হেমতাবাদে রাজনৈতিক খুন হয়েছে প্রমাণ দিতে না পারলে পদ ছাড়ুন, উপাচার্যদের পাশে আছি, রাজ্যপালকে তীব্র আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর

আমরা কেউ ওনার চাকর-বাকর নই। বিজেপির মুখপাত্রের চেয়েও খারাপ কথা বলছেন রাজ্যপাল। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, সংবিধান- কোনও কিছুকেই পরোয়া করেন না। এবার বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে, সহ্যের সব সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে।

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে এই ভাষাতেই আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক থেকে ধনখড় সম্পর্কে মমতা বলেন, আমরা রাজ্যপালের পদমর্যাদা জানি। উনি (ধনখড়) রাজনৈতিক দলের মতো আচরণ করতে পারেন না।

প্রসঙ্গত, আচার্য তথা রাজ্যপাল ধনখড়ের ডাকা ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেননি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যেরা। এ নিয়ে বুধবারই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে সেই সুর আরও কয়েক ধাপ চড়িয়ে সরাসরি বিঁধেছেন রাজ্যকে। বলছেন, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা রাজনৈতিক খাঁচাবন্দি। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেন না অভিযোগ করেন তিনি। এদিন নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গতকালই রাজ্যপালের সঙ্গে চারবার ফোনে কথা হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব ও শিক্ষা দফতরের সেক্রেটারি। তারপরেও উনি অভিযোগ করেন সরকার আলোচনা করে না। এরপরেই সাংবাদিকদের সামনে অফিশিয়াল ডকুমেন্ট তুলে ধরে মমতা দেখান কী কী আলোচনা হয়েছে রাজ্যপালের সঙ্গে। মমতার কথায়, আমার সঙ্গে ফোনে চার বার কথা হয়েছে। একটা সরকার কোভিড, আমফানের বিরুদ্ধে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লড়াই করবে নাকি রাজ্যপালের একটার পর একটা কৌতূহলের জবাবদিহি করবে? কেন বিজেপি কর্মী মার খেলেন, কোথায় করোনায় ডেড বডি পোড়ানো হল, কেন বিজেপি কর্মী মারা গেলেন ইত্যাদি নানা প্রশ্নের জবাব চান রাজ্যপাল। কিন্তু উত্তর দেওয়ার পরও রাজ্যপাল অভিযোগ করেন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয় না। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে চাকর-বাকরের মতো আচরণ করছেন রাজ্যপাল, অভিযোগ মমতার। বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে রাজ্যপালের সমালোচনার উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উনি উত্তরপ্রদেশ, বিহার বা বিজেপি শাসিত রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে একবার তাকান। রাজ্যপাল প্রতিটি ক্ষেত্রে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ করেন মমতা। তাঁর কথায়, আমি কখনও যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ক্ষমতা দেখাতে যাইনি। সমস্যা মেটাতে বা দরকারে গেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতায় নাক গলাইনি। তবে এবার সব উপাচার্যদের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আমাদের একশো শতাংশ সমর্থন আছে উপাচার্যদের সঙ্গে।

সেই সঙ্গে হেমতাবাদের বিজেপি কর্মীর রহস্যমৃত্যুকে রাজ্যপাল রাজনৈতিক হত্যা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, কোথা থেকে এই তথ্য পেলেন রাজ্যপাল? তারপরই মমতা বলেন, এটা যে রাজনৈতিক খুন, তার প্রমাণ দিতে হবে জগদীপ ধনখড়কে। না দিলে রাজ্যপালের পদে থাকার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। রাজ্যপাল বিজেপি মুখপাত্রের চেয়েও ভয়ঙ্কর কথা বলছেন। রাজ্যপাল সংবিধান, আইনের পরোয়া করেন না বলেও অভিযোগ মমতার। রাজ্যপালের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ভোটের এখনও ঢের দেরি। ওঁর শুভবুদ্ধির উদয় হোক।

Comments are closed.