রঘুরাম রাজন: স্বাধীনতা উত্তর ভারতবর্ষে সবচেয়ে কঠিন আর্থিক জরুরি অবস্থা আসতে চলেছে! গরিবের পাশে দাঁড়াতে হবে

স্বাধীন ভারতে সবচেয়ে বড় বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে দেশের অর্থনীতি। করোনাভাইরাসের জেরে উদ্ভুত পরিস্থিতি আর প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে সামলানো যাবে না। বিশেষজ্ঞদের চাই, যিনি যে কোনও রাজনৈতিক মতাদর্শের সমর্থক হতে পারেন, দেখতে হবে বিপর্যয় সামাল দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে কিনা। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি সামলাতে দাওয়াই রঘুরাম রাজনের।
করোনা-থাবায় নাস্তানাবুদ ভারত সহ গোটা বিশ্ব। এক অভূতপূর্ব সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে মানব সভ্যতা। মন্দা ঘোষণা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের চাকরি যাওয়া নিশ্চিত। ভারতে এই ধাক্কার প্রভাব কী? উত্তর দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গভর্নর তথা শিকাগো বুথ স্কুলের অধ্যাপক রঘুরাম রাজন। বললেন, স্বাধীনতার পর আর এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি ভারতের অর্থনীতি। ২০০৮-০৯ সালের বিশ্ব মন্দার সময়ের সঙ্গেও বর্তমানের তুলনা করেছেন এই অর্থনীতিবিদ। বাতলে দিয়েছেন সঙ্কট থেকে বেরোনোর উপায়।
সম্প্রতি LinkedIn-এ একটি ব্লগ লেখেন রঘুরাম রাজন। সেখানেই রাজনের করোনা এবং পরবর্তী পরিস্থিতির অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা উঠে আসে। করোনাভাইরাস প্যানডেমিক যে স্বাধীনতা উত্তর ভারতের অর্থনীতিতে সবচেয়ে কঠিন জরুরি অবস্থা, তা সাফ জানিয়েছেন তিনি।
এই সময় সরকারকে কী করতে হবে, তাও লিখেছেন আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর। এই মুহূর্তে গরিব ও প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাঁড়ানোকে অগ্রাধিকার হিসেবে দেখতে হবে সরকারকে। অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দিতে হবে, লিখছেন বুথ স্কুলের অধ্যাপক।

 

২০০৮-০৯ সালে বিশ্বমন্দার থেকেও কি আজকের অবস্থা খারাপ? 

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন বলছেন, ২০০৮-০৯ সালে বিশ্ব মন্দার সঙ্গে বর্তমান অবস্থার কয়েকটি বুনিয়াদি পার্থক্য রয়েছে।
২০০৮-০৯ সালের বিশ্ব মন্দার সময় বাজারে চাহিদা সম্পূর্ণ উবে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদে কর্মীরা সেই সময়ও কাজে যাচ্ছিলেন, বলছেন রাজন। বিগত বছরগুলোতে ভালো আর্থিক বৃদ্ধির জেরে অর্থনৈতিক ভাবে সেই সময় ভারত ছিল অপেক্ষাকৃত মজবুত অবস্থায়। সরকারের কোষাগারের হালও তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। বুথ স্কুলের অধ্যাপক বলছেন, এবার এর একটিও ঠিক নেই।
তাহলে উপায়?
রঘুরাম রাজন অবশ্য বলছেন অন্য কথা। তিনি মুদ্রার উল্টোপিঠ দেখতে পাচ্ছেন। যদি সঠিক পরিকল্পনা করে লক্ষ্য স্থির রেখে কাজ করা যায়, তাহলে ভারতের সেই শক্তি আছে, যে তারা করোনাভাইরাসের হামলা থেকে নিজেরাই শুধু বাঁচতে সক্ষম হবে না, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি মজবুত ভিত্তিও তৈরি করে ফেলবে।

 

কীভাবে সম্ভব? 

প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে এই কর্মযজ্ঞ চালালে হবে না। সাফ লিখেছেন রঘুরাম রাজন। একেই পিএমও-তে প্রবল কাজের চাপ। বাড়তি চাপ দেওয়া অযৌক্তিক।

 

তাহলে কারা? 

রাজন বলছেন, বর্তমান সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছু করা দরকার। সরকারের উচিত সেই মানুষদের ডেকে আনা, যাঁরা আগেই যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। যাঁদের এই ধরনের কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে। ভারতে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা সরকারকে এই বিপদ থেকে বাঁচার পথ বাছতে সাহায্য করতে পারে। রাজনীতির বাধ্যবাধকতা টপকে সরকার বিরোধীদেরও সহায়তা নিতে পারে। যাঁরা ২০০৮-০৯ সালে বিশ্বমন্দার হাত থেকে দেশকে বের করে আনার উপায় বেছেছিলেন, তাঁদের এই মুহূর্তে দরকার, এমনই লিখেছেন রঘুরাম রাজন।
প্রাক্তন আরবিআই গভর্নর ব্লগে লিখেছেন, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কেটে বেরোতে আমাদের প্রাথমিক কাজ হল ব্যাপক টেস্টের ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিংয়ের নিয়মাবলী কঠোরভাবে বলবৎ করার কথা লিখেছেন রঘুরাম রাজন। ২১ দিনের লকডাউনকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে লিখছেন, এতে আমাদের হাতে আরও একটু বাড়তি সময় এসে গেল।
রাজন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন লকডাউন চালিয়ে যেতে পারব না। কিন্তু ভাবতে হবে, কীভাবে সংক্রমণকে ছড়িয়ে পড়া আটকে রেখেও আর্থিক গতিবিধি শুরু করা যায়। পাশাপাশি, রাজনের পরামর্শ, লকডাউনের পরও ভাইরাসকে কাবু করা না গেলে কী করা হবে তা নিয়েও একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি রাখা হোক।

Comments are closed.