কলকাতা লিগে মোহনবাগান শেষ ম্যাচ। বিপক্ষ রেনবো এফসি। প্রথমার্ধে ম্যাচের ফল গোলশূন্য। দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। গোল পাচ্ছে না মোহনবাগান। আশঙ্কা বাড়ছে গ্যালারিতে। কারণ, ম্যাচটা মোহনবাগানের কাছে মরণ-বাঁচন। পয়েন্ট নষ্ট হলে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন শেষ। মোহনবাগানের যাবতীয় আক্রমণ আটকে যাচ্ছে রেনবো রক্ষণে। এমন সময় মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনা মাঠে নামলেন বছর উনিশের ছেলেটাকে। শেষ ম্যাচেও পরিবর্তন হিসেবে নেমে গোল করেছিল ছেলেটা। তবে জিততে পারেনি মোহনবাগান।
ছেলেটার নামার পর থেকেই ছটফট করছিল গোলের জন্য। একটা কর্ণার ভেসে এল রেনবো পেনাল্টি বক্সে। ছিপছিপে চেহারার ১৯ বছরের ছেলেটা লাফিয়ে উঠল। তার দুরন্ত হেড জড়িয়ে গেল জালে। এরপর ছেলেটা ছুটে গেল গ্যালারির দিকে। যেখানে তার বাবা বসে আছেন।
ম্যাচটা জিতল মোহনবাগান। ম্যাচের শেষে বছর উনিশের শুভ ঘোষকে নিয়ে তখন স্লোগান তুলেছেন সর্মথকরা। তার সামনে ক্যামেরায় ফ্ল্যাশ বাল্বের ঝলকানি। আর সেই সময় কল্যাণী স্টেডিয়ামের বাইরের অন্ধকার রাস্তা দিয়ে স্টেশনের দিকে এগিয়ে চলেছেন মোহনবাগানের নতুন নায়কের বাবা, বিজয় ঘোষ।
বাবার সঙ্গে শুভ
না, ছেলের সাফল্যের দিনে শুভর সঙ্গে দেখা হয়নি তার বাবার। কিছু করার ছিল না তাঁর। মাঠ থেকে ছুটেছিলেন শ্যামনগরে নিজের বাড়িতে। তারপর সেখান থেকে বিরাটি। গোটা রাত বিরাটি বিগবাজারে সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্ব পালন করেছেন। হ্যাঁ মোহনবাগানের নতুন নায়ক শুভ ঘোষের বাবা, পেশায় সিকিউরিটি গার্ড। সামান্য বেতনে ভীষণ কষ্ট করে চারজনের সংসার টানেন। তবু সেই কষ্টের আঁচ এসে পড়তে দেন না শুভর উপর। কারণ, বিজয় ঘোষ নিজে ফুটবলার ছিলেন। জেলাস্তরে চুটিয়ে ফুটবল খেলেছেন। কিন্তু পায়ের চোটের জন্য, বড় দলে খেলার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল। সেখান থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ছেলেকে ফুটবলার তৈরি করবেন।
শ্যামনগর তরুণ সংঘের পাশে এক চিলতে ঘরে থাকেন শুভ ঘোষ। স্থানীয় ক্লাবে ফুটবল শুরু করে মোহনবাগান ইয়ুথ সিস্টেমে যোগ দেন। গত চার বছর মোহনবাগানের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলার পর এ বছরের সিনিয়র দলে সুযোগ পেয়েছেন। গত মরসুমে যুব দলের জার্সিতে ১৭টি গোল করেছেন। এবছর সিনিয়র দলে যেটুকু সুযোগ পাচ্ছেন নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন এই বাঙালি স্ট্রাইকার। দারুণ উচ্চতা, জোরালো হেড এবং চোরা গতির জন্য ইতিমধ্যেই নজরে পড়েছেন। মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচ কিবু ভিকুনা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন শুভর।
আর তার বাবা চাইছেন, ছেলে বড় ফুটবলার হোক। তার না পাওয়ার আক্ষেপ পূরণ করুক। তাহলেই সারারাত জেগে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করার পরিশ্রম লাঘব হবে।