NRC: ১৯ লক্ষ মানুষের নাম তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার এক বছর! রিভেরিফিকেশনের দাবি তুলল অসম সরকার, এখন ডিটেনশন সেন্টারে ৪২৫ জন

করোনা ও বন্যা, জোড়া সঙ্কটে কিছুদিন ধামাচাপা থাকার পর ফের অসমে মাথাচাড়া দিচ্ছে NRC ইস্যু। গত বছর ৩১ অগাস্ট ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস বা NRC তালিকা প্রকাশিত হয়। তার বর্ষপূর্তির দিনই অসম বিধানসভায় উত্তাপ ছড়াল এনআরসি ইস্যু। অসমের বিজেপি সরকার জানিয়ে দিল, তারা এনআরসির ১০-২০ শতাংশ রিভেরিফিকেশন বা আবার খতিয়ে দেখার দাবি থেকে সরছে না।
সোমবার অসম বিধানসভার অধিবেশন শুরু হয়। সেখানেই সরকারের মুখপাত্র তথা সিনিয়র মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি ফ্লোরে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেন। ঘটনাচক্রে সেদিনই এনআরসি তালিকা প্রকাশের এক বছর পূর্ণ হয়।
সেই তালিকায় প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছিল। বাদ যাওয়া এই বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার অবশ্য ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার পথ খোলা। কিন্তু সেই কাজ প্রায় কিছুই এগোয়নি। এ জন্য করোনা পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন সরকারি আধিকারিকরা।
সোমবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মন্ত্রী পাটোয়ারি বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় নাম ধরে ধরে ২০ শতাংশ এবং বাকি অসমে ১০ শতাংশ এলাকায় রি-ভেরিফিকেশন চেয়ে আমরা সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা এটা চাইছি তার কারণ অসমের মানুষ নির্ভুল এনআরসি প্রত্যাশা করেন।
গত বছর জুলাই মাসে অসম সরকার এবং কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টে রি-ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন জানায়। অসম এনআরসির কো অর্ডিনেটরের কাছে জবাব তলব করে শীর্ষ আদালত। তৎকালীন কো অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা হলফনামা পেশ করে জানান, ইতিমধ্যেই ২৭ শতাংশ নামের রি-ভেরিফিকেশন সম্পূর্ণ হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট পত্রপাঠ অসম সরকার ও কেন্দ্রের পিটিশন খারিজ করে দেয়।
২০১৮ সালে এই সংক্রান্ত একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, তারা এনআরসির দ্বিতীয় খসড়ার ১০ শতাংশ নাম রি-ভেরিফিকেশনের নির্দেশ দিতে পারে।
এই প্রসঙ্গও উঠে আসে চন্দ্রমোহন পাটোয়ারির সোমবারের বক্তব্যে। যেখানে তিনি ঘুরিয়ে বেঁধেন তৎকালীন কো অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলাকে। বিধানসভায় তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্ট আগে রি-ভেরিফিকেশনের কথা বলেছিল, কিন্তু প্রাক্তন এনআরসি কো অর্ডিনেটর কোনও কাজ করেননি। আমি কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলছি না কিন্তু হ্যাঁ, আগের এনআরসি কো অর্ডিনেটর ঠিকমতো নিজের দায়িত্ব পালন করেননি।
২০১৩ সাল থেকে অসমে এনআরসি প্রক্রিয়া নিজের হাতে সামলানোর পর ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে প্রতীক হাজেলাকে বদলির নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। সেই সময় হাজেলার সঙ্গে বিজেপি সরকারের সম্পর্ক যথেষ্ট খারাপ। চূড়ান্ত তালিকা থেকে ১৯ লক্ষ মানুষের বাদ যাওয়ার পাশাপাশি নির্দিষ্ট ধর্মাবলম্বী মানুষের বাদ যাওয়ার পরিমাণ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন অসমের বিজেপি নেতারা। অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরাসরি হাজেলার নাম করে আক্রমণ শানিয়েছিলেন। তারপরই তাঁকে বদলির নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
সোমবার লিখিত জবাবে মন্ত্রিসভার সিনিয়র সদস্য পাটোয়ারি রাজ্যে বিদেশি চিহ্নিতকরণের সর্বশেষ তথ্য পেশ করেছেন। নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরে পাটোয়ারির লিখিত জবাব থেকে জানা যাচ্ছে, অসমের ১০০ টি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল সব মিলিয়ে ১,৩৬,১৪৯ জনকে বিদেশি বলে ঘোষণা করেছে। ২০১৩ সালের ১২ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই, ২০২০ পর্যন্ত মাত্র ২২৭ জন বিদেশিকে অন্য দেশে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে অসমের ৬ টি ডিটেনশন সেন্টারে ৪২৫ জন আটকে রয়েছেন।

Comments are closed.