ইন্ডোরে মমতা: দিল্লিতে রাষ্ট্রীয় মদতে গণহত্যা হয়েছে গুজরাত মডেলে, কলকাতায় গোলি মারো বরদাস্ত নয়

দিল্লিতে রাষ্ট্রীয় মদতে পরিকল্পিত গণহত্যা হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কর্মিসভায় দিল্লির সাম্প্রতিক দাঙ্গা নিয়ে সরব হন নেত্রী। তিনি বলেন, দিল্লিতে কয়েক দিন ধরে এত বড় হিংসার ঘটনা ঘটে গেল। এত মানুষ মারা গেল, এত লোক ঘরছাড়া হল, এত লোক সর্বস্বান্ত হল, অথচ বিজেপি নেতারা আজ পর্যন্ত তার জন্য ক্ষমা চাইলেন না। লজ্জা নেই! উলটে এখনও বড় বড় কথা বলে যাচ্ছেন ওদের নেতারা। ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা। কলকাতায় এসে আবার বলছে, আমাকে সব দখল নিতে হবে। আমি পরিষ্কার বলছি, দিল্লিতে যা হয়েছে, তা রাষ্ট্রীয় মদতে সন্ত্রাস ছাড়া কিছু নয়। পরিকল্পিত গণহত্যা হয়েছে। পরে তাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, দিল্লিতে একবারে গুজরাত মডেল প্রয়োগ করা হয়েছে। একের পর এক রাজ্যে সেই মডেল চালানোর চেষ্টা চলছে। এই অত্যাচারী, স্বৈরাচারী, একনায়কতন্ত্রী বিজেপি সরকারকে দিল্লির গদি থেকে না হঠানো পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।
ভিড়ে ঠাসা ইন্ডোরের সভায় মমতা বলেন, বিজেপির কিছু নেতা-মন্ত্রীর উস্কানিমূলক কথাবার্তার জন্যই এত বড় ঘটনা ঘটে গিয়েছে। কেন তাঁরা বললেন, গোলি মারো শালোকো? কেন ওই নেতা-মন্ত্রীদের আজ পর্যন্ত দিল্লির পুলিশ গ্রেফতার করেনি? বলা হচ্ছে, দেশের মানুষ গদ্দার। কে গদ্দার, তুমি ঠিক করে দেবে? কত বড় সাহস? গতকাল কলকাতাতেও বিজেপির সভায় যোগ দিতে যাওয়ার সময় কয়েকজন সেই ‘গোলি মারা’র স্লোগান দিয়েছে। কে কাকে ‘গোলি’ মারবে? এই সব প্ররোচনামূলক, বেআইনি ভাষায় যারা কথা বলবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবই। রাতেই কলকাতা পুলিশ  তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। কাগজের ছবি দেখে, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে অন্যদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। কাউকে ছাড়া হবে না। আইন আইনের পথে চলবে। কলকাতা পুলিশ তার মতো কাজ করবে। বিজেপির উদ্দেশে মমতার হুঁশিয়ারি, মনে রাখবেন। এটা দিল্লি নয়, এটা কলকাতা, এটা বাংলা। কলকাতায় ‘গোলি মারো’ বরদাস্ত করা হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি তো বুঝতেই পারছি না, দিল্লিতে কেমন করে এই ঘটনা ঘটল। দিল্লির পুলিশ তো কেন্দ্রের হাতে। পুলিশ আছে, সিআরপিএফ আছে, এসএসবি আছে, আরও অনেক ফোর্স আছে। তার পরেও গোলমাল থামানো গেল না? বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ত্রিপুরা দখল করেছে ওরা। সেখানে কী ধরনের অত্যাচার চলছে, ভাবা যায় না। উত্তরপ্রদেশে মেয়েদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার হয়। তারা ডায়েরি করতে পারে না। তাদের পুড়িয়ে মারা হয়। যোগীজি, এর নাম প্রশাসন?
এদিন মমতা ফের সিএএ-র প্রসঙ্গ তুলে বলেন, কী দরকার ছিল এসব করার? যাঁদের ভোটে আপনারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁরা দেশের নাগরিক নন? আবার তাঁদের নতুন করে নাগরিকত্ব দেবেন? এই সিএএ-র জন্যই তো কত মানুষ মারা গেল। অসম, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি ধরে অন্তত তিন-চারশো মানুষ এখন পর্যন্ত মারা গিয়েছে। দিল্লিতে এখনও মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে। এখনও কত লোকের খোঁজ নেই। আরও কত দেহ পাওয়া যাবে, কে জানে।

Comments are closed.