কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র শেখাওয়াতের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা প্রত্যাহার গেহলট সরকারের, কারণ কী?

অপার সম্ভাবনার কারখানার নাম রাজনীতি। রাজস্থানের টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই খবর পাওয়া গেল, বিজেপি নেতা তথা মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা বা সিডিশন চার্জ প্রত্যাহার করা হয়েছে। গেহলট সরকার ফেলতে সচিন পাইলট শিবিরের সঙ্গে টাকা পয়সার রফা করতে নেমেছিলেন রাজস্থানের গেরুয়া রাজনীতির দাপুটে নেতা শেখাওয়াত। তিনটি অডিও টেপ জারি করে অভিযোগ করেছিল কংগ্রেস। দায়ের হয়েছিল দেশদ্রোহিতার মামলা।

কংগ্রেসের দাবি, ভাইরাল হওয়া অডিও টেপগুলোয় রয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক ভাওয়রলাল শর্মা ও বিশ্ববেন্দ্র সিংহ। এই দুজনের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে বিজেপির মন্ত্রী শেখাওয়াত এবং রাজস্থানের আর এক বিজেপি নেতা সঞ্জয় জৈন। কথোকথনে রাজস্থানে কংগ্রেস সরকারকে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ফাইনাল হয় বলে দাবি কংগ্রেসের।

ভাইরাল হওয়া একটি টেপে শোনা যায়, কংগ্রেসের ভাওয়রলাল শর্মা বিজেপির সঞ্জয় জৈনকে মারওয়াড়ি ভাষায় বলছেন, আর কিছুদিনের মধ্যেই তারা ৩০ বিধায়কের সমর্থন জোগাড় করে ফেলবেন। সঞ্জয় জৈন উত্তর দেন, তাহলে তো সহজেই গেহলট সরকার পড়ে যাবে।

কংগ্রেসের দাবি, ওই কথোপকথনে শেখাওয়াতকে বলতে শোনা গিয়েছে, যতদিন বিধায়কদের পুরো সমর্থন জোগাড় না হচ্ছে, সচিন শিবিরের বিধায়করা যেন হোটেল না ছাড়েন।

অন্য একটি টেপে কংগ্রেসের ভাওয়রলাল শর্মাকে বলতে শোনা যায়, দিল্লিতে থাকা পাইলট শিবিরের বিধায়করা প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন।

এই টেপগুলো ভাইরাল হওয়ার পর ১৭ জুলাই রাজস্থান পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ বা SOG কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শেখাওয়াত, বিজেপি নেতা সঞ্জয় জৈন ও কংগ্রেস বিধায়ক ভাওয়রলাল শর্মার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা রুজু করে।

মঙ্গলবার রাজস্থান পুলিশের SOG জানায়, ৩ অভিযুক্তের উপর থেকেই সিডিশন কেস প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং মামলাটি অ্যান্টি করাপশন ব্যুরোর কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্য সরকার ভাঙতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী টাকার থলে নিয়ে নেমে পড়েছেন। বিজেপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করে আসছে কংগ্রেস। রাজস্থানে এই অডিও টেপ ভাইরাল হওয়ার পর তাকে অভিযোগের পক্ষে হাতেগরম প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়িয়েছেন নেতারা। এই অবস্থায় আচমকা মামলা হালকা করার কারণ কী?

রাজস্থানের ঘরোয়া রাজনীতির ওয়াকিবহালরা বলছেন, কারণ একটাই। অশোক গেহলটের সঙ্গে সচিন পাইলটের দ্বন্দ্বে ইতি পড়ার সময় এসে গিয়েছে। কেন বলছেন এ কথা? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করছেন সম্প্রতি গেহলটের মন্তব্যকে। যেখানে কংগ্রেস রাজনীতির পোক্ত খেলোয়াড় অশোক গেহলট বাইট দিয়েছেন, হাই কমান্ড নির্দেশ দিলে সচিন শিবিরের বিধায়কদের ক্ষমা করতে দেরি করবেন না।

তবে সবকিছু কি পরিকল্পনামাফিক চলে? মরু রাজ্যে আপাত উত্তেজনা প্রশমনের মাঝেই চিন্তা বাড়িয়েছে অন্য এক ইস্যু। দেশদ্রোহিতার মামলাকে চ্যালেঞ্জ করে জুলাই মাসে রাজস্থান হাইকোর্ট গিয়েছিলেন কংগ্রেসের ভাওয়রলাল শর্মা। আর্জি জানিয়েছিলেন, হয় এফআইআর খারিজ করুক আদালত কিংবা মামলার তদন্তভার দেওয়া হোক এনআইএর হাতে। এবার গেহলট-পাইলট সুবাতাসের আবহে পাল্টা চাপে পড়ে গিয়েছেন শর্মা। কারণ আদালত তাঁর দাবি মেনে মামলা এনআইএকে হস্তান্তর করলে রাজ্যের দায় থাকল না। গোটাটাই নিয়ন্ত্রিত হবে দিল্লি থেকে। বিজেপি রাজস্থান কংগ্রেসকে ভাঙার হাতিয়ার হিসেবেও যা ব্যবহার করতে পারে। সেক্ষেত্রে বিপদ বাড়বে শর্মার।

Comments are closed.