কেন দলত্যাগ জানান মানুষকে! দলবদলকারীদের কেন্দ্র ধরে রাখতে ৪ কৌশল মমতার

ইদানীং দলের সংগঠনের দেখভাল নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন মমতা

ভোটের মরসুমে শাসক তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন একাধিক বিধায়ক। কেউ বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়েছেন কেউ আবার তৃণমূল বিধায়ক হিসেবেই গেছেন গেরুয়া শিবিরে। আসন্ন বিধানসভা ভোটে এই দল বদলুদের কেন্দ্র ধরে রাখতে চতুর্মুখী কৌশল নিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। 

ডোমজুড়ে রাজীব ব্যানার্জি কিংবা বালির বৈশালী ডালমিয়ার আসন কি তৃণমূল ধরে রাখতে পারবে? একইভাবে উত্তরপাড়ার প্রবীর ঘোষাল বা শান্তিপুরের অরিন্দম ভট্টাচার্যের আসনে কী হবে কৌশল? এখন ঘাসফুল শিবিরে তাই নিয়েই চলছে চর্চা। সূত্রের খবর, দলবদলকারীদের আসন ধরে রাখতে মূলত চারমুখী কৌশল নিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। কী সেই কৌশল? 

 

দলবদলের নেপথ্যে কী? 

রাজনীতির দলবদল পর্বের শুরু থেকেই মমতা ব্যানার্জি বলে আসছেন, কালো টাকা সাদা করতে বিজেপিতে যাচ্ছে ওরা। এবার এই কথা নিয়েই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাবে তৃণমূল। বোঝানো হবে দলে থেকে কাজ করতে পারছি না এই দাবিতে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার নেপথ্য কারণ কী? দলবদলকারীরা মানুষের জন্য কাজের দোহাই দিয়ে বিজেপিতে গেলেও আসলে যে উদ্দেশ্য একেবারে ব্যক্তিগত এবং অর্থকরী সম্পর্কিত তা মানুষকে বোঝানোর নির্দেশ দিয়েছেন দলনেত্রী। 

 

স্বচ্ছ ভাবমূর্তির বিকল্প প্রার্থী 

দলবদলকারীদের জায়গায় তৃণমূলকে নতুন প্রার্থী দিতে হবে। কিন্তু কারা হবেন বিকল্প প্রার্থী? দলনেত্রীর নির্দেশ রাজীব, মিহির, সব্যসাচীর কেন্দ্রে এমন প্রার্থী হবেন যাঁর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ। বিতর্ক থেকে বহুদূরে থাকেন এবং মানুষের জন্য কাজ করতে আগ্রহী। তিনি অরাজনৈতিক হলে ক্ষতি নেই। সূত্রের খবর ইতিমধ্যেই ২৯৪ কেন্দ্রে প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে ফেলেছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু ঘোষণার আগে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে চান মমতা।

 

১০ বছরের সাফল্যের খতিয়ান 

তৃণমূল এবার ভোটারের বাড়ি যাবে গত ১০ বছরের রেজাল্ট হাতে নিয়ে। কী হয়েছে এবং কী করার পরিকল্পনা আছে, তা স্পষ্ট করে জানানো হবে মানুষকে। উত্তর দিতে হবে সমস্ত প্রশ্নের। কোথাও ভুল হলে তা শুধরে নিতে হবে দ্রুত। মূলত গত ১০ বছর ধরে এলাকায় যে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে তার খতিয়ান সব মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার প্ল্যান করেছে তৃণমূল। 

 

মাঠে নেমে কাজ 

দলবদলকারীদের কেন্দ্রে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সম্ভাব্য প্রার্থীদের এখনই কাজে নেমে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টার্গেট বেঁধে দিয়ে বলা হয়েছে ভোট ঘোষণার আগেই প্রতি পঞ্চায়েতে অন্তত একটি করে সভা করে ফেলতে। পাশাপাশি দলত্যাগীদের সম্পর্কে এলাকায় ব্যাপক প্রচারের কৌশল নিচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি। 

আপাতত ঠিক হয়েছে, যে সব কেন্দ্রে পরিস্থিতি প্রতিকুল সেখানে দলনেত্রী নিজে যাবেন। সভা করবেন। হবে ক্লোজ ডোর মিটিং। ইদানীং দলের সংগঠনের দেখভাল নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন মমতা। ২৯৪ আসনেরই পর্যবেক্ষক একা মমতা। দীর্ঘদিন বাদে আবার তৃণমূল স্তরের নেতা-কর্মীদের কাছে কালীঘাট থেকে ফোন যাচ্ছে। জেনে নেওয়া হচ্ছে গ্রাউন্ড রিয়ালিটি। এখানেই শেষ নয়। পিকের টিম দলত্যাগীদের কেন্দ্রে আবার নতুন করে সমীক্ষা শুরু করে দিচ্ছে। সেখানে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ, দাবিদাওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য থাকবে। সপ্তাহ তিনেকের মধ্যে নতুন সমীক্ষা রিপোর্ট জমা পড়বে দলনেত্রীর অফিসে। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেন মমতা ব্যানার্জি।  

সবমিলিয়ে দলত্যাগী বিধায়কদের কেন্দ্র ধরে রাখতে চেষ্টার কসুর করছেন না তৃণমূল নেত্রী।

Comments are closed.