হাথরস: ‘এই জাতীয় মহিলাদের দেহ সবসময় খেতেই পাবেন,’ মন্তব্য ৪৪ টি মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতার

হাথরসের গণধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ যখন সোচ্চার, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছে, তখন উত্তর প্রদেশের  বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ ধর্ষণ আটকাতে মেয়েদের সুশিক্ষা ও সংস্কারের পাঠ দিতে বলেছেন বাবা-মায়েদের। এবার বিজেপির আর এক নেতা হাথরসের দলিত তরুণীকে নিয়ে বেলাগাম মন্তব্য করলেন। উত্তর প্রদেশের বারাবঙ্কির বিজেপি নেতা রঞ্জিত বাহাদুর শ্রীবাস্তবের দাবি, হাথরসের দলিত তরুণীকে পৈশাচিকভাবে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে উচ্চবর্ণের যে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা আদতে ‘নির্দোষ’। নির্যাতিতাই ছিলেন ‘স্বেচ্ছাচারী’।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওয় ওই বিজেপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, নিশ্চয়ই হাথরসের তরুণীই অভিযুক্তকে মাঠে আসতে বলেছিলেন। দলিত তরুণীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপি নেতার দাবি, অভিযুক্তের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল ওই তরুণীর। ঘটনার দিন, ১৪ সেপ্টেম্বর  ওই তরুণীই ফোন করে যুবককে বাজরা-খেতে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করেন রঞ্জিত বাহাদুর। তিনি যোগ করেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সৌজন্যে এদের এই অ্যাফেয়ারের কথা এখন সবাই জেনে গিয়েছে। মেয়েটি আসলে বাজরা-খেতে ধরা পড়ে যায়।

এখানেই না থেমে, হাথরসের মৃত তরুণীকে নিয়ে বারাবঙ্কির বিজেপি নেতার আরও মন্তব্য, ‘এই জাতীয় মহিলাদের’ সবসময় নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এদের মাত্র কয়েকটি জায়গাতেই আপনি মৃত অবস্থায় দেখতে পাবেন। আখ-খেত, ভুট্টা-খেত, বাজরা-খেত, ঝোপঝাড়, জঙ্গল এবং নয়ানজুলিতে। তবে এইসব মৃতদেহ কেন ধান-খেত বা গম-খেতে পড়ে থাকে না, প্রশ্ন করেন বিজেপি নেতা।

রঞ্জিত বাহাদুর শ্রীবাস্তবের মতে, হাথরসের তরুণীর মৃত্যু আদতে ‘অনারকিলিং’। তাঁর বক্তব্য, এই রকম অপরাধে আপনি একজনও সাক্ষীকে খুঁজে পাবেন না। অপরাধস্থল থেকে নির্যাতিতাকে টেনে আনা হচ্ছে, এমনটাও দেখবেন না। অভিযুক্তদের হয়ে বিজেপি নেতা বলেন, সিবিআই চার্জশিট না দেওয়া পর্যন্ত ধৃতদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তাঁর কথায়, ‘আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, এই যুবকেরা নির্দোষ। এদের সময়ে না ছেড়ে দিলে, মানসিক হেনস্থার শিকার হবে। তাদের হারানো যৌবন কে ফেরাবে? সরকার কি তাদের ক্ষতিপূরণ দেবে?’

শ্রীবাস্তবের এই ধরনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রধান রেখা শর্মা বলেন, উনি কোনও দলের নেতা হওয়ার যোগ্য নন। প্রাচীনপন্থী, অসুস্থ মানসিকতার লোক।

বিতর্কিত ও সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন যোগী রাজ্যের এই বিজেপি নেতা। সীতাপুর, লখনউ-সহ উত্তর প্রদেশের একাধিক জেলায় তাঁর বিরুদ্ধে অন্তত ৪৪টি মামলা ঝুলে রয়েছে।

 

Comments are closed.