিপিআই-এর তরুণ নেতা কানহাইয়া কুমার লোকসভা ভোটে হেরে গেলেও, কয়েক মাস আগে বিহারজুড়ে তাঁর সিএএ বিরোধী ‘জন-গণ-মন যাত্রা’য় ঝড় তুলে দিয়েছিলেন। কানহাইয়ার এমন প্রবল উপস্থিতি তেজস্বী যাদবের কাছে বেজায় অস্বস্তিদায়ক হয়ে উঠেছে বলেই সূত্রের খবর। জানা যাচ্ছে, পরিস্থিতি বুঝে সিপিআইয়ের জাতীয় পরিষদ কানহাইয়াকে পরামর্শ দিয়েছে, তাঁর সামনে দীর্ঘ রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পড়ে। তিনি জাতীয় স্তরের নেতা হতে পারেন, বিহারের ভোট নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কী লাভ! কানহাইয়া বরং বামেদের ‘তারকা প্রচারক’ হয়ে ভোটের আগে বিহার চষে বেড়াতে পারবেন। সূত্রের খবর, কানহাইয়াকে প্রার্থী করা হবে না, সিপিআইয়ের বিহার নেতৃত্বের এই আশ্বাসের পরই, আরজেডির সঙ্গে জোটের আলোচনা গড়িয়েছে। তেজস্বীর চাপের মুখে কেন নতিস্বীকার করল সিপিআই, এই প্রশ্নই এখন বিহারজুড়ে।
যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে কানহাইয়া কুমার বারবার বলেছেন, নির্বাচনী রাজনীতিই শেষ কথা নয়। মানুষের রুজি রোজগার, শিক্ষার মতো বুনিয়াদি ইস্যুগুলো নিয়েই তিনি লড়ে যেতে চান। তাঁর এই ব্যাখ্যার পরেও রাজনৈতিক মহলে মতভেদ আছে। কারণ যিনি এক বছর আগেই লোকসভা ভোটে লড়েছেন, সাধারণভাবে বিধানসভা ভোটে লড়ার ক্ষেত্রে তাঁর তো অনীহা থাকার কারণ নেই।

Comments are closed.