নন্দীগ্রাম আসলে যা ঘটেছিল #২৬: সিআরপিএফের সঙ্গে পুলিশের মারপিট! ফের উত্তপ্ত হল নন্দীগ্রাম

আগের পর্বে যা ঘটেছিল: ২০০৮ পঞ্চায়েত ভোটের দিন সকালে সিআরপিএফের ডিআইজি অলোক রাজকে ফোন করলেন সিপিআইএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। ফোনে তীব্র বাদানুবাদ হল দু’জনের……

 

নন্দীগ্রামে সবই সম্ভব

লক্ষ্মণ শেঠের সঙ্গে অলোক রাজের পুরো কথোপথন শুনে ততক্ষণে বুঝে গিয়েছি, আগের দিন সন্ধে থেকে সিআরপিএফের এই তৎপরতা পছন্দ করছে না শাসক দল। এবং অলোক রাজের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই যে তাঁর নামে মিথ্যে মমলা করা হয়েছে, তাও স্পষ্ট তমলুকের সাংসদের কথায়। ঠিক কোন সময়ে তিনি ৭ নম্বর জালপাইয়ে গিয়ে তল্লাশির নামে মহিলাদের শ্লীলতাহানি করেছেন তাও বলতে গিয়ে ফোনে হোঁচট খাচ্ছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। একবার বলছেন, ভোর সাড়ে চারটে, তো পরক্ষণেই বলছেন বিকেল সাড়ে চারটে। লক্ষ্মণ শেঠ ভালোমতোই জানতেন, সিআরপিএফ নন্দীগ্রামের সমস্ত বুথে নজরদারি করলে তাঁর দলের ক্যাডারদের আধিপত্য সত্ত্বেও সিপিআইএম জিততে পারবে না। কারণ, নন্দীগ্রামের জনমত সিপিআইএমের বিরুদ্ধেই ছিল। তাই সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছিলেন ভোটের দিন অলোক রাজের উপস্থিতিতে মানসিকভাবে উদ্বুদ্ধ সিআরপিএফের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করতে। তার জন্য প্রথমে মিথ্যে শ্লীলতাহানির অভিযোগ। তারপর ফোনে দীর্ঘ কথা, হুঁশিয়ারি এবং নানাভাবে সাংসদের ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করার পর ভোটের দিন সকাল সাড়ে ন’টার মধ্যে বুঝে গেলেন, অলোক রাজকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এরপরই সিআরপিএফের বিরুদ্ধে পুলিশ নামিয়ে দিল সিপিআইএম। ভোটের দিন শেষ অস্ত্র, শাসক দলের প্রতি আনুগত্য প্রমাণে মরিয়া পুলিশ এবং প্রশাসন!

প্রায় ১০টা বাজে। সকাল থেকে অলোক রাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং তাঁর খোঁজে দৌড়াদৌড়ির মধ্যে দেখারই সুযোগ হয়নি, কেমন ভোট হচ্ছে নন্দীগ্রামে। কিন্তু এখন তা দেখার সময়ও নেই। অলোক রাজের সঙ্গে লক্ষ্মণ শেঠের পুরো কথোপকথন সঙ্গী শ্যামল জানার ক্যামেরায় বন্দি। যত দ্রুত সম্ভব অফিসে পাঠাতে হবে। কোনও নির্বাচনে রাজ্যে শাসক দলের সাংসদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসারের এমন তর্কাতর্কি দেখা বিরল ঘটনার মধ্যেই পড়ে। বিরোধী দলের নেতাদের পুলিশের ভূমিকায় এমন উত্তেজিত হতে বহু দেখেছি, কিন্তু তা বলে ২৩৫ বিধানসভা আসন পেয়ে সরকার গড়া বাম আমলে প্রবল পরাক্রান্ত সিপিআইএম সংসদের এমন উত্তেজিত আচরণ সংবাদমাধ্যমের কাছে অতীব মূল্যবান সম্পদ। তেখালি ব্রিজ দেখে গাড়িতে উঠে তাড়াতাড়ি রওনা দিলাম গড়চক্রবেড়িয়া দিকে, ওখানে ওবি ভ্যান রয়েছে। যাওয়ার সময় অলোক রাজকে বলে গেলাম, নতুন করে কিছু ঘটলে জানাতে।

দ্রুত গাড়ি ছুটছে, কোথাও দাঁড়ানোর সময় নেই। কিন্তু যেতে যেতে দেখছি মহেশপুর, আমগেছিয়া, চৌরঙ্গি, হাজরাকাটা, রাজারামচক সব জায়গায় ভোটের বুথে লম্বা লাইন। সেদিন প্রচণ্ড গরম, কিন্তু ছাতা মাথায় পুরুষ এবং মহিলাদের লাইন এঁকেবেঁকে কোথাও কোথাও বুথ কেন্দ্র ছাড়িয়ে পিচ রাস্তায় গিয়ে উঠেছে। ভোটের এই প্রবল উৎসাহের থেকেও অবাক করা ব্যাপার, ভোটের তিন ঘণ্টা হয়ে গেল, একটাও অভিযোগ জানিয়ে ফোন এল না তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের থেকে। এও গ্রাম বাংলার ভোটের এক বিরল অভিজ্ঞতা। অথচ কাল সন্ধে পর্যন্ত এত মানুষ সিপিআইএমের বিরুদ্ধে হুমকির অভিযোগ তুলে বিডিও অফিসের সামনে বসেছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, এসইউসিআই নেতারা বারবার বলছিলেন, তাঁদের অভিযোগ নিয়ে খবর করার জন্য। আর আজ ভোটের দিন ম্যাজিকের মতো বিরোধীদের সব অভিযোগ ভ্যানিশ। সত্য গণতন্ত্র, কী বিচিত্র এই নন্দীগ্রাম!

ওবি ভ্যানে ক্যাসেট দিয়ে কালীচরণপুরে একটা ছোট্ট চায়ের দোকানে বসলাম। সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। বিস্কুট, কেক, চা খাচ্ছি, আর ভাবছি সারাদিনের কাজ মোটামুটি শেষ। অলোক রাজ ও লক্ষ্মণ শেঠের তর্কাতর্কির পুরো ভিস্যুয়াল একবার অফিসে পৌঁছে গেলে আর কোনও খবর চলবে না। এর থেকে বড়ো কিছু ঘটা সম্ভব নয়। এক বয়স্ক ব্যক্তি চা খেতে এলেন দোকানে। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলাম।

‘পুলিশের উপর আমাদের কোনও রাগ নেই। বরং প্রথমদিন তো পুলিশকে আমাদের গ্রামের ছেলেরাই তাড়া করেছিল। কিন্তু সিপিআইএমের লোকজন যা করেছে, কোনওদিন ভুলতে পারব না। মেয়ে, নাতনিকে নিয়ে ঘর বন্ধ করে বসে থেকেছি টানা তিনদিন। কখন হার্মাদরা এসে দরজায় ধাক্কা দেবে, এই ভয়ে।’ কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন বয়স্ক ব্যক্তি। দোকানে আর কেউ নেই। মাঝবয়সী দোকানদার চা বানাচ্ছেন। মুখ বুজে শুনছেন চেনা প্রতিবেশীর চেনা স্মৃতি….। একটাও কথা নেই দোকানদারের মুখে, শুধু সম্মতিসূচক ঘাড়নাড়া আছে।

‘এটা কোন সময় ঘটনা,’ জিজ্ঞেস করলাম।

‘১৪ মার্চ বিকেলে। পুলিশের গুলি চালানোর পর। না না, নভেম্বর। নভেম্বরে। ৮ বা ৯ তারিখ হবে। ওদিনই আমাদের এলাকা দখল করেছিল সিপিআইএমের ছেলেরা। বেশিরভাগকেই চিনি না। সব বাইরের। কালো গেঞ্জি, হাফ প্যান্ট পরা। কাঁধে বন্দুক। ডাকাতদের মতো দেখতে সব। এর বাড়ি থেকে ছাগল নিয়ে যাচ্ছে, ওর বাড়ি থেকে মুরগি নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের চোখের সামনে এত দিনের পোষা মুরগি, ছাগল, গরু কেটে খেয়েছে। মেয়ে, বউদের হাত ধরে টানছে। কারও কারও বাড়িতে ঢুকে টাকা, পয়সা, গয়না যা পেয়েছে হাতের সামনে, নিয়েছে। কত সাইকেল, মোটরসাইকেল ভেঙে পুড়িয়ে দিয়েছে।’ বলেই চলেছেন ওই বৃদ্ধ। চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। দীর্ঘদিন বুকে চেপে রাখা যন্ত্রণা অচেনা কাউকে বলে যেন একটু হালকা হলেন। মনে পড়ল, গত বছর ১২ নভেম্বর এই গড়ক্রবেড়িয়ার মোড় পর্যন্ত এসেছিলাম নবকুমার সামন্তর মোটরসাইকেলে। আসার সময় সোনাচূড়া, গড়চক্রবেড়িয়ার মোড়ে আমার চোখে দেখা ছেলেদের চেহারার সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে এই বৃদ্ধের বর্ণনা। এই কালীচরণপুরের পঞ্চায়েত অফিস পর্যন্তই তো সেদিন হেঁটে এসেছিলাম কোনও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলতে। একটা লোকেরও দেখা পাইনি সেদিন। সব ঘরের দরজা বন্ধ, একটা আতঙ্কের গা ছমছমে পরিবেশ ছিল গোটা এলাকায়। আজ ১১ মে, এতদিন বাদে সেই ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য শুনলাম।

‘কী দিন গেছে আমাদের। সে ঘটনা বলে আপনাকে বোঝাতে পারব না। বাড়ি বেছে বেছে অত্যাচার হয়েছে। স্থানীয় দু’একটা ছেলে ছিল, তারা শুধু চিনিয়ে দিয়েছে, কারা আন্দোলনে ছিল। কিন্তু জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে আন্দোলনে তো সবাই ছিল। আরও লোকের সঙ্গে কথা বলুন, সব জানতে পারবেন।’ দোকান থেকে উঠে পড়লেন বৃদ্ধ।

‘ভোট দিয়েছেন,’ জিজ্ঞেস করলাম।

‘হ্যাঁ, সক্কালবেলায় দিয়ে দিয়েছি।’ ততক্ষণে চায়ের দোকানদার গ্লাস ধুয়ে দোকান গোছাতে শুরু করেছেন। তাঁর দিকে তাকাতেই বললেন, ‘ভোট দিতে যাব, দোকান বন্ধ করছি। বিকেলে খুলব।’

‘তবে জানবেন, পুলিশের ওপর আমাদের তেমন রাগ নেই। কিন্তু সিপিআইএমকে  এখানকার মানুষ কোনওদিন ক্ষমা করতে পারবে না।’ যেতে  যেতে বলে গেলেন কালীচরণপুরের বাসিন্দা ওই বৃদ্ধ। একটু অন্যভাবে, অন্য ভাষায় সেই নভেম্বরেই তো এক বয়স্ক মহিলা প্রায় একই কথা বলেছিলেন, ‘এলাকার দখল লিছে, মানুষের লয়।’ সেই কথার মানে আজ পুরোটা বোঝা গেল।

সূর্য প্রায় মাথার ওপরে। রোদের গনগনে তাপে পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু নন্দীগ্রামের মানুষ কুছ পরোয়া নেই জেদ নিয়ে ভোর থেকে ঠায় বুথের সামনে দাঁড়িয়ে। চায়ের দোকানে ওই বয়স্ক ব্যক্তির কথা মনে পড়ছে। নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি। কিন্তু যা শুনলাম, শুধু ভাবছি, প্রায় ছ’মাস ধরে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা জারি করে রাখার পরেও সিপিআইএম জিতবে তো? কিন্তু বিরোধীরাই বা জিতবে কীভাবে? একটা বুথেও এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পারেনি। মানুষ বুথে তো ঢুকছে, কিন্তু ভোট ঠিকমতো দিতে পারছে তো? তবে অলোক রাজের সঙ্গে লক্ষ্মণ শেঠের টেলিফোনের তর্কাতর্কির থেকে যা কম আশ্চর্যের নয়, তা হল, চার ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে, বিরোধীদের একটাও ফোন আসেনি। কালও যাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, সবাইকে বলা ছিল, কোনও সমস্যা হলেই ফোন করবেন। এমনকী, সুফিয়ান বা তাহেরও ফোন করছেন না। কোনও ফোন নেই শুভেন্দু অধিকারীরও!

সিপিআইএমের বিভিন্ন জায়গার স্থানীয় কিছু নেতাকে চিনতাম। তাঁদের অনেককে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী অবস্থা ভোটের?’ ‘সব ঠিক আছে চিন্তার কিচ্ছু নেই। সব সিট জিতব।’ আত্মবিশ্বাসী গলা শাসকদলের মোটরবাইক বাহিনী এবং স্থানীয় নেতাদের। কী ম্যাজিক হচ্ছে নন্দীগ্রামে, কে জানে। কোনও পক্ষেরই কোনও অভিযোগ নেই। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে, কিন্তু তাদেরই যখন কোনও তাপ উত্তাপ নেই, আর আমি বহিরাগত উলুখাগড়া, কেন অযথা গরমে পুড়ে প্রাণ দিই! একজনের বাড়িতে দুপুরে ভাত খাওয়ার কথা ছিল। আমি আর শ্যামল সেখানে পৌঁছে গরম ভাত, ডাল, সব্জি খেয়ে একটা গাছের ছায়ায় গাড়ি থামিয়ে দিলাম। ভোর থেকে অনেক দৌড়াদৌড়ি হয়েছে। প্রায় দেড়টা বাজে। গাছের তলায় বসে বিশ্রাম করছি। সূর্য এবার আস্তে আস্তে পশ্চিমদিকে হেলার প্রস্তুতি নেবে। পাঁচটা পর্যন্ত ভোট। আরও প্রায় তিন ঘন্টা বাকি। বুঝতেও পারিনি, গাছের তলায় বিশ্রাম নিতে বসে কখন চোখ বুজে এসেছে। তন্দ্রাটা ভাঙল মোবাইল ফোনের আওয়াজে। ধড়ফড় করে উঠে বসলাম। বেশিক্ষণ তো হয়নি। সওয়া দুটো মাত্র বাজে। কিন্তু ধড়ফড় করে উঠেই মনে হল, ঘন্টা দুয়েক ধরে ঘুমিয়ে আছি। বুক পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখি নন্দীগ্রাম থানার এক পুলিশ অফিসারের ফোন। সোজা হয়ে বসে ফোন ধরলাম। ‘কোথায় আছো?’

‘গড়চক্রবেড়িয়া।’

‘একটা বড়ো ঘটনা ঘটেছে। গোকুলনগরের কাছে অধিকারীপাড়ায়।’

আবার বড়ো ঘটনা? অবশ্য ছোট ঘটনাই যদি ঘটবে, তবে জায়গাটার নাম নন্দীগ্রাম কেন? তবুও প্রথমেই মনে হল, সকালে এত বড়ো ঘটনা ঘটল। তার থেকে বড়ো আর কী হতে পারে? জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী হয়েছে?’

‘সিআরপিফের সঙ্গে আমাদের ফোর্সের মারপিট হয়েছে। আমি স্পটে আছি। আরও বড়ো ঝামেলা হয়ে যেতে পারে।’

ভরদুপুরে খটখটে রোদে মাথায় বাজ পড়লেও এত অবাক হতাম না। বলেটা কী? এমনও আবার হয় নাকি কখনও? পুলিশের সঙ্গে সিআরপিএফের মারপিট? জীবনে শুনিনি।

‘কখন হল, কীভাবে হল?’ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

‘এত কিছু ফোনে বলা যাবে না। এই মাত্র হয়েছে। পাঁচ মিনিট আগে। ওরা এক দিকে দাঁড়িয়ে আছে, অন্যদিকে আমরা। এখানে প্রচণ্ড উত্তেজনা রয়েছে।’

ফোনে কথা বলতে বলতে শুনতে পাচ্ছি, পিছনে টানা মহিলাদের চিৎকার হচ্ছে। এক মিনিটের মধ্যে গাড়িতে উঠে ছুটলাম অধিকারীপাড়ার দিকে। এখান থেকে বেশিক্ষণ লাগবে না। সত্যি কী বিচিত্র এই নন্দীগ্রাম। এখানে শাসক দলের সাংসদ কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনীর প্রধানকে ফোন করে ধমক দেন। দু’জনের তর্কাতর্কি হয়। আবার এখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে রাজ্য পুলিশের মারপিটও হয়। কাল বিকেল থেকে বারবার এটাই মনে হচ্ছিল, ভোটটা সিপিআইএম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে নয়, হচ্ছে রাজ্য পুলিশ এবং সিআরপিএফের মধ্যে। এতক্ষণের দু’দলের মধ্যে মারপিটে ষোলো কলা পূর্ণ হল। এটাই যা হওয়ার বাকি ছিল।

মিনিট কুড়ির মধ্যে পৌঁছে গেলাম অধিকারীপাড়া। প্রচুর মহিলা, পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে, চিৎকার করে গালিগালাজ করছে। একপাশে দাঁড়িয়ে আছেন অফিসার, কনস্টেবল মিলে নন্দীগ্রাম থানার ১৫-২০ জন পুলিশ। নন্দীগ্রাম থানার ওসি দেবাশিস চক্রবর্তী ফোনে কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতে পায়চারি করছেন। ১০০ ফুট দূরে মাঠে দাঁড়িয়ে সিআরপিএফের ১০-১২ জন জওয়ান। কী হয়েছে, কিছু বোঝা যাচ্ছে না। শ্যামল গাড়ি থেকে নেমেই ছবি তুলতে শুরু করে দিয়েছে। আমি লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করছি, ঘটেছেটা কি? কিন্তু লোকজন কোথায় কী হয়েছে বলবে! তা না, শুধু পুলিশকে এক নাগাড়ে গালাগালি করে চলেছেন কয়েকজন মহিলা। পুলিশের হাতে ভোটার আইডেন্টিফিকেশন কার্ড। মহিলারা শুধু চিৎকার করছেন, ‘কেন আমাদের ভোট দিতে দেবে না? ভোট আমরা দেবই। দিল্লির পুলিশ আমাদের ভোট দিতে নিয়ে যাচ্ছিল। ওর আটকে দিয়েছে।’ যে যার মত চিৎকার করছে। পরিষ্কার করে কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তার মধ্যেই অনেকের সঙ্গে কথা বলে ১০-১৫ মিনিট বাদে মোটামুটি বুঝলাম, অধিকারীপাড়ার একটা গ্রামের কয়েকটা পরিবার সকাল থেকে ভোট দিতে যেতে পারেনি। সাকুল্যে ভোটার হবে ৬০-৭০ জন। তাদের অভিযোগ, সিপিআইএমের হুমকির জন্যই তারা বেরতে পারছিল না বাড়ি থেকে। শেষ পর্যন্ত তারা দলের নেতাদের খবর দেয়। নেতারা খবর দেন সিআরপিএফকে। কিছুক্ষণ আগে সিআরপিএফের টহলদারি বাহিনী গ্রামে এসে পৌঁছয়। সবাইকে একসঙ্গে লাইন করে নিয়ে যাচ্ছিল ভোটের বুথে। সেই সময় স্থানীয় সিপিআইএমের কিছু লোকজন এবং পুলিশ তাদের বুথে যেতে বাধা দিয়েছে। সিপিআইএম এবং তৃণমূল সমর্থকরা নিজেদের মধ্যে গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়ে। মাঝখান থেকে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায় সিআরপিএফ এবং রাজ্য পুলিশের মধ্যে। পুলিশের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনী তাদের অধীনে কাজ করছে। তাই তাদের নির্দেশ ছাড়া নিজে থেকে কোনও কাজ বা আলাদাভাবে টহলদারি তারা করতে পারবে না। সিআরপিএফের বক্তব্য, গ্রামবাসীরা বাড়ি থেকে বেরতে পারছে না বলে তাদের কাছে ফোন এসেছিল। তাই সাধারণ মানুষের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে গিয়েছিল তারা। এর মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। শুধু তাই নয়, এই কাজের জন্য পুলিশ বাধা দিতে পারে, এমনটা তাদের ভাবনারও বাইরে। কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম, সিআরপিএফের হিন্দীভাষী জওয়ানরা রাগে ফুঁসছে। ভাবখানা এমন, সামনে দাঁড়ানো অফিসারের কড়া নির্দেশ এবং উর্দি না থাকলে এতক্ষণে বাংলা পুলিশকে তারা উপযুক্ত শিক্ষা দিত। এই ভাবনার মধ্যে ভুলও কিছু নেই। রাজ্য পুলিশের অধিকাংশেরই তো শরীর চলে না, মাথা চলে। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম অবশ্য আছে, যাদের শরীর এবং মাথা দুটোই চলে। প্রয়োজনের থেকে একটু বেশিই চলে। এমনই একজনে নন্দীগ্রাম থানার ওসি দেবাশিস চক্রবর্তী। তিনি অনবরত ফোনে কথা বলছেন। ফোন রেখে বললেন, ‘সিআরপিএফ এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছে, আমরা থানায় কেস শুরু করছি ওদের নামে।’

এই অধিকারীপাড়াতেই কয়েকদিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঢুকতে দেয়নি সিপিআইএমের লোকজন। আর আজ ভোটের দিন এখানেই সিআরপিএফের সঙ্গে পুলিশের গণ্ডগোল। পুরো ব্যাপারটা বুঝে, গ্রামবাসীদের বক্তব্য রেকর্ড করতে করতে এক ঘন্টারও বেশি লেগে গেল। তারপর স্টোরি পাঠালাম অফিসে। এখানকার কাজ শেষ। আর কিছু হবে না। প্রায় চারটে বাজে, অধিকারীপাড়া থেকে বেরিয়ে গেলাম ভাঙাবেড়া ব্রিজের দিকে। ব্রিজের কাছেই সোনাচূড়া অঞ্চলে সিপিআইএমের প্রতীকে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থী হয়েছিলেন নবকুমার সামন্ত। ভাঙাবেড়া ব্রিজের ঠিক আগে পূর্বদিকে ১০০ মিটার গেলে নবকুমার সামন্তর বুথ। গাড়ি থেকে নেমে একটু এগোতেই এগিয়ে এল কয়েকটা ছেলে। গাছের তলায় বসেছিল। মুহূর্তের মধ্যে চলে এল নবকুমারও।

‘বিতনুদা, আজ আর বুথের দিকে যাবেন না। প্লিজ আজ  ছেড়ে দিন। এখানে সব ঠিক আছে। কোনও সমস্যা নেই।’ মার্জিত গলা আগের বছর ৭ জানুয়ারি প্রকাশ্যে খুন হওয়া শঙ্কর সামন্তের ভাইয়ের। ভোটের দিন এমন অভিজ্ঞতা আমার আছে। এসব ক্ষেত্রে জোর করে বুথে গিয়েও কোনও লাভ হয় না। বুথের সবাই সমস্বরে বলে উঠবে, এখানে সব ঠিকঠাক আছে। গাড়িতে উঠে পড়লাম ফেরার জন্য। দেখতে গেছিলাম ভাঙাবেরা এলাকার ভোট। দেখতে হলো না, বুঝে গেলাম কেমন ভোট হচ্ছে। পাঁচটার দিকে এগোচ্ছে ঘড়ির কাঁটা। গাড়িতে উঠে রওনা দিলাম নন্দীগ্রাম থানার দিকে। যেতে যেতেই ভোট শেষ হয়ে যাবে। গরমকালে গ্রামে অনেক সময়েই নির্দিষ্ট সময়ের পরেও বুথে লম্বা লাইন থাকে। কারণ, দুপুরের প্রচণ্ড গরমটা পার করে অনেকেই বিকেলে ভোট দিতে যান। কিন্তু এখানে আজ অন্য ছবি, সক্কাল থেকে লাইন ফাঁকা যায়নি এক মুহূর্তের জন্য। তাই অধিকাংশ বুথেই ভোট প্রায় শেষ। ছ’টা নাগাদ দু’একজন অফিসারকে ফোন করে খবর নিলাম, গোটা নন্দীগ্রামে ভোট মোটামুটিভাবে শেষ। কয়েকটা বুথে ব্যালট পেপার গোছানোর কাজ চলছে, অধিকাংশ জায়গায় তাও শেষ হয়ে গেছে।

ভোটের পর রাত পর্যন্ত অনেক তৃণমূল নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বললাম। কেউই কিছু বুঝতে পারছেন না, রেজাল্ট কী হবে। অন্যদিকে তুমুল আত্মবিশ্বাসী জেলার সিপিআইএম নেতৃত্ব।

রেজাল্ট

নন্দীগ্রামে গ্রাম পঞ্চায়েত মোট ১৭টি। এক নম্বর ব্লকে ১০ টি, দু’নম্বর ব্লকে ৭ টি এবং নন্দীগ্রাম সম্পর্কে অবহিত মানুষমাত্রই জানেন, আন্দোলন শুরু হয়েছিল এক নম্বর ব্লকে ।

 

নন্দীগ্রাম ব্লক -১

১) ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১৬

তৃণমূল কংগ্রেস ১৪

সিপিআইএম ০

নির্দল ২

২) দাউদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১০

তৃণমূল কংগ্রেস ৭

সিপিআইএম ২

কংগ্রেস ১

৩) গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১৩

তৃণমূল কংগ্রেস ৭

সিপিআইএম ৫

আরএসপি ১

৪) হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১০

তৃণমূল কংগ্রেস ৯

সিপিআইএম ০

সিপিআই ১

৫) কালীচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১০

তৃণমূল কংগ্রেস ৮

সিপিআইএম ১

সিপিআই ১

৬) কেন্দামারি জালপাই গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১২

তৃণমূল কংগ্রেস ৯

সিপিআইএম ১

কংগ্রেস ১

এসইউসিআই ১

৭) মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১১

তৃণমূল কংগ্রেস ৮ সিপিআইএম ০

কংগ্রেস ২

নির্দল ১

৮) নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১১

তৃণমূল কংগ্রেস ১১

সিপিআইএম ০

৯) সামসাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত,  মোট আসন ১১

তৃণমূল কংগ্রেস ৮

সিপিআইএম ২

কংগ্রেস ১

১০) সোনাচূড়া গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১১

তৃণমূল কংগ্রেস ৭

সিপিআইএম ৩

ফরওয়ার্ড ব্লক ১

 

নন্দীগ্রাম ব্লক ২

১) আমদাবাদ ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১১

তৃণমূল কংগ্রেস ৬

সিপিআইএম ৫

২) আমদাবাদ ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১১

তৃণমূল কংগ্রেস ৩

সিপিআইএম ৮

৩) বিরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে, মোট আসন ১৬

তৃণমূল কংগ্রেস ৯

সিপিআইএম ৪

আরেসপি ১

নির্দল ২

৪) বয়াল ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ৯

তৃণমূল কংগ্রেস ৫

সিপিআইএম ২

সিপিআই ১

নির্দল নির্দল ১

৫) বয়াল ২ নম্বার গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১১

তৃণমূল কংগ্রেস ১১

সিপিআইএম ০

৬) খোদামবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১০

তৃণমূল কংগ্রেস ১০

সিপিআইএম ০

৭) খোদামবাড়ি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত, মোট আসন ১১

তৃণমূল কংগ্রেস ৮

সিপিআইএম ৩

নন্দীগ্রামের দুটি ব্লক মিলে ১৭ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১৯৪  আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের পেল ১৪০ টি। কোনও বুথে এজেন্ট ছাড়া এবং আগের বছর নভেম্বরে সিপিআইএমের অপারেশন সূর্যোদয়ের পর ছ’মাস ধরে কার্যত কোনও প্রচার ছাড়াই। অন্যদিকে দোর্দণ্ডপ্রতাপ  সিপিআইএম পেল মাত্র ৩৬ টি আসনে। জিতল মাত্র একটি গ্রাম পঞ্চায়েত, আমদাবাদ ২ নম্বর। ২০০৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে নন্দীগ্রাম  চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, ভোটে জেতার জন্য এলাকায় আধিপত্য, পুলিশি সাহায্য, সাংগঠনিক শক্তি এবং বিরোধী দলের এজেন্টহীন বুথ, কোনটাই যথেষ্ট নয়। শাসক দলেকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য মানুষের ইচ্ছেশক্তি এবং জেদ যখন তীব্র হয়, তখন একদিনও বাড়ি ঘুরে ঘুরে প্রচার না করা এলেবেলে প্রার্থীও জিতে যায় অনায়াসে। তখন মানুষের পিঠ দেয়ালে এমনভাবে ঠেকে যায়, সে বুঝে নেয়, এই নির্বাচনে পরাজয় মানে, জীবিকা থেকে পাকাপাকি উচ্ছেদ, অনিশ্চিয়তার হাত ছেড়ে দেওয়া নিজের, পরিবারের জীবন, যা কার্যত মৃত্যুরই শামিল। আর যে রাজনৈতিক লড়াইয়ে পরাজয় মানে মৃত্যু, সেখানে জয়ের স্পৃহা সর্বাত্মক, যা ভেঙে ফেলতে পারে ইস্পাত কঠিন ব্যারিকেডও।

গ্রাম পঞ্চায়েতের মতোই পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ আসনেও পর্যুদস্ত হল সিপিআইএম।

নন্দীগ্রাম ১ নম্বর ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতির ২৭ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস জিতল ২১ টি আসনে। সিপিআইএম ৩ টি, কংগ্রেস ২ টি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ১ টি আসন পেল। ২ নম্বর ব্লকের ১৯ টি  আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পেল ১৪ টি। সিপিআইএম ৪ টি এবং আরএসপি ১ টি আসনে জিতল। সেই সঙ্গে নন্দীগ্রামে জেলা পরিষদের ৪ টি আসনের ৩ টি জিতল তৃণমূল কংগ্রেস। ২ নম্বর ব্লকের ১ টি আসন জিতল সিপিআইএম।

 

পড়ুন আগের পর্ব: নন্দীগ্রাম আসলে যা ঘটেছিল #২৫: মিঃ শেঠ হাউ ক্যান ইউ ডিরেক্ট মি? সিপিএম নেতাকে বললেন অলোক রাজ

মুজাফফর আহমেদ ভবনের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অনুমোদনে সংঘটিত হয় ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে নন্দীগ্রাম পুনর্দখলের অভিযান, যা এক ধাক্কায় খাদের কিনারে নিয়ে ফেলেছিল বামফ্রন্ট সরকারকে। সেই বছরই ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে পুলিশ অভিযানের পর প্রশাসনের ওপর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই আলগা হয়ে গিয়েছিল।

সরকারের দৈনন্দিন সিদ্ধান্তে বেড়ে গিয়েছিল আমলাদের ভূমিকা। কিন্তু ২০০৭  সালের নভেম্বরে নন্দীগ্রামে সিপিআইএমের সশস্ত্র অভিযানের পর রাজ্যজুড়ে যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়, তার ফল হয়েছিল মারাত্মক। ডুবন্ত জাহাজ থেকে যেভাবে ইঁদুরও জলে ঝাঁপ দেয়, সেভাবেই আইএএস, আইপিএ সহ রাজ্যের অধিকাংশ আমলা প্রবল পরাক্রান্ত সিপিআইএমের সঙ্গ ছাড়তে শুরু করেছিলেন। আর ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে নন্দীগ্রামকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের রেজাল্ট রাজ্যে মৌলিক পরিবর্তন এনে দিল। বহু ক্ষেত্রেই মন্ত্রীদের নির্দেশ সরাসরি অস্বীকার করতে শুরু করলেন আমলারা। কিছু কিছু ঘটনায় কয়েকজন আমলা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পর্যন্ত মানতে অস্বীকার করেন। হাত থেকে  তরোয়াল পড়ে গিয়েছিল আগেই। পঞ্চায়েত ভোটের পর কার্যত পাপেট মুখ্যমন্ত্রীতে পরিণত হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রশাসনে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ল। প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই হাতে তুলে নিল তৃণমূল কংগ্রেস। মহাকরণ কার্যত চলে গেল হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে। রাজ্যের ডিফ্যাক্টো মুখ্যমন্ত্রী হয়ে উঠলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভায় ২৩৫ আসন নিয়েও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারি কোনও সিদ্ধান্ত আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সঙ্গে নিতে পারছিলেন না।

চলবে

(১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে নন্দীগ্রাম আসলে যা ঘটেছিল। প্রতি পর্বে লাল রং দিয়ে আগের পর্বের লিঙ্ক দেওয়া থাকছে)

Comments are closed.