অতীত ভুলে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় কেরলে এক মঞ্চে সিপিএম-কংগ্রেস

নয়া নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি কেরলে এক মঞ্চে হাজির করিয়ে ছাড়ল চির প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএম এবং কংগ্রেসকে। সোমবার তিরুবনন্তপুরমে রক্তসাক্ষী মণ্ডপম -এর (শহিদ স্মারক) সামনে নয়া আইন এবং এনআরসি বাতিলের দাবিতে তিন ঘণ্টা সত্যাগ্রহ অবস্থান করলেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা। তাঁদের সঙ্গেই অবস্থানে বসেন কেরলের বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের রমেশ চেন্নিথালা-সহ রাজ্য কংগ্রেসের অন্য নেতারা। সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের সব শরিক দলও ছিল এদিনের অবস্থান মঞ্চে। সূত্রের খবর, ওই আইনের প্রতিবাদে যৌথভাবে আন্দোলন করার প্রস্তাব কংগ্রেস নেতা চেন্নিথালাই দেন মুখ্যমন্ত্রীকে। বিজয়ন তাতে রাজিও হয়ে যান। এদিনের অবস্থানে সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্টরাও উপস্থিত ছিলেন।
দক্ষিণের রাজ্যগুলির মধ্যে কেরলই প্রথম, যারা এই নতুন আইন মানবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও প্রথম থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছেন। বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পরেই মমতার সরকার সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, তারা নয়া আইন এবং এনআরসি কিছুতেই মানবে না। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তাঁর অভিযোগ, সরকারি পয়সা খরচ করে কোনও রাজ্য সরকার এভাবে একটি কেন্দ্রীয় আইন মানবে না বলে বিজ্ঞাপনে প্রচার করতে পারে না। এটা অসাংবিধানিক। মমতা অবশ্য এদিন থেকেই নয়া আইনের বিরোধিতায় পথে নেমে পড়েছেন। সোমবার তিনি মিছিল করেন। মঙ্গলবার এবং বুধবারও তাঁর পদযাত্রা চলবে।
এদিন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, এই রাজ্য এই আইনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ চায়। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদে পাশ হওয়ার পরেই বিজয়ন জানান, তিনি তাঁর রাজ্যে ওই আইন চালু করতে দেবেন না। তার পর বিজয়নের সঙ্গে কথা হয় চেন্নিথালার। তিনি বলেন, আমি মুখ্যমন্ত্রীকে যৌথ আন্দোলনের প্রস্তাব দিই। তিনি রাজি হন।
কেরলে বরাবরই কংগ্রেস এবং সিপিএমের সম্পর্ক খুবই খারাপ। বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে গিয়ে সিপিএমের অন্দরে প্রবল বাধার মুখে পড়তে হয় কেরলের নেতাদের কাছ থেকে। তার পরেও কেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনে এক মঞ্চে সিপিএম তথা বামেদের এবং কংগ্রেসের সহাবস্থান যথেষ্ট বার্তাবহুল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পশ্চিমবঙ্গে গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট ফলপ্রসূ হয়নি। তবে রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভা উপনির্বাচনে তারা জোট করে লড়াই চালায়। তাতে অবশ্য দুই দলেরই লাভের লাভ কিছুই হয়নি। কেরলে নয়া কেন্দ্রীয় আইনের বিরোধিতায় কংগ্রেস এবং সিপিএম একই মঞ্চে সামিল হওয়ায় খুশি এই রাজ্যের কংগ্রেস, সিপিএম নেতারাও।

 

Comments are closed.