Portable Ventilator – কীভাবে করোনা-যুদ্ধে প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করে? এই যন্ত্রের উপযোগিতা কী?

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আবার সুস্থও হচ্ছেন অনেক মানুষ। তবে করোনাভাইরাসের সব থেকে খারাপ দিক হল, এই ভাইরাস শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে সরাসরি আক্রমণ করে। এক্ষেত্রে রোগীকে প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সাপোর্ট না দিতে পারলে তাঁর জীবন বাঁচানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় চিকিৎসকরা রোগীকে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করে চিকিৎসা করছেন। কিন্তু হাসপাতালে ভেন্টিলেটরের অপ্রতুলতা এবং কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ার ফলে portable ventilator -এর চাহিদা বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন আইআইটি থেকে অন্যান্য গবেষণামূলক সংস্থা তুলনামূলক কম দামে পোর্টেবল ভেন্টিলেটর তৈরি করে তুলে দিচ্ছে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের হাতে। Portable ventilator machine কী এবং করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় তাদের কাজ কী বোঝার আগে দেখে নেওয়া যাক ভেন্টিলেটর কাকে বলে।

 

ভেন্টিলেটর কী?

কোনও কারণে রোগীর ফুসফুস যদি কাজ না করে তাহলে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের কাজটা ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে করানো হয়। এর ফলে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়তে এবং পুরোপুরিভাবে সেরে উঠতে রোগী হাতে অতিরিক্ত কিছুটা সময় পান। নানা ধরনের ভেন্টিলেশন যন্ত্র দিয়ে এই কাজটা করা হয়।

করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর ফুসফুস বিকল হতে পারে। তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগতে থাকেন আক্রান্ত। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন এই ব্যাপারটা টের পায় তখন রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোকে বেশি করে খুলে দেয়, যাতে রোগ প্রতিরোধকারী কণিকাগুলো আরও বেশি হারে ফুসফুসে ঢুকতে পারে। কিন্তু এর ফলে ফুসফুসের ভেতরে জল জমে যায়। রোগীর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা শুরু হয়ে যায়। দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে।

এই সমস্যা দূর করার জন্য ভেন্টিলেটর যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এটি চাপ দিয়ে ফুসফুসে বাতাস ঢোকায় এবং দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ জারি রাখে। ভেন্টিলেটরে থাকা হিউমিডিফায়ার রোগীর দেহের তাপমাত্রার সাথে সঙ্গতি রেখে বাতাস এবং জলীয় বাষ্প ঢোকায়।

ভেন্টিলেটর ব্যবহারের সময় রোগীকে এমন ওষুধ দেন চিকিৎসকরা যাতে তাঁর শ্বাসযন্ত্রের মাংসপেশিতে কোনও উত্তেজনা না থাকে। শ্বাসযন্ত্র শিথিল থাকলে ভেন্টিলেটরের কাজ করতে সুবিধে হয়।

আর যেসব রোগীর দেহে সংক্রমণের মাত্রা কম, তাদের ভেন্টিলেটরে শুধু ফেস মাস্ক কিংবা নাকের মাস্ক দেওয়া হয়। এর মধ্যে দিয়ে বাতাস এবং অক্সিজেনের মিশ্রণ চাপ দিয়ে রোগীর ফুসফুসে ঢোকানো হয়।

 

ভারতে ভেন্টিলেটরের অভাব এবং Portable Ventilator

what is portable ventilator

 

করোনা বিপর্যয়ের মধ্যে দেশের হাসপাতালগুলিতে যথাযথ ভেন্টিলেটরের অভাব চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আরও সঙ্কটের মুখে ফেলেছে। কেন্দ্র থেকে রাজ্য সরকার হাজার হাজার ভেন্টিলেটরের বরাত দিচ্ছেন বটে কিন্তু প্রশ্ন হল সেগুলো পৌঁছবে কবে?

এই অবস্থায় কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে বেঙ্গালুরুর বায়োডিজাইন ইনোভেশন ল্যাব। এখানে RespirAID নামে তুলনামূলকভাবে কম দামে তৈরি হচ্ছে এক ধরনের পোর্টেবল ভেন্টিলেটর যা শ্বাসকষ্টে ভোগা কোভিড-১৯ রোগীকে সেরে উঠতে সাহায্য করে। এই সংস্থার সিইও গৌতম পসুপুলেতি জানান, যখন দেশে ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন ব্যাপক হচ্ছে সেই সময় তাঁদের তৈরি এই পোর্টেবল ভেন্টিলেটর বিশেষ কাজে আসবে। তবে RespirAID যন্ত্রটি যে হাই-এন্ড মেকানিকাল ভেন্টিলেটরের মতো নয় তা স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। তবে এই portable ventilator machine গুলি আপদকালীন ভিত্তিতে ব্যবহার করে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে।

চিকিৎসকরা যে বড় ব্যাগ ভালভ মাস্ক ডিভাইস ব্যবহার করেন তার চেয়ে এই portable ventilator ব্যবহার সহজ। ব্যাটারিচালিত পোর্টেবল ভেন্টিলেটর টানা ২ থেকে ৩ ঘণ্টা কাজ করে যেতে পারে। যখন নর্মাল ভেন্টিলেটরের অভাব, সেই সময় আইসিইউতে টানা দু’দিন কাজ চালিয়ে দিতে পারে RespirAID এর মতো পোর্টেবল ভেন্টিলেটর। এখন বিপুল উৎপাদনের মাধ্যমে সারা দেশে তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান বায়োডিজাইন ল্যাবের সিইও।

আইআইটি রুরকি (IIT-R) এর গবেষকরাও এই অতিমারির সময় দেশের মানুষকে বাঁচাতে তৈরি করে ফেলেছেন এক ধরনের পোর্টেবল ভেন্টিলেটর। মাত্র ৩০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে এই portable ventilator যা, সাধারণ ভেন্টিলেটরের দামের পাঁচ ভাগের এক ভাগ।

এই মুহূর্তে দেশের হাতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার ভেন্টিলেটর রয়েছে, যা করোনাভাইরাস অতিমারির আপদকালে বিপদ সামলাতে অপারগ। তাই এই পোর্টেবল ভেন্টিলেটরের সাহায্যে বহু রোগীকে বাঁচানো যাবে বলে জানাচ্ছেন আইআইটি রুরকির গবেষকরা। আইআইটি রুরকির অধ্যাপক অরূপকুমার দাস জানান, ছোট থেকে বড় যে কোনও বয়সের মানুষের কাজে লাগবে তাঁদের এই মডেল।

কিছুদিন আগে তাঁদের এই সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশনে খুশি হয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি বা বণিকসভা CII এর প্রতিনিধিরা। সেই অনুযায়ী উৎপাদনও শুরু হয়েছে। গবেষকরা এখন রিমোট কন্ট্রোলে কীভাবে এই portable ventilator machine চালানো যায় তার পরীক্ষা চালাচ্ছেন। এতে বাড়িতে বসেও চিকিৎসকরা ডেটা অ্যাকসেস করতে পারবেন।

একইরকমভাবে আইআইটি কানপুর (IIT Kanpur) এই রকম ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরের উৎপাদন শুরু করেছে বলে জানিয়েছে। যার প্রতি ভেন্টিলটরের দাম পড়বে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এই ভেন্টিলেটর তৈরির সমস্ত উপাদান ভারত থেকেই জোগাড় করা হয়েছে বলে জানান গবেষকরা।

অতিমারি করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, হাসপাতালে ভেন্টিলেটরের অভাব তীব্র হচ্ছে, এই সময়ে portable ventilator ক্রমেই চিকিৎসকদের আস্থার জায়গা হয়ে উঠছে।

Comments are closed.