হরিয়ানার পর কি এবার উত্তর প্রদেশেও এনআরসি? সাক্ষাৎকারে ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রী যোগীর

ভোটের মুখে রাজ্যে এনআরসি করা হবে বলে ইতিমধ্যেই শোরগোল ফেলে দিয়েছেন বিজেপি শাসিত হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টার। এবার কার্যত একই সুর শোনা গেল উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গলাতেও। সোমবার ইংরেজি দৈনিক দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যোগী আদিত্যনাথ প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূয়সী প্রশংসা করে উত্তর প্রদেশেও অসমের ধাঁচে এনআরসির ইঙ্গিত দিয়েছেন।

রবিবার বিজেপির জন সম্পর্ক অভিযানে বেরিয়ে পঞ্চকুলায় জাস্টিস এইচ এস ভাল্লার বাড়িতে গিয়েছিলেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রাজ্যে এনআরসি করা হবে। এবিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন। পরে বিবৃতি জারি করে হরিয়ানা সরকার জানায়, হরিয়ানার বাসিন্দাদের জন্য পরিচয়পত্র তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। এনআরসি লাগু করার সময় যে ডেটাবেস কাজে লাগবে।

তারপর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই প্রতিবেশী উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে উঠে এল এনআরসি প্রসঙ্গ। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যোগী আদিত্যনাথ বলেন, যেভাবে আদালতের রায় বাস্তবায়নে পদক্ষেপ করেছে সরকার তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সাহসী সিদ্ধান্ত। এজন্য প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অভিনন্দন জানাতে চাই। এই ব্যাপারগুলো ধাপে ধাপে লাগু করতে হয়। আমার মনে হয় উত্তর প্রদেশের ক্ষেত্রে তা প্রয়োজন মনে করলে, এনআরসি করা হবে। অসমে যেভাবে এনআরসি লাগু করা হল, তা থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন আছে। এক্ষেত্রে আমাদের মডেল অসম। আমরা এখানেও ধাপে ধাপে এনআরসি লাগু করতে পারি। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। বলেন যোগী আদিত্যনাথ।

যোগীর সুরে সুর মিলিয়ে বিহারেও এনআরসির দাবি জানিয়েছেন গিরিরাজ সিংহ। যদিও জেডিইউ ঘোষিতভাবে এনআরসির বিরোধী। গিরিরাজের দাবি, জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরেই বিহারে এনআরসি হওয়া উচিত।

৩১ শে অগাস্ট অসমে প্রকাশিত হয়েছে এনআরসি। তাতে বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম। সাধারণ মানুষ তো বটেই, ভারতের চন্দ্রযান ২ অভিযানের অন্যতম মস্তিষ্ক বিজ্ঞানী জিতেন্দ্রনাথ গোস্বামীর নাম। পরিস্থিতি এমনই যে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাসি এখন এনআরসি বিরোধিতায় নেমেছে অসম বিজেপিও। ভুলে ভরা এনআরসি বাতিল করে নতুন করে এনআরসি করার কথাও ইতিমধ্যেই বলতে শুরু করেছেন অসম বিজেপির নেতারা। অভিযোগ উঠছে, এনআরসিতে নাম থাকা ব্যক্তিদেরও বিদেশি তকমা দিয়ে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে পাঠাচ্ছে অসম সরকার। এদিকে অসমের গোয়ালপাড়ায় ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে দেশের বৃহত্তম ডিটেনশন সেন্টার তৈরির কাজ। সূত্রের খবর, মহারাষ্ট্রেও ডিটেনশন সেন্টার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে

এই প্রেক্ষিতে ভোটের ঠিক মুখে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী খট্টারের এনআরসি-দাবি এবং সেই দাবির একদিনের মধ্যেই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর এনআরসি নিয়ে বয়ানকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

Comments are closed.